1970

ত্রিপুরায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত স্থানে এমপি বাহার

নিজস্ব প্রতিবেদক: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ৩ বছরব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে মুক্তিযোদ্ধা একাডেমি ট্রাস্ট। এরই অংশ হিসেবে ৭১’র স্মৃতি বিজড়িত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনে ট্রাস্টের ৩৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ থেকে ত্রিপুরায়।

বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের  স্মৃতিবাহী স্থান পরিদর্শনে বের হয় এ প্রতিনিধি দল।

ads

শুরুতেই দলটি আগরতলা থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যায়। ১৯৭১ সালে এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প ছিল। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে প্রতিনিধি দলের সবাইকে সম্মাননা জানানো হয়।

এ সময় বাংলাদেশের পক্ষে কুমিল্লা সদরের সংসদ সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহারউদ্দিন বাহার, মুক্তিযুদ্ধ একাডেমি ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ড. আবুল কালাম আজাদ, সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার ও সংস্কৃতি বিষয়ক সচিব মো আজিজুর রহমান, শিল্পী বুলবুল মহলানবীশ, দিল্লিস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের সহকারী হাইকমিশনার রকিবুর রহমান, আগরতলার বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের সহকারী হাইকমিশনার কিরীটি চাকমা, বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজমুল হাসান পাখি, বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট রুস্তম আলী, সচিব মো. জাকির হোসেন ভূইয়া, কুমিল্লা জেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সফিউল আহমেদ বাবুল, মুক্তিযোদ্ধা ড. আনোয়ারা বেগম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ads

অন্যদিকে ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন- উপাচার্য্য অধ্যাপক ভি এল থারুরকর, কলা ও বাণিজ্য বিভাগের ডিন চন্দ্রিকা বসু মজুমদারসহ অন্য কর্মকর্তারা।

এসময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আর্কাইভে সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে মুক্তিযুদ্ধ ট্রাস্টের তরফে সে সময়কার স্মৃতি বিজড়িত বিভিন্ন ঘটনা, তথ্য ও দলিল সম্বলিত বই এবং তথ্যচিত্রের সিডি তুলে দেওয়া হয়।

পরে উভয় দেশের প্রতিনিধিরা বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ইতিহাসকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার কথা বলেন। এ জন্য দুই দেশের সরকারকে যেমন কাজ করতে হবে, তেমনি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে যারা জানেন তাদেরও বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে হবে বলে অভিমত প্রকাশ করেন বক্তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য্য ভি এল থারুরকর জানান, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে।

পরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে প্রতিনিধি দল সিপাহীজলা জেলার চড়িলাম এলাকায় মুক্তিযুদ্ধকালে সেক্টর কমান্ড্যান্ট ক্যাপ্টেন চ্যাটার্জির অধীনে থাকা গঙ্গা ও যমুনা ক্যাম্প পরিদর্শন করে। এসময় তারা  স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে ৭১’র বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন। এরপর প্রতিনিধি দল জেলার মেলাঘরে মুক্তিযুদ্ধ ক্যাম্প পরিদর্শনে যান।

এর আগে বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) আগরতলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সুচনা হয়।

এ সফরকে কেন্দ্র করে মুক্তিযোদ্ধা প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে আগরতলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। বক্তব্যের শুরুতে তিনি মুক্তিযুদ্ধে নিহত শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র বাহিনীর ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যদের শ্রদ্ধার সাথে স্বরণ করেন। এমপি বাহার বলেন, মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান বাংলাদেশ শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ রাখবে, মুক্তিযুদ্ধের সময় ত্রিপুরাবাসী বাংলাদেশ থেকে আসা শরনার্থীদের যে ভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেছে তা পৃথিবীর ইতিহাসে একটি বিরল ঘটনা। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের পক্ষে অকুন্ঠ সর্ম্থন ও সর্বাত্বক সহযোগিতার জন্য ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধির প্রতি গভীর শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন। যার সহযোগিতা না থাকলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ব্যহত হতো। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ ভারতের সাথে একজন প্রকৃত বন্ধু হিসেবে সব সময় পাশে থাকবে। মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে এরকম ঐতিহাসিক অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্যে ভারত সরকার, ত্রিপুরা রাজ্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ এবং কতৃজ্ঞতা জানান।
বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ একাডেমী ট্রাস্ট, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর, বাংলাদেশ সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রানালয় ও ত্রিপুরার আগরতলা বাংলাদেশের সহকারি হাই কমিশন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজমুল হাসান পাখি, বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট রুস্তম আলী, সাবেক তথ্য কমিশনার মো. আজিজুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধ একাডেমি ট্রাস্টের ট্রাস্টি ড. আবুল কালাম আজাদ ও কুমিল্লা জেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সফিউল আহমেদ বাবুল, আগরতলা বাংলাদেশ হাই কমিশনের প্রথম সচিব মো: জাকির হোসেন ভূইয়া, মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য সম্মাননা প্রাপ্ত শ্যামল চৌধুরী। পরে আমন্ত্রিত প্রতিনিধি দলের সদস্যরা সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের নেতৃত্বে সকল মুক্তিযোদ্ধারা আগরতলা কামান চৌমুহুনীতে অবস্থিত শহীদ বেধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং শহীদদের স্বরণে ১মিনিট নিরবতা পালন করেন। অনুষ্ঠানে আগরতলা বাংলাদেশ হাই কমিশনের কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

ad

পাঠকের মতামত