42545

চলতি দশকেই বিশ্ববাজারে ক্যানসারের ভ্যাকসিন

স্বাস্থ্য ডেস্ক: মরণব্যাধী ক্যানসার প্রতিরোধে আশার কথা শুনিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ফার্মাসিউটিক্যাল ফার্ম মডার্নার একদল গবেষক। ক্যানসারের কার্যকরী ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা। তারা আশা করছেন ২০৩০ সালের মধ্যেই তাদের উদ্ভাবিত ভ্যাকসিন মানুষের দেহে প্রয়োগের জন্য প্রস্তুত হবে।

দীর্ঘদিন এই ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করা গবেষকরা জানান, তাদের এই প্রচেষ্টায় এখন পর্যন্ত বেশ ভালো সাফল্য লক্ষ্য করা গেছে। গবেষকদের কয়েকজন বলছেন, গত প্রায় ১৫ বছর ধরে তারা নিরলসভাবে কাজ করছেন। যদিও তাদের কাজে বড় ধরনের সফলতা আসে গত দেড় বছরে। কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করার সময় এই ভ্যাকসিন তৈরির কাজে গতি বৃদ্ধি পায় বলেও জানান গবেষকরা।

ads

ভ্যাকসিন সম্পর্কে মডার্নার প্রধান মেডিকেল অফিসার ডা. পল বার্টন বলেন, ‘আশা করছি আগামী ৫ বছরের মধ্যে করোনার ভ্যাকসিনের মতো ক্যানসারসহ সব ধরনের রোগের চিকিৎসা মানুষকে দিতে পারব।’

প্রসঙ্গত, বিশ্বে করোনা ভাইরাসের যতগুলো কার্যকরী ভ্যাকসিন বাজারে এসেছে, তার মধ্যে মডার্নার তৈরি ভ্যাকসিন শীর্ষে অবস্থান করছে। বর্তমানে নতুন করে ক্যানসারের বিভিন্ন ধরনের ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

ads

ডা. পল বার্টন আরও বলেন, ‘আমাদের কাছে থাকা এ ভ্যাকসিন খুবই কার্যকরী হবে। কয়েক কোটি মানুষের জীবন রক্ষা না করলেও কয়েক লাখ মানুষের জীবন রক্ষা করবে এই ভ্যাকসিন। আমরা মনে করি, বিশ্বময় ক্যানসারের বিভিন্ন ধরনের ভ্যাকসিন আমরা দিতে পারব।’

কীভাবে ক্যানসারের বিরুদ্ধে নতুন এই ভ্যাকসিন কাজ করবে? এ প্রসঙ্গে পল বার্টন জানান, ক্যানসারের ভ্যাকসিন শরীরের ভেতর যে ক্যানসার কোষ বৃদ্ধি পাচ্ছে সেটি নির্ণয় করে ইমিউন সিস্টেমকে সতর্ক করে দেবে। তারপর এই ভ্যাকসিন ক্যানসারের কোষগুলোর ওপর হামলা চালাবে এবং সেগুলো ধ্বংস করবে। শরীরের ভালো কোষগুলোর এতে কোনো ক্ষতি হবে না।

এছাড়া এটি ক্যানসার কোষগুলোর ওপর প্রোটিনের যে খণ্ড থাকে সেগুলো খুঁজে বের করবে, ইমিউন সিস্টেম সচল করবে এবং এরপর এম-আরএনএ-এর টুকরো তৈরি করবে যেটি শরীরকে নির্দেশনা দিবে কীভাবে এ প্রোটিন উৎপন্ন করতে হয়।

প্রথমত, ডাক্তাররা রোগীর ক্যানসার টিউমারের বায়োপসি করবেন এবং এটি ল্যাবে পাঠাবেন। এরপর ল্যাবে এর জেনেটিক মিউটিশন খুঁজে বের করা হবে। এরপর অ্যালগরিদম খুঁজে বের করবে কোন মিউটিশনটি শরীরে ক্যানসার বৃদ্ধি করে। পাশাপাশি এটি খুঁজে বের করবে কোন প্রোটিন ইমিউন সিস্টেম সচল করতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখবে। এরপর সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করে সবচেয়ে কার্যকরী এন্টিজেন তৈরি করা হবে এবং বিশেষ ভ্যাকসিন প্রস্তুত করা হবে।

ডাক্তার বার্টন আরও জানান, আগে তাদের ধারণা ছিল এম-আরএনএ প্রযুক্তি ব্যবহার করে শুধু সংক্রমণজনিত রোগগুলোর চিকিৎসা করা যায়। কিন্তু এখন দেখা গেছে এটি ক্যানসার, হার্টের রোগ, অটোইমিউন সমস্যা এবং বিরল রোগের চিকিৎসায়ও দারুণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম।

‘আমি মনে করি যেসব রোগের ওষুধ এখনো আবিষ্কার হয়নি, সেসব রোগ সারিয়ে তুলতে আমাদের কাছে এম-আরএনএ ভিত্তিক থেরাপি থাকবে। এখন থেকে ১০ বছর পর, আমরা এমন একটি অবস্থানে পৌঁছাব, যে সময় সত্যিকার অর্থে রোগের জেনেটিক কারণ খুঁজে বের করতে পারব এবং এম-আরএনএ ভিত্তিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেটি সারিয়ে তুলতেও পারব।’

তবে বর্তমানে যে গতিতে এ কার্যক্রম এগিয়ে চলছে, এটি ধরে রাখতে বিনিয়োগের পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে। পর্যাপ্ত বিনিয়োগ না পেলে পুরো বিষয়টিই বৃথা হয়ে যাবে বলেও মনে করেন ডা. বার্টন।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

ad

পাঠকের মতামত