47892

জার্মানিতে বাজেট সংকট, সরকারের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বাজেট নিয়ে বড় ধরনের জটিলতায় পড়েছে ইউরোপের দেশ জার্মানি। মহামারি তহবিলের অর্থ জলবায়ু খাতে ব্যয় করাকে আদালত অবৈধ ঘোষণার পর চলতি বছরের বাকি সময়ের বাজেট ব্যয় স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়৷

জার্মানির অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়ান লিন্ডনার সোমবার (২১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সরকারের নতুন নীতি ঘোষণা করেন। সে অনুযায়ী, ২০২৩ সালের বাকি সময়ে সরকারের প্রায় পুরো বাজেট ব্যয় স্থগিত করা হয়েছে।

ads

কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেটের সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এমন কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি লিন্ডনার। প্রকৃতপক্ষে জার্মানির সর্বোচ্চ আদালতের নাটকীয় রায়ের পরিপ্রেক্ষিতিই এমন পদক্ষেপ নিতে হয়েছে জামার্ন সরকারকে।

সংকটের শুরু যেখান থেকে

ads

জার্মানির জোট সরকার করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বিপুল অর্থ বরাদ্দ দিয়েছিল। সেখান থেকে খরচ না হওয়া ৬ হাজার কোটি ইউরো তারা জলবায়ু খাতে ব্যয় করতে চেয়েছিল। বিশেষ করে, বিদ্যুৎচালিত পরিবহন ও ভবনগুলোকে জ্বালানি সাশ্রয়ী করতে এই অর্থ ব্যয়ের কথা ছিল।

কিন্তু আদালত এই সিদ্ধান্ত আটকে দিয়েছে। তাই এই ধরনের তহবিলের ক্ষেত্রে ঋণের সাধারণ নিয়মই কার্যকর হবে। ১৫ নভেম্বরের দেওয়া রায়ে আদালত বলেছে, কোনো একটি বছরের জন্য বরাদ্দ অর্থ সরকার পরবর্তী বছরে অন্য খাতে ব্যয় করতে পারে না। আদালতের এই রায়কে দেশটির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ ও তার সরকারের জন্য বড় আঘাত বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।

২০০৮-০৯ সালে ইউরোপে অর্থনৈতিক মন্দার পর জার্মানির তৎকালীন চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মার্কেল সতর্কতা হিসেবে ঋণ সীমার নিয়ম চালু করেন। সে অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেট ঘাটতি বা নতুন ঋণের পরিমাণ জিডিপির দশমিক তিন-পাঁচ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। কিন্তু করোনা মহামারির সময় সংকটকালীন পরিস্থিতি দেখিয়ে এই নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটানো হয়েছিল। জলবায়ু পরিবর্তনকে অনেকে সংকট হিসেবে বিবেচনা করলেও, সরকারিভাবে তা ঘোষণা করা হয়নি।

বলা হচ্ছে, এই রায়ের ফলে রাজনৈতিকভাবেও সংকটে পড়েছে সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এসপিডির নেতৃত্বাধীন জোট। তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সিডিইউয়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই আদালত এই রায় দিয়েছে। নির্বাচনের দুই বছর আগে জোট সরকারের জন্য এটিকে বড় রাজনৈতিক পরাজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে।

কীভাবে সরকার আগামী বছরের ব্যয় সামাল দিবে তা নিয়ে জোটের সদস্যদের মধ্যেও রয়েছে মতবিরোধ। এসপিডি চায়, কর বাড়াতে। অন্যদিকে, দলটির কোনো কোনো নেতা ২০২৪ সালে জরুরি অবস্থা ঘোষণার মাধ্যমে ঋণসীমা বাড়ানোরও মত দিচ্ছেন।

এদিকে, শরিক দল এফডিপি কর বাড়ানোর বিপক্ষে। তারা বরং সরকারের বিভিন্ন খাতে বাজেট কমানোর পক্ষে। আর জোটের তৃতীয় সঙ্গী গ্রিন পার্টি সামাজিক ও জলবায়ু খাতের ব্যয় কমানোর ঘোরবিরোধী। তবে শেষ পর্যন্ত এফডিপি ও বিরোধী দল সিডিইউয়ের চাপে কর না বাড়িয়ে ব্যয় কমানোর দিকেই সরকারকে হাঁটতে হতে পারে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। গ্রিন পার্টির মন্ত্রীদেরকে সেক্ষেত্রে দলটির নেতা-কর্মীদের জবাবদিহিতার মধ্যে পড়তে হবে, যা সরকারের জোটেও চিড় ধরাতে পারে।

তবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে জোটের সদস্যদের এই স্পষ্ট মতবিরোধ সত্ত্বেও তা থেকে উত্তরণ সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন চ্যান্সেলর শলৎজ। এমন বাস্তবতায় জনগণের কাছে সরকারের অনুমোদনের রেটিং তলানীতে এসে ঠেকেছে। নতুন নির্বাচনের ক্ষেত্রে যা জোটের তিন সদস্যের জন্য চিন্তার বিষয়।

সূত্র: ডয়েচে ভেলে

ad

পাঠকের মতামত