43240

বুড়িচংয়ে হাইকোর্টের আদেশ না মেনে স্কুলের সীমানা প্রাচীর ভাঙ্গার অভিযোগ

বুড়িচং প্রতিনিধি: কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের খাড়াতাইয়া পূর্ব পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর ভাঙ্গা ও টিউবওয়েল তুলে ফেলার অভিযোগ করেছেন খাড়াতাইয়া ইসলামিয়া সিনিয়র ফাযিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মিজানুর রহমান এর বিরুদ্ধে। এছাড়াও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সীমানা নিয়ে যেহেতু একটি মামলা চলমান সেহেতু মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনো প্রকার কাজ না করার জন্য হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

রবিবার (৭ মে) মাদ্রাসার ভবন নির্মাণের জন্য খাড়াতাইয়া পূর্ব পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর ভেঙে চারা গাছ কেটে ফেলে এবং টিউবওয়েল উপড়ে ফেলে ট্রাক দিয়ে মালামাল আনা-নেওয়ার জন্য একটা রাস্তা করায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ করেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসরিন আক্তার। এ ঘটনায় বুড়িচং থানায় একটি অভিযোগ করলে থানার এসআই মাহবুবুর রহমান খাদিম সঙ্গীয় ফোর্স সহ ঘটনা স্হান পরিদর্শন করেন।

ads

অভিযোগ সূত্রে জানা যায় যে, গত করোনা কালীন সময়ে ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে বিদ্যালয়ে বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য পুরাতন ভবন ভেঙে ভবন নির্মাণ কার্যাদেশ আসে। ঠিকাদার হাজী মোঃ বিল্লাল হোসেন চেয়ারম্যান বিদ্যালয়ের সয়েল টেষ্ট করেন। ভবন নির্মাণকালীন সময়ে বিদ্যালয়ের পাশে অন্যত্র অস্থায়ীভাবে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি টিনের ঘর নির্মাণ করা হয়।

এদিকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসরিন আক্তার অভিযোগ করে বলেন এলাকার মাহফুজুর রহমান নামে একজন শিক্ষক বিদ্যালয়ের জায়গাটি ব্যাক্তি মালিকানা দাবি একটি মামলা দায়ের করেন। যার ফলে ঠিকাদার বিল্লাল হোসেন চেয়ারম্যান এর বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। অপর দিকে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের জমিসংক্রান্ত বিরোধ সৃষ্টি হয়। যার ফলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন না থাকায় বাশের বেড়ার ঘরে ২০০ শতাধিক নিয়ে বিদ্যালয়ের ৬ জন শিক্ষকের প্রতিদিনে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সহকারী মহিলা শিক্ষক অভিযোগ করে জানান -আমাদের অস্থায়ী কার্যালয়ে ওয়াশরুম (বাথরুম), পানি খাওয়ার টিউবওয়েল, নামাজ পড়ার ব্যাবস্থা না থাকায় মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা রাস্তার আশেপাশে বাধ্য হয়ে প্রস্রাব করতে হচ্ছে । অপরদিকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ও শিক্ষকরা আশেপাশের বাড়ি ঘরের ওয়াশরুম ব্যবহার করছেন। আবার শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসার টিউবওয়েল ও ওয়াশরুম ব্যবহার করতে গেলে মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষ অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে । প্রধান শিক্ষীকা আরও জানান বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সহযোগিতায় মাদ্রাসা পাশে ৭ শতক জমিতে উপজেলা বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে একটি ভবন নির্মাণ করতে গেলে ঐ ভবনের জায়গার নামে ব্যাক্তিমালিকানা দাবি করে একটি মামলা করলে তার নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এমতায় অবস্থায় শিক্ষক- শিক্ষিকারা দিশেহারা হয়ে যায় এভেবে যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে কিন্তু তার স্হান নেই। এ বিষয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নাইমূল ইসলাম ভূইয়ার বলেন আমরা ইউপি চেয়ারম্যান হাজী মোঃ বিল্লাল হোসেন সহ স্হানীয় গণ্য মান্য ব্যাক্তিবর্গ নিয়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও মামলার বাদীপক্ষদের সাথে চলমান সমস্যাটি সমাধানের লক্ষ্যে চেষ্টা চালাচ্ছি।

ads

স্হানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হাজী মোঃ বিল্লাল হোসেন বলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ করার জন্য আমি কার্যাদেশ পেয়েছিলাম। সয়েল টেষ্ট করার পর ব্যাক্তি মালিকানা দাবি করে মামলা করায় কাজটি করা সম্ভব হয়নি। তবে তিনি আরও বলেন বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষের মধ্যে চলমান বিরোধ নিয়ে ১০-১২ টি বৈঠক হয়েছে । যার কোনো কার্যকরী সুরহ হয়নি। অপরদিকে তিনি বলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থা খুব শোচনীয় ও ভিবিন্ন সমস্যায় জর্জরিত রয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষীকা নাসরিন আক্তার ২০২২ সালে বুড়িচং থানায় একটি অভিযোগ করেন। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মোঃ মিজানুর রহমান বলেন আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা মিথ্যা ও বানোয়াট। এবং স্হানীয় চেয়ারম্যান হাজী মোঃ বিল্লাল হোসেন এর সাথে আলোচনা করে রাস্তা করা হয়েছে এবং কাজ শেষে টিউবওয়েলটি পুনরায় প্রতিস্থাপন করা হবে।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোসাঃ ফৌজিয়া আক্তার বলেন -আমি ঘটনা স্হল পরিদর্শন করেছি। এটা আসলে দুঃখজনক ঘটনা যা নজিরবিহীন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসাঃ শাহিদা আক্তার বলেন আমি মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে এ বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য বলেছি। এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি ভবন নির্মাণ করার জন্য আমি একটি বরাদ্দ দিয়েছি স্হানীয় চেয়ারম্যানকে। এ ভবনটিও নির্মাণ করতে পারছে না স্হানীয় চেয়ারম্যান। তিনি বলেন ৫ বিদ্যালয়ের ৫ শতক জমটি নিষ্কন্টক। তিনি জানান পূর্বের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ স্হানটি নিয়ে একটি ফৌজদারি মামলা দায়ের করেছেন। রবিবার প্রধান শিক্ষীকা আমার কাছে চলমান বিরোধ নিয়ে আসলে আমি বুড়িচং থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নিকট পাঠাই। এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে থাকি।

ad

পাঠকের মতামত