
ঢাকায় আসছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট, আলোচনায় ইন্দো-প্যাসিফিক
নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরো জোরদার করতে দ্বিপক্ষীয় সফরে ঢাকায় আসছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ। নয়াদিল্লি থেকে আগামী রবিবার তিনি ঢাকায় পৌঁছবেন। ঢাকায় ফ্রান্স দূতাবাস গতকাল সোমবার এ তথ্য জানায়।
প্রেসিডেন্টের সফর নিয়ে ফ্রান্স দূতাবাস তার ফেসবুক পেজে বলেছে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে ফরাসি ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল তুলে ধরবেন।
বাংলাদেশে দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। বাংলাদেশও তার অংশীদারি বৈচিত্র্যময় করার চেষ্টা করছে। তাই ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের এ সফর বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের সুযোগ সৃষ্টি করবে। ফ্রান্স দূতাবাস জানায়, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা, বিশেষ করে পৃথিবী ও এর জনগণের জন্য প্যারিস এজেন্ডার আওতায় কাঠামোতে বাংলাদেশ ও ফ্রান্স দারুণ ঐক্যবদ্ধ।
বাংলাদেশ ওই কাঠামোকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করে।
ফ্রান্স দূতাবাস আরো জানায়, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। তাই ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট তাঁর মানবিক ক্ষেত্রে, বিশেষ করে নিয়মিত বন্যার শিকার বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর ব্যাপারে ফ্রান্সের অঙ্গীকার তুলে ধরবেন।
ফ্রান্স দূতাবাস বলেছে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া বা শান্তি রক্ষা কার্যক্রম আন্তর্জাতিক সংহতি উদ্যোগে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী দেশ।
বাংলাদেশ সফরের আগে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নয়াদিল্লিতে জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেবেন। সেখানে তিনি সব মহাদেশের নেতাদের সঙ্গে বৈশ্বিক বিভাজন মোকাবেলায় আলোচনা করবেন। বড় বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা উদ্যোগকে এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে দিল্লির আলোচনায়।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘ফ্রান্স ২০২১ সালে একটি স্যাটেলাইট কারখানা স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছিল। আমরা ওই প্রস্তাবকে স্বাগত জানাব।
’ এ ছাড়া ফ্রান্সের কাছ থেকে বিমান কেনার বিষয়েও অগ্রগতির ইঙ্গিত দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, ফ্রান্সের সহযোগিতায় প্রথম স্যাটেলাইট উৎক্ষপণের পর বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্যাটেলাইট তৈরির বিষয়ে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করেছে। সেটি আকারে বড় স্যাটেলাইট। এর অনেক ‘ব্লাইন্ড স্পট’ থাকবে। ইউক্রেন ইস্যুতে নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়ার সঙ্গে ব্যাংকিং লেনদেন জটিল হওয়ায় সেই স্যাটেলাইট প্রকল্প নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে। অন্যদিকে পশ্চিমা দেশ ফ্রান্স বাংলাদেশকে চারটি ছোট পর্যবেক্ষণ স্যাটেলাইট কেনার প্রস্তাব দিয়েছে। সেগুলো তৈরি করবে এয়ারবাস ডিফেন্স অ্যান্ড স্পেস। চুক্তি হলে দুই দেশ পরস্পরের স্যাটেলাইট ব্যবহার করে তথ্য ও ছবি সংগ্রহ করতে পারবে। চারটি স্যাটেলাইটের দুটি ফ্রান্সে ও দুটি বাংলাদেশে নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে প্যারিস। এর ফলে বাংলাদেশেই স্যাটেলাইট ও যন্ত্রাংশ উৎপাদন কারখানা নির্মাণের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘ফ্রান্স কিছু বিমান বিক্রি করতে চায়। আমরা রাজি হয়েছি। আমরা ১০টি এয়ারবাস কিনব। এর মধ্যে দুটি হচ্ছে কার্গো বিমান। দুটি চাচ্ছি বোয়িং ও এয়ার। মাঝখানে ডলার সংকটের কারণে কেনার প্রক্রিয়ায় দেরি হয়েছে।’
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ১৯৯০ সালে প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া মিতেরার পর ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁ বাংলাদেশ সফরে আসছেন। তিনি ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। তিনি ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাবেন এবং বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করবেন।
এদিকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সফরের আগে আগামী বৃহস্পতিবার সফরে আসছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সফরের কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর আরো কাটছাঁট হচ্ছে।