পুকুরের কচুরিপানা পরিষ্কারে ২ দিনের সময় বেঁধে দিল মেয়র সাক্কু
এক সময় বাংলাদেশে ছিল পুকুর ভরা মাছ আর গোয়াল ভরা গরু। বলা হত মাছে ভাতে বাঙ্গালি। কুমিল্লাকে বলা হত ব্যাংক আর ট্যাংকের শহর। এক সময় কুমিল্লাতে ছিল অসংখ্য দীঘি আর পুকুর। কিন্তু বর্তমানে ভরাট করতে করতে আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে দিঘীর সংখ্যা ।
যে কয়টি দীঘি এবং পুকুর টিকে আছে সেগুলোও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। দেখলে মনে হবে হাজা মাজা পুকুর বা দিঘী। তেমনই একটি পুকুর কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন এর ১৭নং ওয়ার্ডে অবস্থিত হাতির পুকুর।
বর্তমানে এই পুকুরের পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কারণ পুকুরটি বর্তমানে কচুরিপানায় ভরে গেছ। নষ্ট হয়ে গেছে পানি। পানি পরিষ্কার রাখার জন্য বহুদিন চুন দেওয়া হয় না । পানি হয়ে গেছে কালো বর্ণ। ২ বছর যাবত পুকুরটিতে হয় না মাছ চাষ। চর্তুপাশে ফেলা হচ্ছে ময়লা আর্বজনা। ফলে দূষিত হয়ে গেছে পানি। কচুরিপানার কারণে মশা-মাছির উপদ্রুব বৃদ্ধিসহ পরিবেশ দূষণসহ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে বিভিন্ন স্থানে মশাবাহিদ ডেঙ্গু চিকুনগুনিয়া ভাইরাসজনিত জ¦র বেশ হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
এই এলাকার কয়েক হাজার মানুষের সৃষ্টি হয়েছে দুর্ভোগ। পানির অভাবে গোসল করা, থালা বাসন ধোঁয়া, কাপড় চোপড় কাঁচাসহ নিত্য নৈমত্যিক কাজে সমস্যা হচ্ছে।
এলাকার মানুষ কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন এর মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বরাবর দরখাস্ত প্রদান করেছে গত ১৯ জুন ২০১৯খ্রি.যাতে পুকুরটি সংস্কারের দাবীতে। মেয়র দিঘীটির মালিক মো. জয়নাল আবেদীন, মো. জলিল মিয়া ও এডভোকেট আলী আমজাদকে লিখিতভাবে নির্দেশনা প্রদান করেছেন পুকুরটি কচুরিপাানা পরিস্কার করার জন্য। অন্যথায় সিটি কর্পোরেশন ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে। নোটিশ পাবার ২ দিনে মধ্যে পুকুরটি পরিষ্কার করতে হবে।
উল্লেখ্য আজ থেকে প্রায় ১৫০ বছর আগে ত্রিপুরার রাজা বীর বিক্রম বাহাদুর এই অঞ্চলের মানুষের পানির অভাব দূর করার জন্য পুকুরটি খনন করেন। কথিত আছে রাজা এক সময় বর্তমান ভারতের ত্রিপুরা থেকে রথ যাত্রায় আসতেন হাতি নিয়ে। হাতির পুকুরের পূর্ব পাশে একটি বাঁশঝাড় ছিল, সেখানে রাজা তার হাতি গুলো বেঁধে রাখতো। বাঁশঝাড়ের সামনেই ছিল অসংখ্য কলাগাছ সেগুলো হাতিকে খেতে দিত। পুকুরটির পূর্ব পাশেই ছিল রাজার বিশ্রামাগার। রাজা এখানে এসে দেখতে পেলেন জনগণের পানির বেশ সমস্যা। তিনি জনগণের পানির সংকট নিরসনের জন্য প্রায় ২০০ শতক জায়গার উপর খনন করলেন হাতিরপুকুরটি। পুকুরের পাশে হাতি বেঁধে রাখা হত বলে এই পুকুরের নাম হয়ে যায় হাতির পুকুর। সেই থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত এর নাম হাতির পুকুরই রয়ে গেছে।
পৌরসভা থাকাকালীন এই পুকুরটিতে রিটার্নিং ওয়াল ও ৬টি ঘাটলা তৈরি করা হয়েছিল কিন্তু এরপর আর কোন উন্নয়ন হয়নি।