47733

সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংলাপের বিকল্প কিছু হতে পারেনা: ড. সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ

নিউজ ডেস্ক: সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংলাপের বিকল্প কিছু হতে পারেনা বলে মন্তব্য করেছেন লিবারেল ইসলামিক জোট ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান শাহজাদা ড. সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারী।

তিনি বলেন, কেউ যদি শর্ত দিয়ে সংলাপে বসতে চায় তাহলে সেটা ঠিক হবেনা। তাকে শর্ত ছাড়া সংলাপে বসতে হবে। সবাই মিলে ঠিক করতে হবে কি করলে এই সমস্যার সমাধাণ করা যায়। সুস্থ ধারার রাজনীতি করতে চাইলে আমাদের সুস্থ চিন্তা করতে হবে। আগামী নির্বাচনের সংকট দুর করতে আমরা সব রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে বসে কথা বলার জন্য প্রস্তুত আছি।

ads

মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘লিবারেল ইসলামিক জোটের উদ্যোগে বর্তমান রাজনৈতিক সহিংসতা ও সংকট নিরসনে করণীয় শীর্ষক’ গোলটেবিল আলোচনা সভায় সভাপতিত্বের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপি’র চেয়ারম্যান শাহজাদা ড. সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারী বলেন, বর্তমান বাংলাদেশ একটা বিশেষ সময় পার করছে, নির্বাচনকে সামনে রেখে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংলাপের বিকল্প কিছু হতে পারেনা। আর এভাবে যদি সহিংসতা চলতে থাকে তাহলে পৃথিবীতে অরাজগতা দিন দিন বারতে থাকবে। তাই আমাদের সমস্যাগুলো আমাদেরই সমাধান করতে হবে। এখানে বিদেশী রাষ্ট্রগুলোর উদ্বেগ থাকতে পারে কিন্তু সমস্যা আমাদেরই করতে হবে।

ads

ড. সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘বিরোধী দলগুলো যারা অবরোধ করছে তাদের কারণে বাজার সিন্ডিকেটরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাহলে এই অবরোধ কি জনগণের পক্ষে গেল? তাই মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নাগালের মধ্যে আনতে হলে এই ধরনের কর্মসূচি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। জনগণের পক্ষে থেকে কাজ করতে হবে।’

ড. সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ বলেন, তবে ২৮ তারিখের ঘটনায় বিনা তদন্তে সিনিয়র নেতাদের গ্রেফতার করা ঠিক হয়নি। রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে নিরপরাধ রাজনৈতিক ব্যক্তি যারা কারাগারে আছেন তাদের মুক্তি দিতে হবে। এবং সরকারকেই একটি সংলাপের ব্যবস্থা করতে হবে।

ছোট দলগুলো যেন অংশগ্রহণ মূলক নির্বাচনে অংশ নিতে পারে সে জন্য নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা শেষ হবার আগে কিছু নির্বাচনী সংস্কার করার আহবান জানিয়েছেন শিক্ষাবিদ নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ। তিনি বলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা আটক অবস্থায় আছে। তাদের সাথে সংলাপ করতে হলে ভার্চুয়ালি করতে হবে। যা সম্ভব নয় আক্ষরিক অর্থে। পাশাপাশি আগামী ২৯ জানুয়ারির মধ্যে সকল নির্বাচনী কার্যক্রম শেষ করতে হবে বলে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছেন। তবে তাদের ক্ষমতা শেষ হবার আগে কিছু সংস্কার করতে হবে। প্রতি পাচ বছর পরপর আমাদের যে নির্বাচন হয় তার সংস্কার করতে হবে। যার মাধ্যেমে ছোট ছোট দলগুলো অংশগ্রহণ মূলক নির্বাচনে আসতে পারবে।

বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান ও লিবারেল ইসলামিক জোটের নির্বাহী চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরীর বলেন, সহিংসতা এবং বিভক্তি দেশের মানুষের মধ্যে একধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। তাই আমরা ইসলামি দলগুলো একটি জোট তৈরি করতে চেয়েছি। যাতে করে দেশের মানুষের সংকটগুলো আলোচনার মাধ্যমে শেষ করা যায়।

তিনি বলেন, পাশাপাশি আগামী নির্বাচনের পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা নির্বাচনে যাব। তবে ১৪ এবং ১৮ নির্বাচ প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। আমরা এই প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন দেখতে চাইনা। পাশাপাশি বর্তমান প্রধানমন্ত্রীই কিন্তু নির্বাচন ব্যবস্থা ঠিক করার জন্য আন্দোলন করেছিল। কিন্তু ১৫ বছরে ক্ষমতায় থেকে ভোট প্রয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেনি।

মিছবাহুর রহমান চৌধুরীর বলেন, আমরা তত্বাবধায়ক সরকার বিশ্বাস করি না। তবে নির্বাচন কমিশনকে পূর্ণ ক্ষমতাদিয়ে সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন হওয়াতে বিশ্বাস করি। তবে নির্বাচন কমিশন হতে হবে মেরুদন্ড ওয়ালা লোক। এই মেরুদন্ড ওয়ালা লোক সার্চ কমিটির মাধ্যমে খুজে বের করার দরকার ছিল, কিন্তু তা হয়নি।

