23818

পুঁজিবাজারে খুবই ভালো ভবিষ্যৎ দেখছি : সালমান এফ রহমান

ডেস্ক নিউজ: দেশের পুঁজিবাজার যেভাবে এগোচ্ছে তাতে সামনে খুবই ভালো ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।

শনিবার বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) ও ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) আয়োজিত ‘বাজেট পরবর্তী আলোচনা ও শেয়ারবাজারের উন্নয়নের পথ’ শীর্ষক অনলাইন সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সেমিনারে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে অপদর্শিত বা কালো টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়ার দাবি জানানো হয়।

ads

সালমান এফ রহমান বলেন, ‘গত এক বছরে বিএসইসি নতুন চেয়ারম্যান ও কমিশনার পাওয়ার পর পুঁজিবাজারে আমরা নতুন ধরন দেখতে পাচ্ছি। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে এসেছে। দৈনিক লেনদেন অনেক বেড়েছে। বাজার মূলধনও বেড়েছে। তাছাড়া কিছুদিন আগে এইচএসবি ব্যাংক তাদের এক রিপোর্টে বলেছে, বাংলাদেশের পুঁজিবাজার বিশ্বের মধ্যে সব থেকে ভালো পারফরমেন্স করেছে।’

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি আমাদের মার্কেটে এখন অনেক সুযোগ আছে। নতুন নতুন অনেক ইন্সট্রুমেন্ট নিয়ে আসা হচ্ছে। বাজার স্থিতিশীল করার জন্য বিএসইসি অনেকগুলো সুন্দর পদক্ষেপ নিয়েছে। যখন যেটা প্রয়োজন, ঠিক সেসময় সিদ্ধান্তগুলো নেয়া হচ্ছে। আমি দেখলাম কোম্পানিগুলোর লোয়ার একটা ক্যাপ (ফ্লোর প্রাইস) ছিল, সেটা তুলে দেয়া হয়েছে। আমরা যেভাবে এগোচ্ছি, তাতে পুঁজিবাজারে খুবই ভালো ভবিষ্যৎ আমি দেখছি।’

ads

তিনি বলেন, ‘শেয়ারবাজার ভালো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্টেকহোল্ডারদের দায়িত্ব বাড়বে। এ ক্ষেত্রে দেশের উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের ম্যানেজমেন্টের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এ ছাড়া বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর শেয়ারবাজার যেভাবে পরিচালিত হয় এবং সেখানে যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা আছে, সেগুলো আমাদেরও চালু করতে হবে ‘

প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা বলেন, ‘আজকে বাজেট সম্পর্কে যেসব কথা বলা হয়েছে এবং যা যা দাবি করা হয়েছে আমি মনে করি সবগুলোর পেছনে যুক্তি আছে। এ মাসের ৩০ তারিখ বাজেট পাস হবে। তার আগে কিছু কিছু সংশোধন আনা হবে। আপনারা যে দাবিগুলো তুলেছেন, দেখা যাক এই সময়ের মধ্যে আমরা সংশোধনগুলো আনতে পারবো কি-না। আমরা চেষ্টা করবো।’

সালমান এফ রহমান বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতিতে একটি বেসিক স্ট্রাকচারাল কন্ট্রাডিকশন রয়ে গেছে। যেটা হচ্ছে আমাদের ট্যাক্স টু জিডিপি রেশিও অনেক কম। সাউথ এশিয়ার মধ্যে সব থেকে কম। আমাদের ট্যাক্স টু জিডিপি পাকিস্তানের থেকেও কম। এবার এটা ১০ শতাংশের নিচে চলে এসেছে ‘

