8866

চট্টগ্রামের মেয়র নিজ হাতে তালিকা করে খাদ্যদ্রব্য দিচ্ছেন মধ্যবিত্তদের

নিউজ ডেস্ক: করোনার কালো থাবায় যখন লণ্ডভন্ড অর্থনীতি ও জীবন জীবিকা। জীবন ভয়ে ঘরবন্দি আমলা থেকে কামলা। রাজনীতিক দায়িত্বশীল থেকে কর্মী। মাঠে কেবল প্রশাসন আর কয়েকজন অতি মানবীয় গুণ সম্পন্ন জনপ্রতিনিধি। জীবন ঝুঁকি নিয়ে রাতদিন শুধু মাঠে থেকেই করোনা যুদ্ধে চট্টগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েই থামেননি তিনি।

সরকারি ত্রাণ সহায়তার পাশাপাশি ব্যক্তিগত তহবিল থেকে খাদ্য সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। শুধু তাই নয়, দিনের যাবতীয় দাপ্তরিক কাজ শেষ করে তিনি রাত হলে নিজেই খাতা কলম নিয়ে বসে পরেন নাম ঠিকানা লিখতে। তা কোনও হিসাবের খাতা নয়! লোক লজ্জায় লকডাউনে বন্দি হয়ে পড়া মধ্যবিত্ত পরিবারের খাদ্য সহায়তার আবেদনই টুকে নেন তিনি। এভাবেই দিনরাত মানবসেবায় নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন।

ads

নিজ তহবিল থেকে দেওয়া এসব খাদ্য সহায়তা দিনে ১৫০ থেকে ২০০ পরিবার পাচ্ছেন নীরবেই। মেয়রের কঠোর নির্দেশ মেনে গোপনে স্বেচ্ছাসেবকরা পৌঁছে দিচ্ছেন মেয়রের খাদ্য সহায়তা নগরীর মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর কাছে, যারা মেয়রের মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে জানান খাদ্য সহায়তার আবেদন।

জানতে চাইলে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, ‘করোনার কারণে অসহায় হয়ে পড়া সমাজের মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর পক্ষে দাঁড়িয়ে থেকে বা ঘুরে ঘুরে ত্রাণ সংগ্রহ করা অসম্ভব। এমন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগে এই দুঃসময়ে মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য উপহারের ব্যবস্থা করেছি।’

ads

মেয়র আরও বলেন, ‘কিছু দরিদ্র মানুষ আছেন, যারা নিজে এসে ত্রাণ চেয়ে নিতে পারেন। কিন্তু মধ্যবিত্ত অনেক মানুষ আছেন যারা ত্রাণ চাইতেও পারেন না আবার প্রকাশ্যে নিতে আসতেও পারেন না। এসব পরিবারগুলোর কথা চিন্তা করেই এই সেবা চালু করেছি। আমার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে সামর্থ্য অনুযায়ী উপহার হিসেবে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দেয়া হচ্ছে প্রতি ওয়ার্ডে। যা আমি নিজেই তদারকি করছি।’

নগরীর ৪১ ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকার মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যরা যারা লোকলজ্জার ভয়ে ত্রাণ চাইতে পারেন না বা প্রকাশ্যে নিতেও পারেন না, তাদের মোবাইল নাম্বার ও বিস্তারিত ঠিকানা জানিয়ে মেয়রকে করলেই মেয়রের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে উপহার হিসেবে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেয়ার ঘোষণা দেন। ঘোষণার পর থেকে মেয়রের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে সহায়তা চেয়ে আসা ম্যাসেজের ঠিকানা ও মোবাইল নম্বরের মাধ্যমে মেয়র নাছির নিজেই করছেন তালিকা। মেয়রের তৈরি তালিকা অনুযায়ী স্বেচ্ছাসেবকরা রোডম্যাপ করে রাতের আঁধারে পৌঁছে দিচ্ছেন উপহার সামগ্রী। এ পর্যন্ত ৫ হাজারেরও বেশি পরিবারকে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন।

উপহার সামগ্রী পৌঁছে দেয়ার দায়িত্বে থাকা সেচ্ছাসেবকরা জানান, প্রতিদিন এসএমএস গুলো রাতে নিজ হাতে মেয়র তালিকা তৈরি করেন। সে অনুয়াযী প্রতিদিন সকালে রোডম্যাপ করে নগরীর ৪১ ওয়ার্ড পাঠিয়ে দেন স্বেচ্ছাসেবকরা। পরে তারা রাতে তা বিলি করেন। কোনদিন ১৫০, কোনদিন ১২০, আবার কখনো কখনো ২০০ পরিবারে মেয়রের উপহার সামগ্রী পৌঁছে দেয়া হয়। প্রতিদিন গড়ে ১৫০টি পরিবারেরর কাছে উপহার যাচ্ছে। এ পর্যন্ত নগরীর ৫ হাজারের বেশি পরিবারকে উপহার দেয়া হয়েছে।

এ কাজে জড়িত আনিসুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে নগরীতে মেয়রের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার ও মোবাইল নম্বরে এসএমএসরে মাধ্যমে যারা উপহার চাচ্ছেন তাদের কাছে নিয়মিত উপহার পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। মেয়র নিজেই প্রতিদিন রাতে বাসায় ডেকে নিজ হাতে তালিকা তৈরি করেন। মেয়রের তৈরি করা তালিকানুযায়ী রাতেই পৌঁছে দেয়া হচ্ছে উপহার সামগ্রী।’

তিনি বলেন, মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো সম্মানের ভয়ে তাদের সমস্যার বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু না বলায় গোপনে তাদের কাছে এসব পৌঁছে দেয়ার নির্দেশ রয়েছে মেয়রের।

ad

পাঠকের মতামত