49876

কোনো অগ্নিকাণ্ডেরই বিচার হয়নি : ফেসবুক পোস্টে শ ম রেজাউল করিম

নিউজ ডেস্ক: বনানীর এফ আর টাওয়ার, নারায়ণগঞ্জের হাসেম ফুড, পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টা, বঙ্গ মার্কেটসহ রাজধানীর বহু অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণ গেছে অসংখ্য মানুষের। পুড়ে অঙ্গার হয়েছেন কেউ কেউ। অনেকের সন্ধানই মিলেনি। যা খুবই মর্মস্পর্ষী। এসব ঘটনা আলোড়ন সৃষ্টি করেছে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমেও। ঘটনা ঘটলে তদন্ত হয়, দায়ীদের চিহ্নিতও করা হয়। কিন্তু বিচার হয়নি কোনোটিরই। উল্টো দায়ীরা ছাড় পেয়েছেন খুব সহজেই। এখনো একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। আগামীতেও যে ঘটবে না, তার কোনো গ্যারান্টি নেই। কিন্তু যত ঘটনাই ঘটুক না কেন দায়ীরা কী বিচারের আওতায় আসবে? নাকি আগের মতোই ছাড় পেয়ে যাবে তারা?

বৃহস্পতিবার রাজধানীর বেইলি রোডে একটি বহুতল ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪৬ জন মানুষ মারা গেছে। আগের মতো এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনারও বিচার হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে নানা মহলে। এমনকি সরকারের সাবেক মন্ত্রীও বিচার হওয়া-না হওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন।

ads

গতকাল শুক্রবার নিজের ফেসবুক পেজে এই শঙ্কার কথা তুলে ধরে স্ট্যাটাস দেন সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। বর্তমানে তিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে বিজয়ী হয়ে পূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান তিনি। পরে তাকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়।

গতকাল বিকাল ৩টায় ফেসবুক পোস্টে তিনি বনানীর এফ আর টাওয়ার ও নারায়ণগঞ্জের হাসেম ফুডের অগ্নিকাণ্ডের বিষয় তুলে ধরেন। সে সময় তিনি নিজেই পূর্তমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

ads

ফেসবুক পোস্টে সাবেক এই মন্ত্রী বেইলি রোডের ঘটনার কথা তুলে ধরে লেখেন, বেইলি রোডের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মৃতের সংখ্যা ৪৬ ছাড়িয়েছে। এর দায় অবশ্যই তাদের নিতে হবে যাদের গাফিলতির কারণে এই নির্মম হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হলো। স্বজনহারাদের আর্তনাদ, অপূরণীয় ক্ষতি ও অনেক পরিবারের সুন্দর ভবিষ্যৎ কীভাবে নির্মমতায় শেষ হয়ে গেল, এর বিচার হবে কিনা জানি না।? বনানীর এফ আর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সেই ঘটনা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছিল, আমাদের ভবনগুলোর অব্যবস্থাপনা ও দেখভাল করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভিন্ন সংস্থার ব্যর্থতা। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি করেছিলাম একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে। সেই তদন্তে ৬২ জনের দায় নিরূপণ হয়েছিল ভবন নির্মাণ ও তদারকির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের মধ্য থেকে।
উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্তে দায়ী চিহ্নিত হলেও তারা পরবর্তীতে ছাড় পেয়েছে, এই ঘটনায় নিজের হতাশার কথা তুলে ধরে সাবেক এই মন্ত্রী লেখেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দায়ীদের সব তথ্য দিয়েছিলাম দুর্নীতি দমন কমিশনকে। অপ্রিয় হলেও সত্য, তদন্ত রিপোর্টে যাদের দায় নিরূপন হয়েছিল তাদের সবার বিরুদ্ধে মামলাও রুজু করা হয়নি। আরো আশ্চর্য, তদন্ত শেষে আরো অনেককেই বাদ দিয়ে দেয়া হয় অভিযোগপত্রে। যাদের দায় নির্ধারণ করেছিল উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি, তাদের চেয়ে অনেক নিম্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা ঐ দায়ীদের একটি অংশকে অব্যাহতি দিয়ে দিলেন। অতি দ্রুততার সঙ্গে তাদের জামিন হয়ে গেল। এমনো নজির রয়েছে, কোনো কোনো আসামিকে একদিনের জন্যেও জেল হাজতে যেতে হয়নি। বিচারে শাস্তি হওয়া তো অনেক দূরের কথা। যতদূর জানি এই মামলার বিচার আজো হয়নি। ওই ঘটনা দেশি-বিদেশি সব গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। ওই ঘটনার পরে ফায়ার ব্রিগেড ও সিভিল সার্ভিসের সক্ষমতা বাড়াতে অনেক ইকুইপমেন্ট আনা হয়েছে। রাজউকসহ অন্যান্য সংস্থাকে এ জাতীয় ভবনের তদারকির ওপরে গুরুত্ব দিয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। বলতে আমার দ্বিধা নেই, সব কিছুই স্থিমিত হয়ে যায় স্বল্প সময়ের মধ্যেই।

প্রভাবশালীরা সব কিছুই ম্যানেজ করে ফেলে এমন কথা উল্লেখ করে শ ম রেজাউল লেখেন, এভাবেই অপরাধের বিচার প্রক্রিয়াকে ভূলুণ্ঠিত করে দিয়ে বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রভাবশালীদের হাত অনেক লম্বা। তারা সব কিছুই ম্যানেজ করে ফেলতে পারেন। বেইলি রোডের নির্মমতা আমাদের হৃদয়কে স্পর্শ করলেও অনেকেই এই সব অগ্নিকাণ্ডের ভয়াবহ ঘটনায় দায়ীদের বাঁচাবার জন্যই তৎপর হয়ে যান। নারায়ণগঞ্জের হাশেম ফুডে অগ্নিকাণ্ডের কথা তুলে ধরে তার বক্তব্য হচ্ছে, এই ঘটনায় পোড়া দেহগুলো স্বজনদের হাতে হস্তান্তর করার পূর্বেই জামিন হয়ে গেল আসামিদের। আমাদের বিবেক কি নির্বাক হয়ে এসব দেখেই যাবে? এই ঘটনায় দায়ী অপরাধীরা যেহেতু শক্তিশালী, তাদের হাত অনেক লম্বা, তাই তাদের নিয়ে না হয় কোনো মন্তব্য করলাম না।

ফেসবুক পোস্টে শ ম রেজাউল বেইলি রোডে নিহতদের কথা উল্লেখ করে বলেন, তাদের পরিবারের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা ছাড়া কী আর বলার আছে? চিকিৎসাধীন যারা তাদের আরোগ্য কামনা করছি। আল্লাহ তাআলা আমাদের সহায় হোন।

ad

পাঠকের মতামত