তিনি আরও বলেন, প্রত্যেক বাজেটেই একটা ব্যালেন্স করা হয়। একদিকে রেভিনিউ কনসিডারেশন, আর একটা দিকে অর্থনীতি ভালো করার জন্য আরও কী কী করা দরকার। এই ব্যালেন্সিংয়ের জন্যই হয়তো আপনাদের দাবি এবার এনবিআর (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) পূরণ করতে পারেনি। তারপরও আপনারা আজকে যে কিছু কিছু দাবি দিয়েছেন, তা যদি বাজাটে ইনকর্পোরেট করা যায় তাহলে পুঁজিবাজার আরও ভালো হবে।’

সিএমজেএফ সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেনের সঞ্চলনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম, কমিশনার ড. শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মো. ইউনুসুর রহমান ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম।

এ ছাড়া আলোচক হিসেবে ছিলেন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি শরিফ আনোয়ার হোসাইন ও এএমসি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ড. হাসান ইমাম। অনুষ্ঠানে আয়োজকদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন বিএমবিএ সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান ও সিএমজেএফ সভাপতি হাসান ইমাম রুবেল।

এসময় বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘অপ্রদর্শিত অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়ার দাবি আমরা আগেই জানিয়েছি। যাতে তারা (যাদের কাছে অপ্রদর্শিত অর্থ আছে) সেটা (অপ্রদর্শিত অর্থ) লিগ্যাল ফর্মে (বৈধ পদ্ধতিতে) নিয়ে আসতে পারেন, সে সুযোগটি রাখার জন্য।’

তিনি বলেন, ‘বন্ডগুলো নিয়ে আমরা কিছু প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছি। আশা করবো বন্ড এবং সুকুক নিয়ে আমাদের যে পরিকল্পনা আছে, তা ফিসক্যাল পলিসির মাধ্যমে সামনে এগিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সাহায্য-সহযোগিতা করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকার তালিকাভুক্ত কোম্পানির ট্যাক্স আড়াই শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরও কমানো হবে বলে আমরা আশা করতে পারি। সবমিলিয়ে এবারের বাজেট ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ বাজেট।’

বিএসইসির কমিশনার ড. শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা গত ২০ বছর ধরে যে শেয়ারবাজার দেখে আসছি, সেখানে পরিবর্তন আনা দরকার। এজন্য নতুন প্রোডাক্ট আনা ও স্ট্র্যাটেজি নিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘বাজেটে শেয়ারবাজারের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলা আছে। যেখানে ইক্যুইটি মার্কেটের বাইরে গিয়ে নতুন প্রোডাক্ট চালু করার কথা বলা হয়েছে। আমাদেরকে ইক্যুইটি মার্কেটের বেইরে গিয়ে বিবর্তন আনতে হবে। এ লক্ষ্যে কমিশন কাজ করছে। আমরা এখন মিউনিসিপাল বন্ড নিয়ে কাজ করছি। এ ছাড়া সরকারি সিকিউরিটিজ আনার জন্য গভীরভাবে চেষ্টা করছি। আশা করছি দ্রুত এটা সম্ভব হবে ‘

বিএমবিএ সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান বলেন, ‘তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার কমানো হয়েছে। এটা ভালো সিদ্ধান্ত। ফলে কোম্পানির লভ্যাংশ প্রদানের সক্ষমতা বাড়বে। এর বাইরে বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য অন্যান্য প্রত্যাশিত বিষয়াদি বিবেচনায় নেয়া হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘তালিকাভুক্ত কোম্পানির পাশাপাশি অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার আড়াই শতাংশ কমানো হয়েছে। এর মাধ্যমে উভয় ক্ষেত্রের মধ্যে করহারের ব্যবধান সাড়ে ৭ শতাংশ। কিন্তু একটি তালিকাভুক্ত কোম্পানির বিভিন্ন নিয়ম-কানুন মেনে চলার কারণে ব্যয় অনেক বেশি হয়। যে কারণে ভালো মুনাফা করা বৃহৎ কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হতে চাইবে না। এ সমস্যা কাটিয়ে তুলতে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার ব্যবধান ১৫ শতাংশ করা উচিত।’

ad

পাঠকের মতামত