10654

১৮৩ বছরে কুমিল্লা জিলা স্কুল; শুভ জন্মদিন

আমাদের সময়ে ৯/১০ বছর বয়সে একটা শিশুর সবচেয়ে বড় অর্জন ছিল কুমিল্লার সবচেয়ে ভালো স্কুলে ভর্তি হওয়া। প্রভাতি ও দিবায় বিভক্ত দুটো শাখায় (৬০+৬০)১২০ জন ছাত্রের জন্য ভাগ্য নির্ধারিত ছিল কুমিল্লা জিলা স্কুলে। ১৯৯৪ সালে এত এত ক্ষুদে বালকদের জন্য ভর্তিযুদ্ধ আক্ষরিক অর্থেই এক ভয়ানক সংগ্রামের নাম। যে পেত সে ভাসতো আর যে হারাতো সে যে কী কষ্ট পেত তা লেখার আঁচড়ে প্রকাশ দুর্বোধ্য। খুব খারাপ লাগতো মেধার এ প্রতিযোগিতা কারণ তাতে করে হারাতে হয়েছে আমার প্রাথমিকের বন্ধুদের। আমি প্রভাতির ছাত্র ছিলাম। প্রাথমিকের আসিফ, এনাম, তানভীরকে পেয়েছিলাম জিলা স্কুলে এসে। কানাডা প্রবাসী আসিফকে খুব মনে পড়ে আজকাল, কতটা আহ্লাদ ছিল তার মায়ের কাছে! সে মা, এত ছোট আসিফকে রেখেই চলে গেলেন চিরঘুম ঘরে। এত মিষ্টি একটা ছেলের মা নেই ভাবতেই খুব খারাপ লাগতো। একই ধারায় মাকে হারিয়েছে জার্মান প্রবাসী সবুজ ক্লাস সিক্সে। এরকম অনেকের গল্প আছে আমার স্কুল জীবনের বন্ধুদের। স্কুল একসময় আমাকে বোঝাতে শেখালো এটা আমার পরিবার। যে আমি ৫ম থেকে ৭ম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলে যেতে চাইতাম না সে আমিই ৮ম থেকে দশমে মাত্র তিন দিন কামাই করেছি বলে রেকর্ডে উল্লেখ আছে। মূর্তিমান আতংকের নামধারী শিক্ষাগুরুরা ধীরে ধীরে মনের জানালা খুলে দিতে লাগলেন, ভালোবাসতে লাগলাম স্কুলকে। শ্রদ্ধেয় রহিম স্যার, তাজুল ইসলাম স্যার, শাজাহান স্যার, নাসির স্যার, সুপর্ণা আপা,সুদিপ্তা আপা, রিক্তা আপা, ফেরদৌসী আপা ১,২, তাহেরা আপা, নাসিমা আপা,নাজমা আপা, শফিক স্যার,রোকসানা আপা, খায়রুল আনাম স্যার, হাসেম স্যার আর চিররসিক কাশেম স্যারসহ স্যাররা আমার স্বপ্নডানা উড়বার পথ দেখিয়ে দিয়েছিলেন। আমি আজকের দিনে তাদের প্রতি অন্তহীন কৃতজ্ঞতা জানাই।

ads

সেই ক্রিমবন, দুই টাকার সিংগারা, আর চানাচুর এখনো আমার স্বাদে লেগে আছে অমৃতের রুপে। শাসনকে ভালোবাসা ভেবেছি, আশির্বাদ জেনেছি। বেতের সে কালোদাগ স্বপ্নসিঁড়িতে যাবার পাঞ্জেরি ভেবেছি, হয়তো তাই আজ ভালো আছি।

ads

চিরচেনা ধর্মসাগরের সবুজ জলে ঢেলে দিয়েছি নিজের জীর্ণতা, বিদীর্ণ চিত্তে ঘুরে বেড়িয়েছি কুমিল্লা স্টেডিয়ামে আর ভরা বর্ষায় দলবেঁধে দাপিয়ে বেড়িয়েছি পুরা কুমিল্লা। গলায় গান আসতো কিন্তু অপমানিত আর অপদস্ত হবার ভয়ে তার বিকাশ হয়নি। তুহিনের সুরসুধা আমার শ্রোতা জীবনের সেরা প্রাপ্তি। ইংরেজির বালক সবুজের ইংরেজি আমাকে এ বেচারা ভাষার প্রতি একটা কাঁপন ধরিয়ে ছিল।
আমার শত ব্যাথা বেদনার আলস্য জ্ঞানের আধার কুমিল্লা জিলা স্কুলের আজ ১৮৩ তম জন্মদিন।

ভালো থাকুক আমার বিদ্যালয়, আমার শিক্ষাগুরুরা আমার বন্ধুরা।

মো. মহিবুবুল হক
সহকারী অধ্যাপক
ভাণ্ডারিয়া সরকারি কলেজ, পিরোজপুর।

ad

পাঠকের মতামত