22996

রোহিঙ্গাদের জন্য কক্সবাজার ক্যাম্পের চেয়ে ভাসান চর অনেক ভাল শিবির : ইউএনএইচসিআর

নিউজ ডেস্ক: ইউএনএইচসিআর এর উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা আজ স্বীকার করেছেন যে- বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের জন্য কক্সবাজারের চেয়ে ভাসান চর অনেক ভাল রোহিঙ্গা শিবির। বাংলাদেশের যে স্থানেই থাককু, তারা তাদের অঙ্গীকার অনুযায়ী শরণার্থীদের সহায়তায় কাজ করে যাবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।

ইউএন অ্যাসিস্টেন্ট হাউ কমিশনার ফর রিফিউজি (প্রোটেকশন) রউফ মাজাও বলেন, ‘(কক্সবাজার ক্যাম্পের চেয়ে) ভাষান চর (রোহিঙ্গা ক্যাম্প) অনেক ভাল।’

ads

মাজাও ও অ্যাসিস্ট্যান্ট হাই কমিশনার ফর অপারেশনস গিলিয়ান ট্রিগস এর সমন্বয়ে জেনেভায় ইউএনএইচসিআর এর দুই সদস্য বাংলাদেশের পররাষ্ট্রন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সাথে রাজধানীতে রাষ্ট্রীয় অতিথিশালা পদ্মায় এক বৈঠকের পর গণমাধ্যমের সাথে কথা বলেন।

মাজাও বলেন, ‘এখন সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের রোহিঙ্গারা যেন ভাসান চরে মর্যাদার সাথে থাকতে পারে তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।’

ads

তারা দ্বীপটিতে সফর সম্পর্কে গণমাধ্যমের কাছে তাদের মতামত ব্যক্ত করেন। কক্সবাজার থেকে ১ লাখ বাস্তুচ্যূত রোহিঙ্গাকে দ্বীপটিতে স্থানান্তরের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সেখানে একটি টাউনশিপ গড়ে তুলেছে।

বাংলাদেশ সরকার ভাসান চরে একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছে উল্লেখ করে মাজাও দ্বীপটিতে রোহিঙ্গাদের অর্থনৈতিক কর্মকা- নিশ্চিতের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

তিনি বলেন, ‘এটা সত্যি যে- যখন আপনি ভাসান চরের মতো একটি দ্বীপে বাস করবেন, তখন নিজেকে বিচ্ছিন্ন অনুভব করবেন। আর এ জন্য, আপনাকে অবশ্যই প্রথমে অর্থনৈতিক কর্মকা-ে সম্পৃক্ত হতে হবে।’

তিনি বলেন, ভাসান চর একটি ভাল সুযোগ। রোহিঙ্গারা মিয়ানমার ফিরে যাবার আগে, এর সর্বোত্তম ব্যবহার করা উচিৎ। আমাদের অবশ্যই সেখানে তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য-সেবা ও জীবিকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা উচিৎ- যাতে করে তারা অলস না থাকে।’ তিনি বলেন, ভাসান চরে জাতিসংঘের সংস্থাগুলো কখন থেকে কাজ শুরু করতে যাচ্ছে- সে ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার ও ইউএনএইচসিআর এর মধ্যে আলোচনা হচ্ছে।

গত বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে প্রায় ২০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে কক্সবাজার থেকে ভাসান চরে স্থানান্তর করা হয়েছে। কিন্তু জাতিসংঘ এখনো ভাষান চরে তাদের কার্যক্রম শুরু করেনি। তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারের সাথে আছি। আমরা সব সময় সরকারের সাথে কাজ করেছি। আমরা কক্সবাজারে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা বাংলাদেশের যে কোন স্থানে শরণার্থীদের সহায়তায় সরকারের সাথে কাজ করে যাব।’

গিলিয়ান ট্রিগস বলেন, শরণার্থীরা বাংলাদেশের যে স্থানেই থাককু, ইউএনএইচসিআর তাদের অঙ্গীকার অনুযায়ী শরণার্থীদের সহায়তায় সরকারের সাথে কাজ করে যাবেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা অবশ্যই আমাদের অঙ্গীকার পূরণ করব এবং আমরা শরণার্থী ও বাস্তুচ্যূত মানুষের সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ তৃতীয় দেশে স্থানান্তর সম্পর্কে তিনি বলেন, খুব অল্প সংখ্যক ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের জন্য এটা করা যেতে পারে। ‘কিন্তু তৃতীয় দেশে স্থানান্তর দীর্ঘ-মেয়াদী সমাধান নয়।’ ট্রিগস বলেন, রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনেই একমাত্র সমাধান।
মানবিক বিবেচনায় এই বিপুল সংখ্যক বাস্তুচ্যূত রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নীতিকে পূর্ণ সমর্থন করি।’
তাদের ভাসান চর পরিদর্শনকালে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা জমায়েত হয় এবং জীবিকা ও অর্থ প্রদান, নিজ দেশে প্রত্যাবাসন অথবা তৃতীয় কোন দেশে স্থানান্তরের দাবি জানায়। এ সময় তারা মুক্তভাবে ইউএনএইচসিআর এএইচসিএস এর সাথে কথা বলে এবং তাদের হতাশার কথা জানায়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের কোন অগ্রগতি না হওয়ায়, রোহিঙ্গারা বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য তাদের আকুলতা ব্যক্ত করে।
এর আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রোহিঙ্গারা শিক্ষা, জীবিকা ও কর্মদক্ষতা উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের জন্য ভাসান চরে জাতিসংঘের কর্মকা-ের দাবি করে।

বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী মূল ভূখ- থেকে ৭৩ মাইল দূরে অবস্থিত হাতিয়া প্রশাসনের আওতাধীন ভাসানচরে ১ লাখ রোহিঙ্গার বাসস্থানের জন্য ৩১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে আশ্রায়ন-৩ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। ভাসান চরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ১২০টি পাকা বাড়ির গুচ্ছ গ্রাম ও ১২০টি সাইক্লোন সেন্টার নির্মাণ করা হয়েছে।
এছাড়াও দ্বীপটিতে চাষাবাদ, গবাদীপশু পালন, ভেড়া ও হাঁসের খামার এবং মৎস্য চাষসহ শরণার্থীদের শিক্ষা, চিকিৎসা-সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। পাশাপাশি বাচ্চাদের জন্য খেলার মাঠ ও সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য সরকার সেখানে বিপুল সংখ্যক নিরাপত্তা সদস্য মোতায়েন করেছে।

এই সব কারণে ভাসান চর বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য কক্সবাজারের চেয়ে অনেক ভাল একটি শিবির হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

এর আগে জাতিসংঘের কারিগরি দল ভাসানচর পরিদর্শন শেষে বঙ্গোপসাগরের দ্বীপটিতে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের থাকা-খাওয়াসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার ব্যাপারে ইতিবাচক প্রতিবেদন পেশ করে।

২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনা বাহিনীর দমন-পীড়নের কারণে প্রাণ রক্ষার্থে প্রায় ৭ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশের টেকনাফ ও উখাইয়ে আশ্রয় নেয়।

সরকার ভাসানচরে কার্যক্রম শুরু করার জন্য জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু জাতিসংঘ বরাবরই বলে আসছে যে- দ্বীপটিতে সরেজমিনে পরিদর্শন শেষে প্রতিবেদনের উপর তাদের কার্যক্রম নির্ভর করছে।

ad

পাঠকের মতামত