9953

করোনাকালে মৃত্যুঝুঁকি

ডেস্ক নিউজ: গুরুতর অসুস্থ করোনা আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে রক্তবাহী নালীতে রক্ত জমাট বেঁধে গিয়েই বেশিরভাগ সমস্যা তৈরি হচ্ছে বলে বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়।দেখা যাচ্ছে, রক্তবাহী নালীতে রক্ত জমাট বেঁধেই ডেকে আনছে স্ট্রোক, হার্ট এ্যাটাক। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফুসফুস। বিকল হচ্ছে কিডনি। তাই করোনা রোগীদের শ্বাসকষ্ট হওয়া মাত্র রক্ত পরীক্ষা করে রক্ত তরল করার ওষুধ দেয়া হচ্ছে করোনা রোগীদের। গত কয়েক মাস যাবত বিশ্বের বিভিন্ন হাসপাতালের ভর্তি রোগীদের পরীক্ষা করে দেখা যায়, যে সব রোগী মস্তিষ্কের রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধার কারণে স্ট্রোকের শিকার হয়েছেন। তাদের অধিকাংশ করোনা সংক্রমিত ছিলেন।

উপরন্তু একাধিক অঙ্গ বিকলের জন্য অনেকাংশেই দায়ী থাকে জমাট বাঁধা রক্ত। সে কারণে করোনার উপসর্গ রয়েছে এমন রোগীদের কোনও শারীরিক অসুবিধা হলে শুরুতেই নির্দিষ্ট ওষুধ শুরু করে দেয়া উচিৎ (এন্টকোয়াগুলেন্ট)।করোনা মুক্ত হওয়ার পরেও চিকিৎসকের পরামর্শ মতো অন্তত: চার থেকে ছয় সপ্তাহ রক্তে জমাট বাঁধা প্রতিরোধে ওষুধ খেয়ে যাওয়া উচিৎ। দেশের প্রায় আশি শতাংশ করোনা সংক্রমিত রোগী উপসর্গবিহীন। বাকি বিশ শতাংশের মধ্যে যাদের দেহে জ্বর ও শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ দেখা দিয়েছে, দেরী না করে তাদের চিকিৎসা শুরু করা দরকার। করোনা আক্রান্ত রোগীদের শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ কমতে থাকলে শরীরের শিরা ধমনীর রক্তপ্রবাহে তার প্রভাব পড়ে।

ads

শরীরে অক্সিজেন কম নিয়ে যেসব করোনা রোগী হাসপাতালে আসছেন, তাদের মৃত্যু হচ্ছে সবচেয়ে বেশি।করোনা চিকিৎসায় অক্সিজেনের ভূমিকা অনেক বড়। রক্তে দ্রবীভূত অক্সিজেন থাকতে হবে ৯৪ শতাংশের বেশি। রক্তে অক্সিজেন কমে গেলে একাধিক অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে পড়ার আশংকা থাকে। রক্তে অক্সিজেন কমে গেলে অনেকে বুঝতে পারেন না, স্বাভাবিক চলাফেরা করতে থাকেন (যাকে বলে Happy Hypoxia)। তাই বিলম্বে যারা হাসপাতালের আসেন তারা মৃত্যু এড়াতে পারেন না। গুরুতর অসুস্থ রোগীদের দেহে সাইটোকাইন স্টর্ম পরিলক্ষিত হয়।সংক্রমণের বিরুদ্ধে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সক্রিয় হয়ে সাইটোকাইন নামে একটি রাসায়নিকের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। এতে শরীরে প্রদাহ হয়। প্রদাহ বেশি হলে রক্ত জমাট বাঁধে বেশি। জমাট রক্তের দলা রক্তবাহী নালীতে জমে হার্ট এ্যাটাকের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। জমাট রক্তের দলা ফুসফুসে পৌঁছে ব্যঘাত ঘটাত ফুসফুসের কার্যকলাপে। বিকল করে দেয় কিডনি। মস্তিষ্কে পৌঁছে ঘটাত স্ট্রোক। পরে কেউ কেউ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও রোগীদের অনেকেরই ফুসফুসে ক্ষতচিন্হ দেখা যায়। যে করোনা আক্রান্তরা নিউমোনিয়া বা প্রবল শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যায় ভূগে সেরে উঠেছেন তাদের ফুসফুসে এধরনের ক্ষত দেখা যায়। তাই নিয়মিত ওষুধ খাওয়ার বিকল্প কিছু নেই। মনে রাখতে হবে যাদের হ্রদরোগ, ডায়াবেটিস, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্টের রোগ, ক্যান্সার অথবা দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে ভূগছেন। তাদের অবশ্যই বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ করোনার এইকালে তাদের মৃত্যু ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।

ডা. মুজিবুর রহমান

ads
ad

পাঠকের মতামত