তিনি বলেন, ‘উন্নত দেশে বড় দল গুলো ছোট দলগুলোর কথা শুনে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়। তবে আমাদের দেশে জোট করে বড় দলগুলো দানব হয়ে উঠে, তারা তখন কারো কথা শুনতে চায় না। একক ক্ষমতা কারো হাতে থাকলে সে ফেসিস্ট হয়ে উঠে। তাই আমরা বলেছিল ক্ষমতা সমান ভাগে ভাগ করার কথা বলেছিলাম, প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি রাষ্ট্রপতির ক্ষমতারও ভারসাম্য থাকতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, বিএনপির সমর্থন অনেক, তাদের কথায় অনেক লোক রাস্তায় নেমে আসে। কিন্তু কর্মসূচি ভুল দেবার ফলে তারা আন্দোলনে এই লোক সমাগমকে কাজে লাগাতে পারে নাই। বিএনপির পেছনে একটা বড় কালো হাত আছে, তারা তাদের সামনে এগোতে দিতে চাচ্ছেনা।

নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য লিবারেল ইসলামী জোটের ৩০০ প্রার্থী প্রস্তুত আছে বলে জানিয়েছেন লিবারেল ইসলামিক জোটের নির্বাহী চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরীর। তিনি বলেন, ‘তবে খালি মাঠে আমরা গোল দিতে চাইনা। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে আমাদের সমস্যা নেই। কিন্তু নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে হবে। আমরা কেয়ারটেকার পদ্ধতি সমর্থন করিনা। কিন্তু একক ভাবে ক্ষমতায় থাকাও বিশ্বাস করিনা। নৌকার নির্বাচনী মার্কা পেলেই পাশ, এই মনভাবে থেকে বেরহয়ে আসতে হবে।’

‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দায়িত্ব হল সবাইকে ঢেকে এক করে বুঝিয়ে বলা। কারণ তিনিই চাইলে আন্তরিকতার সঙ্গে সবাইকে ভাল করে বুঝাতে পারবেন বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্য জোটের এই চেয়ারম্যান।

অতিদ্রুত বিএনপির সিনিয়র নেতাদের মুক্তি দিয়ে, সংলাপের ব্যবস্থা করার আহবান জানিয়ে মিছবাহুর রহমান চৌধুরীর বলেন, ‘তবে ২৮ তারিখের ঘটনায় বিনা তদন্তে সিনিয়র নেতাদের গ্রেফতার করা ঠিক হয়নি। কিছু অতি উৎসাহি পুলিশ এগুলো করেছে, আর তাদের কারণেই সরকারকে বিপদে পড়তে হয়। তাই অতিদ্রুত বিএনপির সিনিয়র নেতাদের মুক্তি দিয়ে, সংলাপের ব্যবস্থা করতে হবে।’

বর্তমান সংকট থেকে মুক্তি পেতে চাইলে সকলে মিলে বসে কাজ করতে হবে বলে জানিয়েছেন কৃষক শ্রমিক পার্টির চেয়ারম্যান ফারাহনাজ হক চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘সকল রাজনৈতিক দল গুলোকে আলোচনা করতে হবে। আর আলোচনা প্রতি সপ্তাহেই হতে হবে। বর্তমানে ঘর থেকে বেরহতে গেলে সবাই চিন্তা করে সে ঠিকমত ঘরে ফিরে আসতে পারবে কিনা। তাই এই আতঙ্কে দেশের কোন মানুষ থাকতে চায় না। তাই আগামী নির্বাচন যাতে সুন্দর হয় সে দিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।’

দেশে দুইটি রাজনৈতিক দলের একটি আপদ অন্যটি বিপদ বলে মন্তব্য করে বাংলাদেশ জনদল (বিজেডি) চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান জয় চৌধুরী বলেন, প্রকৃত অর্থে আমাদের খুজে বের করতে হবে এই সংকট গুলো কিভাবে সৃষ্টি হয়েছিল। আমরা মনেকরি একটি দেশে দুইটি রাজনৈতিক দলের একটি আপদ অন্যটি বিপদ। তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাস্তবায়ন করতে চাইলে যে লক্ষ্য থাকার কথা ছিল তা ৫২ বছরেও এদেশে হয়ে উঠেনি। আমরা লগিবৈঠা থেকে জ্বালাও পোড়াও সবই দেখেছি। তাই বলতে চাই, আসুন আমরা সকলে মিলে এই আপদ বিপদকে নিরসন করি। যার মাধ্যমে আমরা একটি সুন্দর দেশ বাস্তবায়ন করতে পারব।

গোলটেবিল আলোচনা সভার সভাপতিত্ব করেন লিবারেল ইসলামিক জোট ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান শাহজাদা ড. সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভা-ারী।

আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আশিক্বীনে আউলিয়া ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান আলম নুরী আল সুরেশ্বরী, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ ভাসানী) চেয়ারম্যান হাসরত খান ভাসানী, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক আকন্দ, মাওলানা রুহুল আমিন ভুঁইয়া, মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ সরকার, বাংলাদেশ জনদল (বিজেডি)’র ভাইস চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান, কৃষক শ্রমিক পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সেলিম চৌধুরী, বিজেডি মহাসচিব সেলিম, আশিক্বীনে আউলিয়া ঐক্য পরিষদের মহাসচিব মাওলানা হানিফ নুরী, আহমদ, অ্যাড. শাহ আলম অভি, মুফতি বোরহান উদ্দীন আজিজী, শায়খ আজমাইন আসরার, বিএসপি যুগ্ম মহাসচিব মোঃ আসলাম হোসাইন প্রমূখ।

ad

পাঠকের মতামত