
গাজার ভবিষ্যৎ নির্ধারণের দায়িত্ব ইসরায়েলের নয়: ফ্রান্স
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ভবিষ্যত নির্ধারণ ইসরায়েলের ওপর নির্ভর করে না বলে মন্ত্রব্য করেছেন ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাথরিন কোলোনা। খবর আনাদোলুর।
শুক্রবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে ইসরায়েলি মন্ত্রীদের পরামর্শকে প্রত্যাখ্যান করে ক্যাথরিন কোলোনা বলেন, গাজার বাইরে ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসনের প্রস্তাব ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ ও ‘আমাদের একটি সমাধান থেকে দূরে নিয়ে যাচ্ছে’ এবং ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থের বিরুদ্ধেও।
কোলোনা বলেন, ‘সংকট সমাধানে আমাদের অবশ্যই আন্তর্জাতিক আইনের নীতিতে ফিরে আসতে হবে এবং এটিকে সম্মান করতে হবে’। ।
একটি দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের জন্য ফ্রান্সের সমর্থন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একমাত্র কার্যকর বিকল্প’ এবং ‘গাজা এবং পশ্চিম তীরকে অবশ্যই ভবিষ্যতের ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অংশ হতে হবে।’
কোলোনা বলেন, বেসামরিক নাগরিকরা অপরাধের জন্য দায়ী নয় এবং তাদের অবশ্যই রক্ষা করা উচিত, আন্তর্জাতিক আইন অনুসরণ এবং বেসামরিক জনসংখ্যাকে রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।
ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, লেবানন এবং লোহিত সাগরের মতো প্রতিবেশী অঞ্চল গুলোতে সব পক্ষের পরিস্থিতির আরও বৃদ্ধি এড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ফ্রান্স।
এর আগে শুক্রবার ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের চলমান যুদ্ধ শেষে গাজা উপত্যকায় নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট।
যুদ্ধ শেষ হলে গাজায় হামাসের শাসনক্ষমতা মুছে দেয়া হবে বলে জানিয়ে ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেন, হামাস আর গাজা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। তবে নির্দিষ্ট কিছু শর্তের বিনিময়ে গাজা উপত্যকার শাসনক্ষমতা পাবে ফিলিস্তিনিরা।
তিনি বলেন, অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে ইসরাইল চাইলে পশ্চিম তীরের মতো যে কোনো সময় সামরিক অভিযান পরিচালনা করতে পারবে। এ সময় গাজার সীমান্ত অঞ্চলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে থাকবে।
প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এদিন ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্ত দিয়ে ইসরায়েলে প্রবেশ করে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস যোদ্ধারা। তারপর ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। পরে ২৮ অক্টোবর থেকে অভিযানে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও।
মাঝে এক সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধবিরতিতে ২৪ বিদেশিসহ মোট ১০৫ জনকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগার থেকে ২৪০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, যার মধ্যে ৭১ জন মহিলা এবং ১৬৯টি শিশু রয়েছে।
যুদ্ধবিরতি শেষে গত ১ ডিসেম্বর থেকে গাজা উপত্যকায় পুনরায় সংঘাতে জড়ায় ইসরায়েল ও হামাস।
উল্লেখ্য, ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচারে হামলায় গত ৭ অক্টোবর থেকে হাসপাতালে আনা হয়েছে এমন নিহত ফিলিস্তিনিদের মোট সংখ্যা ২২ হাজার ছড়িয়ে গেছে। এছাড়া অধিকৃত পশ্চিম তীরে ৩২০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫৭ হাজার ফিলিস্তিনি।
এছাড়া প্রায় তিন মাস ধরে ইসরায়েলি বর্বরোচিত হামলায় গাজার হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে, যা গত ৭৫ বছরে ফিলিস্তিনিদের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক সংঘর্ষ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
অন্যদিকে হামাসের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন ১ হাজার ২০০ জন। পাশাপাশি ইসরায়েল থেকে প্রায় ২৪০ জনকে জিম্মি হিসেবে গাজায় নিয়ে যায় হামাস।