পদ্মা সেতু তৈরিতে মাথা লাগার গুজবে: কুমিল্লায় ছেলে ধরা ভেবে ৪ জনকে গণধোলাই
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার দুই স্থানে ছেলেধরা ভেবে ১ পুরুষ ও ৩ নারীসহ ৪ জনকে গণধোলাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ছালিয়াকান্দি ও জাহাপুর এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
কুমিল্লা সদরের দুর্গাপুর সংলগ্ন রংপুর গ্রামের মৃত আব্দুল মতিনের ছেলে রবিউল আউয়াল (৩৭) তার বন্ধুর সাথে দেখা করার জন্য বৃহস্পতিবার সিএনজি চালিত অটো রিকশা যোগে মুরাদনগর উপজেলার বাখরাবাদ গ্যাস ফিল্ডে যাচ্ছিল। সকাল অনুমান ১০টায় ছালিয়াকান্দি নামক স্থানে সিএনজি দাড় করিয়ে রাস্তার পাশে পশ্রাব করতে বসে। এ সময় এলাকার কয়েকজন তাকে ছেলে ধরা সন্দেহে আটক করে। অবস্থা বেগতিক দেখে চালক সিএনজি নিয়ে পালিয়ে যায়। তখন তাকে ছালিয়াকান্দি হাইস্কুলে নিয়ে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে আটকে রাখে। খবরটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে শত শত জনতা স্কুল মাঠে এসে ভীর করে। এর মধ্যে উত্তেজিত জনতা তাকে বের করে দেওয়ার জন্য স্কুলের দরজা-জানালা ভাংচুর ও ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে এবং তাকে রক্ষা করতে পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে থানার ওসি এ.কে.এম মনজুর আলমের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে উত্তেজিত জনতা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। পুলিশ সন্দেহাতিত রবিউল আউয়ালকে উদ্ধারপূর্বক থানায় নিয়ে আসার সময় উত্তেজিত জনতা পুলিশের গাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় তারা ইট-পাটকেল নিক্ষেপে ওসির গাড়ী ভাংচুর করে। এতে ৩ পুলিশ ও রবিউল আউয়ালসহ চারজন আহত হয়। আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন- আমির হোসেন, আবু রায়হান ও এনায়েত হোসাইন। তাদেরকে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে নাসিরনগর থেকে ৭জন সাওতাল নারী জাহাপুর রথের মেলায় চুড়ি বিক্রয় করতে আসলে স্থানীয়রা ছেলেধরা মনে করে স্বপ্না, রাবেয়া ও পারুলকে ব্যাপক মারধর করে।
খবর পেয়ে মুরাদনগর থানার পুলিশ তাদেরকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। এ বিষয়ে মুরাদনগর থানা ওসি একেএম মনজুর আলম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, যারা গুজবে কান দিয়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে রবিউল ও পুলিশ বাদি হয়ে ২টি মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।
উল্লেখ্য মঙ্গলবার এক বিজ্ঞপ্তিতে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প পরিচালক মো.শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণকাজ পরিচালনায় মানুষের মাথা লাগবে বলে একটি কুচক্রী মহল বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে অপপ্রচার চালাচ্ছে তা প্রকল্প কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, এটি একটি গুজব। এর কোনো সত্যতা নেই। এমন অপপ্রচার আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এ ধরনের গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য দেশবাসীকে অনুরোধ করা যাচ্ছে।’
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। মূল সেতুর ২৯৪টি পাইলের মধ্যে ২৯২টি বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। ৪২টি পিয়ারের মধ্যে ইতিমধ্যে ৩০টি পিয়ারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ পর্যন্ত ১৪টি স্প্যান স্থাপন করা হয়েছে, যা এখন দৃশ্যমান। ৩০ জুন ২০১৯ পর্যন্ত মূল সেতুর বাস্তব কাজের অগ্রগতি ৮১ শতাংশ, নদীশাসন কাজের অগ্রগতি ৫৯ শতাংশ এবং প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৭১ শতাংশ।