48829

মালদ্বীপের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সমর্থন ঘোষণা চীনের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং বলেছেন, কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থানে থাকা মালদ্বীপের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দেশটিকে তিনি সমর্থন দিচ্ছেন। সফররত মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মাদ মুইজ্জুর সাথে বৈঠকে অবকাঠামো থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ে উভয় দেশ বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষরের পর শি এ কথা বলেছেন।

বৈঠকে বেইজিং এবং মালের সম্পর্ককে ঐতিহাসিক আখ্যা দেন জিনপিং। চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানিয়েছে, শি মুইজ্জুকে বলেছেন নতুন পরিস্থিতিতে অতীত অর্জনের ওপর ভিত্তি করে এগিয়ে যাওয়ার ঐতিহাসিক সুযোগ পেয়েছে দু’দেশ। চীনের প্রেসিডেন্ট আরো বলেছেন, চীন ও মালদ্বীপ একে অপরের বন্ধু ও সুপ্রতিবেশী। গত পাঁচ দশক ধরে দু’দেশ সবসময় একে অপরকে সম্মান ও সমর্থন করে আসছে। এর পাশাপাশি গত ১০ বছরে দু’দেশের সম্পর্ক আরো গভীর হয়েছে। ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগের আওতায় চীন ও মালদ্বীপের মধ্যে সহযোগিতা থেকে অনেক সুফলও অর্জিত হয়েছে বলে জানান তিনি।

ads

এসময় মালদ্বীপে বিনিয়োগের জন্য চীনের প্রতি আহ্বান জানান মোহাম্মদ মুইজ্জু। সবচেয়ে বেশি জোর দেন মালদ্বীপের পর্যটন খাতে। মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট বলেন, বেইজিংয়ের সাথে মালের যে দীর্ঘ সম্পর্ক রয়েছে, তার মর্যাদা রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর। আমাদের যতগুলো প্রতিবেশী রয়েছে, তাদের মধ্যে চীন সবচেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠ। দু’দেশের স্বার্থে এই সম্পর্ক আরো জোরদারের চেষ্টা করা হবে বলে জানান তিনি। দু’দেশ জলবায়ু, কৃষি ও অবকাঠামো খাতে বেশি কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। সমুদ্রসম্পদ ও জাহাজ নির্মাণ শিল্প থাকা সত্ত্বেও মালদ্বীপের অর্থনীতি প্রধানত পর্যটননির্ভর। দেশের মোট প্রবৃদ্ধির ২৮ শতাংশ আসে পর্যটন খাত থেকে। এছাড়া মালদ্বীপের মোট বৈদেশিক মুদ্রার ৬০ শতাংশও এ খাত থেকেই আসে।
উল্লেখ্য, নিকট প্রতিবেশী ভারত সফরে না গিয়ে ভারত ডিঙিয়ে চীন সফরে গিয়েছেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু। বুধবার তিনি চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে পৌঁছান। চীনা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের চীন সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছাবে, যা দুই দেশের জনগণের জন্যই কল্যাণ বয়ে আনবে, একই সাথে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জনগণের কল্যাণ বয়ে আনবে।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং মোহাম্মদ মুইজ্জুকে বেইজিংয়ের ঐতিহাসিক গ্রেট হলে স্বাগত জানান। পরে এ দুই নেতা দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসেন। এর আগে মোহাম্মদ মুইজ্জু গত ৮ জানুয়ারি রাষ্ট্রীয় সফরে চীনে যান। তিনি পাঁচ দিনের সফর শেষে আজ ১২ জানুয়ারি চীন ত্যাগ করবেন। বৈঠকে দুই নেতা দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক এগিয়ে নেয়া এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যাপক কৌশলগত সহযোগিতা অংশীদারিত্ব এগিয়ে নেয়ার বিষয়েও কথা বলেন।

ads

বৈঠকে চীনের প্রেসিডেন্ট মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টকে বলেছেন- চীন মালদ্বীপের সাথে সরকার পরিচালনার অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে, উন্নয়ন কৌশলের সমন্বয় শক্তিশালী করতে, উচ্চমানের বেল্ট অ্যান্ড রোড সহযোগিতা এগিয়ে নিতে এবং চীন-মালদ্বীপের বন্ধুত্বের এক নতুন মানদণ্ড স্থাপন করতে প্রস্তুত।
এ সময় চীনের প্রেসিডেন্ট অর্থনীতি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, কৃষি পার্ক এবং গ্রিন অ্যান্ড ব্লু অর্থনীতি ও ডিজিটাল অর্থনীতির মতো ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করার জন্য দুই পক্ষের প্রতি আহ্বান জানান। এ ছাড়া সামুদ্রিক পরিবেশ, পরিবেশগত সুরক্ষার ক্ষেত্রে সম্প্রসারিত সহযোগিতার পাশাপাশি জনগণের মধ্যে বিনিময়কে শক্তিশালী করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘চীন মালদ্বীপের শিক্ষার্থীদের চীনে আরো বেশি বেশি পড়াশোনার সুযোগ পেতে সহায়তা করবে এবং দুই দেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট আরো বাড়াবে।’

বৈঠকে মুইজ্জু বলেন, চীনে তার প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরে ব্যাপক সম্মানিত হয়েছেন এবং চলতি বছর প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে চীন সফর করার পর বেইজিং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়নে যে গুরুত্ব দিচ্ছে, তার পূর্ণাঙ্গ প্রমাণ পেয়েছেন। এ সময় তিনি মালদ্বীপে চীনের প্রেসিডেন্ট শির ঐতিহাসিক সফরের ১০ বছর পূর্তির বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, চীন তার দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে মূল্যবান সহায়তা প্রদান করেছে। তিনি বলেন, মালদ্বীপের জনগণ বিআরআই থেকে অনেক উপকৃত হয়েছে, মালদ্বীপ-চীন মৈত্রী সেতুকে দুই দেশের মধ্যে বন্ধনের প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করে।
বৈঠক শেষে দুই রাষ্ট্রপ্রধান চীন-মালদ্বীপ ব্যাপক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য একটি কর্মপরিকল্পনায় স্বাক্ষর প্রত্যক্ষ করেন। পাশাপাশি বেল্ট অ্যান্ড রোড, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, অর্থনীতি ও প্রযুক্তি, অবকাঠামো নির্মাণ এবং জনগণের জীবিকা, সবুজ উন্নয়ন এবং ব্লু ও ডিজিটাল অর্থনীতি বিষয়ে সহযোগিতার নথিপত্রে স্বাক্ষর করেন।

ad

পাঠকের মতামত