23925

কুমিল্লার চিকিৎসক দম্পতি পেলেন কোভিড ১৯ হিরো অ্যাওয়ার্ড

নিউজ ডেস্ক: অধ্যাপক ডা. তৃপ্তীশ চন্দ্র ঘোষ রোটারি ইন্টান্যাশনাল প্রদত্ত “কোভিড-১৯ হিরো” অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছেন। বাংলাদেশে করোনা মহামারীর এই ভয়াবহ পরিস্থিতির সময় নিরবচ্ছিন্ন স্বাস্থসেবা প্রদানসহ বিভিন্ন সামাজিক ও মানবিক কর্মকান্ডের স্বীকৃতি স্বরূপ পৃথিবীর সর্ববৃহৎ আন্তর্জাতিক সেবামূলক সংগঠন রোটারি ইন্টারন্যাশনাল এর পক্ষ থেকে অধ্যাপক ডা. তৃপ্তীশ চন্দ্র ঘোষকে এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।

ডাঃ তৃপ্তীশ চন্দ্র ঘোষ একজন কার্ডিওলজির অধ্যাপক এবং ময়নামতি মেডিকেল কলেজ, কুমিল্লা’র সাবেক অধ্যক্ষ। তিনি ১৯৯৩ সাল থেকে কুমিল্লা সিডিপ্যাথ এন্ড হসপিটালে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। গত ১৮ জুন ঢাকায় হোটেল সেরিনায় অনুষ্ঠিত রোটারি ইন্টারন্যাশনালের রিজিওনাল পাবলিক ইমেজ কনফারেন্সে আনুষ্ঠানিকভাবে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। অ্যাওয়ার্ড তুলে দেন রোটারি ইন্টারন্যাশনালের রিজিওনাল পাবলিক ইমেজ কো-অরডিনেটর পিডিজি স্যামশওকত হোসেন।

ads

উল্লেখ্য অধ্যাপক ডা. তৃপ্তীশ চন্দ্র ঘোষ গত এক বছরেরও বেশী সময়কাল ধরে দেশে করোনা মহামারীর প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় নিজের ব্যক্তিগত চেম্বার খোলা রেখে সরাসরি রোগীদের চিকিৎসা সেবাকার্যক্রম অব্যহত রেখেছেন। পাশাপশি বিভিন্ন দেশী-বিদেশী টিভি চ্যানেলে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোভিড-১৯ সম্পর্কে সচেতনতামূলক আলোচনা ও টকশো করার মাধ্যমে তিনি জনগনকে সচেতন করার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। এই সময়কালে তিনি ‘করোনাকালে হৃদরোগ’ নামে একটি বই রচনা ও প্রকাশ করেছেন এবং এটি পাঠক মহলে ব্যপক সমাদৃত হয়। এই বইয়ে করোনা ভাইরাস, এর প্রতিরোধ, চিকিৎসাএবং রোগ পরবর্তী বিভিন্ন জটিলতা ও করোনায় মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেয়া হয়েছে।

ads

এছাড়াও তিনি ‘রোটারি ইন্টান্যশনাল – ব্যক্তি থেকে বিশ্ব’ নামে বাংলায় রোটারি সম্পর্কে প্রথম একটি পূর্ণাঙ্গ তথ্য বহুল বই রচনা ও প্রকাশ করেছেন এবং এই বই বিক্রি করে একলক্ষ টাকা রোটারি ইন্টারন্যশনাল জেলা-৩২৮২ এর কোভিড দূর্যোগ তহবিলে দান করেন। তিনি রোটারি ক্লাব অব কুমিল্লার উদ্যেগে কোভিড রোগীদের সাহায্যার্থে ‘রোটারি অক্সিজেন ব্যাংক’ গঠনেও উদ্যোগী ভুমিকা পালণ করেন।

তিনি হৃদরোগ প্রতিরোধ, চিকিৎসা, পুণর্বাসন ও গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান – হার্ট কেয়ার ফাউন্ডেশন, কুমিল্লা, বাংলাদেশ -এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি। যার মাধ্যমে তিনি হৃদরোগ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরীর পাশাপাশি কয়েক হাজার দুস্থ: জনগোষ্ঠীকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি সদর উপজেলা প্রতিবন্ধী উন্নয়ন পরিষদ, কুমিল্লা’র সভাপতি।

তিনি এ অঞ্চলের কয়েকশ প্রতিবন্ধী পরিবারকে এইসময় কালে একাধিকবার খাদ্য সহায়তা, সেলাই মেশিন, হুইল চেয়ার, হাঁস-মুড়গী, গরু-ছাগল ইত্যাদি প্রদানের মাধ্যমে তাদেরকে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তুলতে সর্বত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

অধ্যাপক ডাঃ তৃপ্তীশ চন্দ্র ঘোষ কমিউনিটি পুলিশিং বাংলাদেশ, কুমিল্লা জেলা শাখার কোষাধ্যক্ষ এবং কুমিল্লা জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সদস্য৷ এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও পেশাজীবি সংগঠনের সাথে জড়িত রয়েছেন।

তিনি টাংগাইল জেলার নাগরপুরে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করে ১৯৯২ সালে কার্ডিওলজিতে পিএইচ.ডি ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল থেকে কার্ডিওলজিতে স্নাতকোত্তর এমডি ডিগ্রী সমমান প্রদান করেন। তিনি ২০০৫ সালে আমেরিকান কলেজ অব কার্ডিওলজি এবং ২০০৭ সালে রয়েল কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অব এডিনবার্গ থেকে ফেলোশীপ ডিগ্রী অর্জন করেছেন। এ ছাড়াও হৃদরোগ চিকিৎসা ও গবেষণায় বিশেষ অবদানের জন্য ইউরোপিয়ান সোসাইটি অব কার্ডিওলজি ২০০৬ সালে তাকে সম্মান সূচক ফেলোশিপ প্রদান করেন। তিনি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ আর্ন্তজাতিক সেবামূলক সংগঠন রোটারি ইন্টারন্যাশনাল এর হয়ে দীর্ঘদিন যাবত সেবামূলক কাজের সাথে জড়িত। তিনি ২০০৭-০৮ রোটাবর্ষে কুমিল্লা রোটারি ক্লাব-এর প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এছাড়াও তিনি রোটারি ইন্টারন্যাশনাল ডিষ্ট্রিক্ট-৩২৮০ -এর এসিস্ট্যান্ট গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে রোটারি ইন্টারন্যাশনাল ডিষ্ট্রিক্ট-৩২৮২ -এর এডিশনাল ডিষ্ট্রিক্ট ট্রেইনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

অধ্যাপক ডা. তৃপ্তীশ চন্দ্র ঘোষ -এর জন্মস্থান টাঙ্গাইল হলেও বর্তমানে তিনি কুমিল্লায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। তাঁর স্ত্রী ডা. মল্লিকা বিশ্বাস একজন সনোলোজিষ্ট এবং কোভিড সম্মূখসারির যোদ্ধা।

তিনিও এই ‘কোভিড-১৯ হিরো’ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছেন। তাদের দুই কণ্যা – ডাঃ মেধা ঘোষ ও নেহা ঘোষ এবং এক পুত্রসন্তান দিগি¦জয় ঘোষ রোহন -এর জনক।

ad

পাঠকের মতামত