মার্কিন নির্বাচনে লড়ছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ছয় প্রার্থী
নিউজ ডেস্ক: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেটের নির্বাচনে এবারও লড়ছেন ছয়জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী, যারা ইতিমধ্যে নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন টানা চতুর্থ মেয়াদে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন, আবার কিছু প্রার্থী নতুন করে ভোটযুদ্ধে অংশ নিচ্ছেন। এবারের নির্বাচনে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সন্তানরা একযোগে মার্কিন রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করার লক্ষ্যে লড়াই করছেন।
শেখ এম রহমান: জর্জিয়ার ডিস্ট্রিক্ট-৫ থেকে সিনেটর পদে
এবারের নির্বাচনে টানা চতুর্থ মেয়াদে সিনেটর হওয়ার দৌঁড়ে আছেন শেখ এম রহমান, যিনি বাংলাদেশে কিশোরগঞ্জের বাসিন্দা। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া স্টেটের ডিস্ট্রিক্ট-৫ থেকে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসেবে আবারও সিনেটর পদে নির্বাচন করছেন। শেখ এম রহমান ২০১৮ সালে প্রথম নির্বাচিত হন এবং তার নেতৃত্বে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নীতি গ্রহণের সুযোগ হয়েছে। তিনি মানবাধিকার, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়ন সাধনে সচেষ্ট রয়েছেন।
নাবিলা ইসলাম: জর্জিয়ার ডিস্ট্রিক্ট-৭ থেকে পুনরায় নির্বাচন
নওগাঁর নাবিলা ইসলামও আবারো নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। তিনি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসেবে জর্জিয়া স্টেটের ডিস্ট্রিক্ট-৭ থেকে দ্বিতীয়বার সিনেটর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নাবিলা ইসলাম তার নির্বাচনী এলাকার নাগরিকদের জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে কাজ করে যাচ্ছেন। তার প্রচারণায় বৈচিত্র্যময় সম্প্রদায়ের জন্য বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে, যেহেতু তিনি নিজে একটি বহুজাতিক পরিবার থেকে উঠে এসেছেন।
মাসুদুর রহমান: কানেকটিকাটের ডিস্ট্রিক্ট-৪ থেকে সিনেটর পদে প্রার্থী
কানেকটিকাটের চাঁদপুর জেলার সন্তান মাসুদুর রহমানও সিনেটর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী হিসেবে কানেকটিকাট স্টেটের ডিস্ট্রিক্ট-৪ থেকে লড়ছেন। মাসুদুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে জনগণের সেবা করে আসছেন এবং বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পে তার অবদান রয়েছে। তার নির্বাচনী প্রচারণায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ক নানা গুরুত্বপূর্ণ দিক উঠে আসছে।
সাদ্দাম সেলিম: ভার্জিনিয়ার সিনেট ডিস্ট্রিক্ট-৩৭ থেকে প্রার্থী
ভার্জিনিয়ায় নোয়াখালীর সন্তান সাদ্দাম সেলিম সিনেট ডিস্ট্রিক্ট-৩৭ থেকে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। সাদ্দাম সেলিম তার নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প হাতে নিয়েছেন, বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবা, পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং স্থানীয় অর্থনীতি শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে তিনি জোর দিয়েছেন।
আবুল বি খান: নিউ হ্যাম্পশায়ারে রিপাবলিকান প্রার্থী
নিউ হ্যাম্পশায়ার স্টেট হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভ পদে লড়ছেন পিরোজপুরের সন্তান আবুল বি খান। তিনি ষষ্ঠ মেয়াদে রকিংহ্যাম ডিস্ট্রিক্ট-২০ থেকে রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। আবুল বি খান তার পূর্ববর্তী মেয়াদগুলোতে বিভিন্ন সামাজিক নীতির বাস্তবায়ন করেছেন এবং এবারও স্থানীয় জনগণের জন্য আরও বেশ কিছু প্রকল্প প্রস্তাব করেছেন, বিশেষ করে কর সুবিধা এবং ব্যবসায়িক সুবিধা বাড়ানোর ক্ষেত্রে তিনি কাজ করছেন।
নুরুন নবী: নিউ জার্সির প্লেইন্স বরো টাউনশিপের কাউন্সিলম্যান
নিউ জার্সির প্লেইন্স বরো টাউনশিপ থেকে নির্বাচিত কাউন্সিলম্যান ড. নুরুন নবী দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে এই পদে রয়েছেন। তিনি ডেমোক্র্যাট দলের একজন শক্তিশালী প্রার্থী এবং এবারও নির্বাচনে জয়ের আশা করছেন। নুরুন নবী তার দায়িত্ব পালনের সময় এলাকার উন্নয়নে অনেক কাজ করেছেন এবং নাগরিকদের জন্য নিরাপত্তা, শিক্ষার মান এবং স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছেন।
অন্যান্য স্টেটের বাংলাদেশি-আমেরিকান প্রার্থীরা
এছাড়াও, পেনসিলভেনিয়া, মিশিগান, নিউ জার্সি এবং অন্যান্য স্টেটে আরও কিছু বাংলাদেশি-আমেরিকান প্রার্থী বিভিন্ন কাউন্টি এবং স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে রয়েছে কাউন্টি কমিশনার, মেয়র এবং অন্যান্য প্রশাসনিক পদে প্রার্থী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নাগরিকরা। এসব প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনী এলাকায় উন্নয়নমূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন এবং বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক বিষয়েও তাদের ভূমিকা রাখছেন।
সাফল্যের সম্ভাবনা
মার্কিন নির্বাচনে বাংলাদেশি-আমেরিকানদের অংশগ্রহণ ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। বিভিন্ন স্টেট ও স্থানীয় পর্যায়ে তারা এখন আর নিছক কমিউনিটি প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে না, বরং শক্তিশালী রাজনৈতিক নেতা হিসেবে গণ্য হচ্ছেন। তাদের নির্বাচন সাফল্য দেশের রাজনীতিতে বৈচিত্র্য এবং নতুন দৃষ্টিভঙ্গি আনতে সহায়তা করবে।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এসব প্রার্থীর নির্বাচন দেশটির রাজনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার প্রত্যাশা রাখে। সুতরাং, আগামী কয়েক মাসে তাদের নির্বাচনী প্রচারণা এবং ফলাফল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি আরো আলোচিত হবে।