কুমিল্লা মেডিকেলে জনবল সংকটে কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছে না রোগীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক: কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪টি এক্স-রে, ৪টি আল্ট্রাসাউন্ড, ১টি সিটিস্ক্যান, ১টি এমআরআই মেশিনসহ পরীক্ষার নিরিক্ষার সকল যন্ত্রপাতি থাকা সত্ত্বেও জনবল সংকটের কারণে কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছেনা রোগীরা। ৫০০শয্যার হাসপাতালটিতে প্রতিদিন গড়ে রোগী থাকে হাজারেরও অধিক।
হাসপাতাল ঘুরে রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগ ও প্যাথলজি বিভাগ ঘুরে জানা যায়, রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগে ৪টা এক্সরে মেশিন রয়েছে তার মধ্যে ৩টি এক্স-রে মেশিন ভাল আছে এবং পরীক্ষা ভাল হয় একটিতে পরীক্ষা একটু ঝাপসা আসে। ৪টি আল্ট্রাসাউন্ড মেশিনের মধ্যে ৩টি সচল একটি অকেজো। নতুন একটি সিটিস্ক্যান মেশিন ও একটি এমআরআই মেশিন রয়েছে। এই বিভাগে প্রতিদিন প্রায় ৪শ থেকে ৫শ রোগীর সমাগম হয়। প্যাথলজি বিভাগে ক্যান্সার পরিক্ষা ও হরমোন পরীক্ষা ছাড়া বাকী সকল পরীক্ষা করা হয়। ২৪ঘন্টা ব্লাড ব্যাংক চালু থাকে। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে রোগীদের কাঙিখত সেবা দিতে পারছেনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে লোকবল প্রয়োজন ৩০জন সেখানে মাত্র ৪জন টেকনোলজিষ্ট রয়েছে। অত্র বিভাগের সহযোগী অধ্যাপকের পদটি দীর্ঘদিন খালি রয়েছে। এই বিভাগে ৮জন ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও রয়েছে ৬জন। সকল পরীক্ষার নিরিক্ষার রিপোর্ট একজনকেই দেখাশোনা করতে হয়।
এমআরআই বিভাগে রয়েছে টেকনোলজিষ্ট আল মামুন, তিনি জানান তাদের ডিপার্টমেন্টে ৬০জন লোকের দরকার কিন্তু ৬০জনের কাজ তারা ৪জনে করে। একজন মাত্র সহকারী আছে সেটিও আউটসোর্সিং থেকে আনা। সে কোন কাজ জানেনা না। এখানে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫টি পরীক্ষা করা যায়। দুই সিফট চালু থাকলে আরো কাজ করা যেত। জনবল সংকটের কারণে তা করতে পারছেন না।
এক্স-রে ডিপার্টমেন্টে কাজ করেন মাহবুবুল আলম সরকার জানান, তাদের সকল এক্সরে মেশিন চালু আছে। প্রতিদিন প্রায় শতাধিক এক্সরে করা যায়।
প্যাথলজি বিভাগে কাজ করেন টেকনোলজিষ্ট আব্দুস সালাম, তিনি জানান হাসপাতালে এখন সকল পরীক্ষা নিরিক্ষা হয়। শুধুমাত্র ক্যান্সার ও হরমোন পরীক্ষা ছাড়া সকল পরীক্ষা করা যায়। জনবল থাকলে তারা আরো পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে পারতেন। প্রতিদিন হাজারে মত রোগী আসে পরীক্ষা নিরিক্ষা করতে। সময়ের জন্য সকল রোগীদের পরীক্ষা নিরিক্ষা করা যায় না। তারপরও তারা ৬ঘন্টার ডিউটি ৮/১০ঘন্টা করে থাকেন।
রেডিওলজি ডিপার্টমেন্টের প্রধান অধ্যাপক ডা: মো: মোস্তফা কামাল আজাদ জানান, বয়স নির্ধারণ, এক্স-রে রিপোর্ট, আল্ট্রা-রিপোর্ট, সিটিস্ক্যান রিপোর্ট, এমআরআই রিপোর্ট সহ অন্যান্য সকল রিপোর্টগুলো তাকেই দেখতে হয়। এখানে প্রতিদিন প্রায় ৪শ/৫শ রোগীর সমাগম হয়। এই বিভাগে একজন ক্যাশিয়ার দরকার, একজন রিসিপশনিষ্ট দরকার, ১২জন টেকনোলজিষ্ট প্রয়োজন, ৮জন ডাক্তার প্রয়োজন কিন্তু এর সব গুলো নেই। জনবল প্রয়োজনের তুলনায় কম থাকায় রোগীকে কাঙ্খিত সেবা দিতে অনেকটা হিমশিম খেতে হয়। তারপরও তারা সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা: মো: ফরিদুল আলম জানান, জনবল সংকটের কারণে আমাদের সমস্যা হচ্ছে। হাসপাতালে যে জনবল আছে তাদেরকে প্রেসারাইজড করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। জনবল সংকটের কারণে জরুরী ভিত্তিতে এক্স-রে ও প্যাথলজি সার্ভিস চালু করতে পারছিনা। তাছাড়া ও আমাদের সকল ডাক্তার, নার্স ও কর্মকর্তা কর্মচারীরা নির্দিষ্ট সময়ের চেয়েও অতিরিক্ত সময় দিতে হয়। প্রতি মাসে আমরা জনবল সংকটের বিষয়টি নিয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে রিমাইন্ডার দিয়ে যাচ্ছি কিন্তু কোন প্রকার সদোত্তর পাচ্ছিনা।