41124

লাল উৎসব থামিয়ে রিয়ালের রোমাঞ্চকর জয়

স্পোর্টস ডেস্ক: উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে শেষ কবে হেরেছিল রিয়াল মাদ্রিদ? সেটা খুঁজতে ধুলো জমা ফাইল ঘাটতে হবে নিশ্চয়ই। ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় হারতে ভুলে যাওয়া রিয়াল মাদ্রিদ আরও একবার তাদের প্রমাণ করলো। চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোর প্রথম লেগে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে অ্যানফিল্ডে লিভারপুলের বিপক্ষে ১৪ মিনিটেই ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়েছিল তারা। এরপর লাল উৎসব থামিয়ে ২-৫ ব্যবধানের রোমাঞ্চকর এক জয় তুলে নিয়েছে। এই জয়ে শেষ আটে এক পা দিয়ে রেখেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। কারণ, ফিরতি লেগ যে হবে তাদের ঘরের মাঠে।

ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি মিনিটে ছিল রোমাঞ্চ আর লড়াইয়ের আবহ। ম্যাচের চতুর্থ মিনিটেই ঘরের মাঠে দর্শকদের লাল উৎসবে মাতার উপলক্ষ্য এনে দেয় লিভারপুল। এ সময় ডানদিক দিয়ে আক্রমণে ওঠেন মোহাম্মদ সালাহ। বক্সের বাইরে থেকে তার নেওয়া ডিফেন্স চেড়া পাস পেনাল্টি বক্সের মধ্যে পেয়ে যান ডারউইন নুনেজ। তিনি ব্যাকহিলে থিবাউট কোর্তোয়াকে পরাস্ত করে জালে পাঠান।

ads

এর ১০ মিনিট পর কোর্তোয়ার ভুলে ব্যবধান ২-০ করে ফেলেন মোহাম্মদ সালাহ। ১৪ মিনিটের মাথায় লিভারপুলের কোডি গাকপোর কাছ থেকে বল নিয়ে কোর্তোয়ার কাছে পাঠান দানি কারবাহাল। কোর্তোয়া সেটা নিয়ে কারিকুরি করতে গেলে বল তার হাঁটুতে লেগে সামনে চলে যায়। সেটা তিনি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার আগেই সালাহ নিয়ে নেন নিয়ন্ত্রণে। এরপর আলতো টোকায় জালে পাঠান।

১৪ মিনিটেই ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়া রিয়াল মাদ্রিদ এই ম্যাচে ফিরতে পারবে সেটার পক্ষে বাজি ধরার লোক কমই ছিল। কিন্তু ভিনিসিউস জুনিয়র, করিম বেনজেমা, এদার মিলিতাও ও লুকা মদ্রিচরা যা করলেন তাতে ম্যাচ জেতার পাশাপাশি ফুটবল ভক্তদের হৃদয়ও জিতে নিয়েছেন। বাহবা কুড়িয়েছেন।

ads

২১ মিনিটের মাথায় একটি গোল শোধ দেয় রিয়াল। এ সময় বামদিক থেকে ডি বক্সের মধ্যে ভিনিসিউসকে বল দেন করিম বেনজেমা। ভিনিসিউস সেখান থেকে লিভারপুলের রক্ষণভাগের তিনজন খেলোয়াড়কে পরাস্ত করে দূরের পোস্টে শট নেন। বল এলিসন বেকারের নাগালের বাইরে দিয়ে জালে আশ্রয় নেয়।

কোর্তোয়ার মতো ৩৬ মিনিটে ভুল করে বসেন এলিসনও। আর সেই ভুলের সুযোগ কাজে লাগিয়ে গোল করে সমতা ফেরান ভিনিসিউস। এ সময় নিজেদের অর্ধ থেকে ভিনিসিউসকে লক্ষ্য করে লম্বা পাসে বল বাড়ান রিয়ালের ফেদেরিকো ভালভার্দে। ভিনিসিউস অবশ্য বলের নাগাল পাননি। সেটা দখলে নেন লিভারপুলের জো গোমেজ। তিনি বাড়িয়ে দেন এলিসনের কাছে। এলিসন সেটা আবার দিতে চাচ্ছিলেন গোমেজের কাছে। কিন্তু ভিনিসিউস বলের পথরোধ করেন। বল তার পায়ে লেগে উপরে উঠে গোললাইন অতিক্রম করে ভেতরে প্রবেশ করে। তাতে ২-২ গোলের সমতা নিয়ে শেষ হয় প্রথমার্ধের লড়াই।

বিরতির পর ৪৭ মিনিটেই লিড নেয় রিয়াল। এ সময় বামদিকে ফ্রি কিক পায় আনচেলোত্তির শিষ্যরা। ফ্রি কিক থেকে লুকা মদ্রিচের উড়িয়ে মারা বলে পেছন থেকে দৌড়ে এসে হেড নিয়ে জালে পাঠান এদার মিলিতাও।

ভিনিসিউস আলো ছড়ালেন, লুকা মদ্রিচ ও এদার মিলিতাও নিজেদের আলোয় আনলেন। বাকি ছিলেন কেবল করিম বেনজেমা। এরপর মাঠে উপস্থিত ৫২ হাজার ৩৩৭ জন দর্শক বেনজেমা শো দেখেন। ৫৫ মিনিটে ডি বক্সের ডানকোণা রদ্রিগো প্রথমে বল দেন বেনজেমাকে। এরপর বেনজেমা আবার দেন বক্সের মধ্যে ঢুকে যাওয়া রদ্রিগোকে। রদ্রিগো আবার দেন বেনজেমাকে। এরপর বেনজেমা শট নেন। বল লিভারপুলের জো গোমেজের গায়ে লেগে জালে জড়ায়। তাতে ব্যবধান হয়ে যায় ২-৪!

৬৭ মিনিটে লুকা মদ্রিচের দারুণ প্রচেষ্টা আর ভিনিসিউসের অ্যাসিস্টে অসাধারণ এক গোল করে রিয়ালের ২-৫ ব্যবধানের জয় নিশ্চিত করেন বেনজেমা। এ সময় রিয়ালের ডি বক্সের সামনে সতীর্থের কাছ থেকে বল পেয়েছিলেন লিভারপুলের ফাবিনহো। তার কাছ থেকে মদ্রিচ বল ছিনিয়ে নিয়ে মাঝমাঠ থেকে একটু সামনে এগিয়ে বাড়িয়ে দেন ভিনিসিউসকে। ব্রাজিলিয়ান এই ফরোয়ার্ড বল দেন ডানদিকে থাকা বেনজেমাকে।

তাকে বল পেতে দেখেই গোলপোস্ট ছেড়ে সামনে চলে আসেন এলিসন বেকার। তাকে ঠাণ্ডা মাথায় ফাঁকি দিয়ে কিছুটা বামদিকে সরে গিয়ে সামনে থাকা তিনজন রক্ষণভাগের খেলোয়াড়কে পরাস্ত করে বাম পায়ের শটে পোস্টের উপরের অংশ দিয়ে বল জালে পাঠান ফঁরাসি এই স্ট্রাইকার। তাতে অ্যানফিল্ডে লাল উৎসব থামিয়ে সাদার জয়গান রচনা করেন ভিনিসিউস, বেনজেমা, মিলিতাওরা।

ad

পাঠকের মতামত