41760

পুতিনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা, বাইডেন ও শলৎসের সমর্থন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পুতিনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানাকে স্বাগত জানিয়েছেন জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস। অন্যদিকে, এই পদক্ষেপকে ন্যায্য হিসেবে অভিহিত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্টও।

শনিবার (১৮ মার্চ) ওলাফ শলৎস জানান, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। পুতিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ তদন্তে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত যথাযথ প্রতিষ্ঠান। টোকিওতে অবস্থানকালে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিমত ব্যক্ত করেন।

ads

তিনি বলেন, ‘বাস্তবতা হলো কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়, আর সেটাই এখন পরিষ্কার হলো।’ এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন স্পষ্টভাবে যুদ্ধাপরাধ করেছেন। তাই তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার আইসিসির সিদ্ধান্ত ন্যায়সঙ্গত বলে মনে করেন তিনি।

গত বছর প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর দখল করা এলাকা থেকে বেআইনিভাবে জনগণকে (শিশুসহ) রাশিয়ায় বলপূর্বক স্থানান্তরের মতো যুদ্ধাপরাধ ঘটানোর অভিযোগ আনা হয়েছে পুতিনের বিরুদ্ধে। একই অভিযোগে রাশিয়ার শিশু অধিকার সংক্রান্ত প্রেসিডেন্সিয়াল কমিশনার মারিয়া এলভোভা-বেলোভার বিরুদ্ধেও পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

ads

যুক্তরাষ্ট্র আইসিসির সদস্য না হলেও এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বাইডেন বলেন, ‘ঠিক আছে, আমি মনে করি এটি ন্যায়সঙ্গত। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এটি আমাদের দ্বারা ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নয়। তবে সিদ্ধান্তটি খুব শক্তিশালী।’

যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র একটি ই-মেইল বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এতে কোনো সন্দেহ নেই যে রাশিয়া (ইউক্রেনে) যুদ্ধাপরাধ ও নৃশংসতা করছে। আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি, দায়ী ব্যক্তিদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। আইসিসি প্রসিকিউটর তার সামনে থাকা তথ্যের ভিত্তিতে স্বাধীনভাবে এমন একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন।’

আইসিসির এই পদক্ষেপের ফলে পুতিন ১২৩টি সদস্য রাষ্ট্রের ভূখণ্ডে পা রাখলে তাকে বিচারের জন্য হেগে স্থানান্তর করতে হবে। তবে পরোয়ানাকে ‘জঘন্য কাজ’ বলে অ্যাখ্যা দিয়েছে ক্রেমলিন। রাশিয়ার জন্য এই পরোয়ানা ‘অর্থহীন’ বলেও উল্লেখ করেছে তারা।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও শিশুদের অধিকার বিষয়ক রাশিয়ার কমিশনারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার পর ইউক্রেনে রুশ হামলা অব্যাহত রয়েছে এবং ব্যাপক হারে হামলা চালানো হচ্ছে। শুক্রবার (১৭ মার্চ) রাতে ইউক্রেনে ১৬টি রুশ ড্রোন হামলা চালায়।

শনিবার ভোররাতে ইউক্রেনের বিমান বাহিনী এ কথা জানিয়েছে। টেলিগ্রামে বিমান বাহিনীর কমান্ড জানিয়েছেন, ১৬টির মধ্যে ১১টি ড্রোন ‘কেন্দ্রীয়, পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলে’ গুলি করে মাটিতে নামিয়েছে তারা। আঘাত হানার মধ্যে রাজধানী কিয়েভ ও পশ্চিমাঞ্চলীয় লভিভ প্রদেশ ছিল।

কিয়েভ শহরের প্রশাসনের প্রধান সের্হি পপকো জানিয়েছেন, ইউক্রেনীয় বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইউক্রেনের রাজধানীকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো সমস্ত ড্রোনকে গুলি করেছে।

অন্যদিকে, লভিভ আঞ্চলিক গভর্নর ম্যাক্সিম কোজিটস্কি জানিয়েছেন, ছয়টি ড্রোনের মধ্যে তিনটি গুলি করা হয়েছে, বাকি তিনটি পোল্যান্ডের সীমান্তবর্তী একটি জেলায় আঘাত হেনেছে। ইউক্রেনের বিমান বাহিনীর মতে, ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী রাশিয়ার ব্রায়ানস্ক প্রদেশ ও আজভ সাগরের পূর্ব উপকূল থেকে হামলা চালানো হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার প্রায় ২০ বছর আগে ইরাকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন আক্রমণ এবং ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার চলমান যুদ্ধের মধ্যে তুলনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। ব্লেয়ার ডিপিএ ও ইউরোপীয় সংবাদ সংস্থা এএফপি, আনসা ও ইএফই এর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তার দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট করেছেন।

তিনি জানান, তৎকালীন ইরাকি প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন নিজের দেশের জনগণকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিলেন, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে দুটি যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলেন এবং রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে একদিনে ১২ হাজার মানুষকে হত্যা করেছিলেন।

তিনি বলেন, ‘জোট বাহিনী যে ইরাকে গিয়েছিল এবং হোসেনের পতন ঘটিয়েছিল তা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ইউক্রেন হামলার সমতুল্য হতে পারে না। ইউক্রেনে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট রয়েছেন। যিনি আমার জানা মতে, কখনো কোনো আঞ্চলিক সংঘাত শুরু করেননি। প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে কোনো আগ্রাসন চালাননি।’

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের লক্ষ্যে ২০০৩ সালের ২০ মার্চ ইরাকে আক্রমণ শুরু করে। তাদের লক্ষ্য পূরণ হলেও দেশটি দ্রুত সহিংসতায় ডুবে যায়।

সূত্র: ডয়চে ভেলে

ad

পাঠকের মতামত