সারদায় প্রশিক্ষণরত ২৫২ এসআইকে অব্যাহতি
নিউজ ডেস্ক: রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে মৌলিক প্রশিক্ষণরত ২৫২ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। উপপরিদর্শক (এসআই) পদমর্যাদার এই পুলিশ কর্মকর্তাদের পর্যায়ক্রমে ‘ডিসচার্জ’ করার কথা নিশ্চিত করেছেন একাডেমির অধ্যক্ষ ও পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মো. মাসুদুর রহমান ভুঞা।
এর আগে আজ মঙ্গলবার সকালে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, প্রশিক্ষণ চলাকালে শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে ২৫২ জনকে চাকরি থেকে ‘ডিসচার্জ’ করা হচ্ছে। এটার প্রসেস চলছে। চিঠি ইস্যু হচ্ছে।
পুলিশে এসআই পদে চাকরির জন্য প্রার্থীকে শারীরিক, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। পরীক্ষা দিতে হয় কম্পিউটার চালানোর দক্ষতার ওপরও। এসব ধাপ পেরিয়ে প্রার্থীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। এরপর চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত প্রার্থী ‘আউটসাইড ক্যাডেট’ হিসেবে সারদায় এক বছরের জন্য মৌলিক প্রশিক্ষণে অংশ নেন।
এবার ৪০ তম আউটসাইড ক্যাডেট ব্যাচে মোট ৭০৪ জন ছিলেন। সাধারণত অক্টোবর–নভেম্বর মাসে আউটসাইড ক্যাডেট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। এই পাসিং আউটের পর মৌলিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এসআইদের পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে মাঠপর্যায়ে কাজে পাঠানো হয়। সেখানে এক বছর পূর্ণ হলে তাঁদের চাকরি স্থায়ী করা হয়।
গতকাল সোমবার প্রশিক্ষণরত এক এসআইয়ের কাছে পাঠানো ডিসচার্জের চিঠি দেখেছে আজকের পত্রিকা। এই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন একাডেমির অধ্যক্ষ মো. মাসুদুর রহমান ভুঞা। চিঠিতে বলা হয়েছে, এই এসআই প্রশিক্ষণ চলাকালে সকালের নাশতা নিয়ে মাঠে হইচই করেন। পরে প্রশিক্ষণ মাঠ ছেড়ে তিনি ব্যারাকে চলে যান। এ জন্য গত ৮ অক্টোবর তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় তাঁকে ডিসচার্জের জন্য পুলিশ সদর দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। গত ১৫ অক্টোবর তাঁকে ডিসচার্জ করার বিষয়টি পুলিশ সদর দপ্তর অনুমোদন করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে বিধি অনুযায়ী মৌলিক প্রশিক্ষণ থেকে ডিসচার্জ করা হলো।
পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, মৌলিক প্রশিক্ষণ চলাকালে শারীরিক অসমর্থতা কিংবা শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে অনেকেই ‘ডিসচার্জ’ হন। কিন্তু এবার একসঙ্গে ২৫২ জনের ডিসচার্জ হওয়ার ঘটনা নজিরবিহীন। অভ্যন্তরীণ কোনো কারণে এমন ঘটনা ঘটতে পারে বলে মন্তব্য তাঁদের।
এদিকে গত রোববার সারদায় ৪০ তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডার থেকে আসা সহকারী পুলিশ সুপারদের (এএসপি) প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ বা পাসিং আউট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। এরপর ছয় মাস মাঠপর্যায়ে কাজের পর তাঁদের চাকরি স্থায়ী হতো। এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমন্বয়ক অভিযোগ তোলেন, এই ব্যাচে আওয়ামী লীগ ৬২ জন ছাত্রলীগ ক্যাডারকে এএসপি পদে চাকরি দিয়েছে।
এরপর আগের রাতে পাসিং আউট স্থগিত করে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রাজশাহী এসেও ঘুরে যান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও পুলিশ প্রধান ময়নুল ইসলাম। ‘অনিবার্য কারণ’ বললেও ঠিক কী কারণে এই পাসিং আউট স্থগিত তা কেউ বলেননি।
আউটসাইড ক্যাডেট ব্যাচেও ছাত্রলীগের কেউ আছেন কিনা জানতে চাইলে পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষ মো. মাসুদুর রহমান ভুঞা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এটা আমি বলতে পারব না। তাঁদের রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততার ব্যাপারে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।’