এখনো পলাতক ৭০ জঙ্গিসহ ৯০০ বন্দি!
নিউজ ডেস্ক: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশের পটপরিবর্তনের সময় পাঁচটি কারাগার থেকে দুই হাজারের বেশি বন্দি পালিয়েছিলেন। তাঁদের অনেকে পরবর্তী সময়ে ফিরে আসেন, অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে এখনো ৭০ জঙ্গিসহ ৯২৯ বন্দি পলাতক রয়েছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় গ্রেপ্তার করা ৩৭ জন মন্ত্রী-এমপির মধ্যে ৯ জন ডিভিশন পেয়েছেন।
অন্যরা আবেদন ও আদালতের আদেশ অনুযায়ী পাবেন।
গতকাল মঙ্গলবার এসব তথ্য জানিয়েছেন কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজনস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মোহাম্মদ মোতাহের হোসেন। পুরান ঢাকার বকশীবাজারে কারা অধিদপ্তরের কনফারেন্স রুমে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে এ তথ্য জানান কারা মহাপরিদর্শক।
কারা মহাপরিদর্শক বলেন, আন্দোলনের (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন) সময় ১৭টি কারাগারে হামলা চালানো হয়েছে। এর মধ্যে আটটি কারাগার বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর পাঁচটি কারাগার থেকে বন্দি পালিয়েছেন। কারাগার থেকে জঙ্গি ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৯৮ জন পালিয়ে গিয়েছিলেন।
এর মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গি ছিলেন ৯ জন। এখন পর্যন্ত ৭০ জনের মতো বিচারাধীন জঙ্গি পলাতক। এ ছাড়া খোয়া যাওয়া ৬৫টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এখনো ২৭টি অস্ত্রের হদিস মেলেনি বলে জানান তিনি।
আন্দোলনের সময় বিভিন্ন কারাগারে বিশৃঙ্খলায় ২৮২ জন কারারক্ষী আহত হয়েছেন বলেও জানান আইজি প্রিজনস।
কারাগারে হামলা ও বিশৃঙ্খলায় জড়িতদের খুঁজতে গোয়েন্দাদের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি। আন্দোলনের পর ১৫ হাজারের বেশি বন্দি মুক্তি পেয়েছেন বলেও জানান কারা মহাপরিদর্শক।
সৈয়দ মোহাম্মদ মোতাহের হোসেন আরো জানান, কারাগারের পরিবেশ উন্নত করার পাশাপাশি দেশের কারাগারগুলো সত্যিকারের সংশোধনাগার বানাতে কর্তৃপক্ষ কাজ করছে। দেশে ৪২ হাজারের বেশি ধারণক্ষমতার কারাগারে ৫০ হাজারের বেশি বন্দি আছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ সমস্যা ছাড়াও কারা অভ্যন্তরে মাদক, দুর্নীতি ও নানা অনিয়ম রোধে কাজ চলছে।
কারা মহাপরিদর্শক জানান, অভ্যুত্থানের সময় বেশ কয়েকটি কারাগারের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এবং প্রায় দুই হাজারের বেশি বন্দি কারাগার থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। পালিয়ে যাওয়া অনেক বন্দিকে গ্রেপ্তার করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। পাশাপাশি অনেক আসামি ফিরে এসেছেন।
গত জুলাই অভ্যুত্থানে উত্তাল ছিল বাংলাদেশ। আগস্টে গিয়ে যা থিতু হয় সরকার পতনের এক দফা দাবিতে। দেশ থেকে পালিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৫ আগস্ট বিটিভিতে এ সংবাদ দেখে জেল থেকে পালাতে বিক্ষোভ করতে থাকেন কয়েদিরা। ৬ আগস্ট সফলও হন অন্তত দেড় হাজার কয়েদি। সাতক্ষীরা, শেরপুর ও গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে দেড় হাজার বন্দি পালানোর আগেই ১৯ জুলাই নরসিংদীর কারাগার থেকে পালিয়ে যান ৮২৬ জন বন্দি।
অবশ্য পালিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকে যেমন স্বেচ্ছায় কারাগারে আবার ফিরে আসেন, তেমনি বেশ কিছু বন্দিকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। তবে এখনো পলাতক ৯২৯ জন। কারা মহাপরিদর্শক বলছেন, যেকোনো মূল্যে এসব কয়েদিকে গ্রেপ্তার করবেন তাঁরা।
আইজি প্রিজন্স বলেন, ‘কারাগারের নিরাপত্তার জন্য দায়দায়িত্ব কারা কর্তৃপক্ষের। যদিও বাইরের কোনো আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সহায়তা নেওয়া হয়। তবে ওই সময়টায় আমরা সহায়তা পাইনি। আপনারা জানেন যে পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনী ওই সময় আমাদের সহায়তা করতে পারেনি, যে কারণে ঘটনাগুলো ঘটেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘পলাতক বন্দিরা যদি দেশের মধ্যে থাকে অবশ্যই তাঁদের গ্রেপ্তার করা হবে। আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। বাকিরাও হবেন আশা করছি।’