44126

সৌদির সঙ্গে মিল রেখে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলছে ঈদ উদযাপন

নিউজ ডেস্ক: সৌদি আরবে বুধবার পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন করা হচ্ছে। সৌদি ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানেও ঈদ উদযাপিত হচ্ছে। এসব গ্রামে ঈদ উদযাপনের এই রেওয়াজ চলে আসছে বহুদিন থেকে।

বুধবার সৌদির মিল রেখে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের অন্তত ১১০টি গ্রামে উদযাপন করা হচ্ছে মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ উৎসব। এর মধ্যে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ, ফরিদগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার অর্ধশত গ্রাম এবং বরিশাল মহানগর, বাবুগঞ্জসহ অন্তত ৫০টি ও ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ১০টি গ্রামে ঈদের সালাত আদায়সহ পশু কোরবানি করা হবে।

ads

হাজীগঞ্জসহ চাঁদপুরের বেশ কয়েকটি উপজেলার প্রায় অর্ধশত গ্রামে ১৯২০ সাল থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উৎসব পালন করা হয়। সে হিসেবে বুধবার সকাল ৯টায় হাজীগঞ্জের সাদ্রা সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে প্রধান ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

এ অঞ্চলে হানাফি মাজহাব অনুযায়ী বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে চাঁদ দেখা গেলে ঈদ পালনের বিধান অনুসরণ শুরু করেন মরহুম মাওলানা ইসহাক। সে অনুযায়ী সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ধর্মীয় উৎসবগুলো যেমন– ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা এবং পবিত্র মাহে রমজানের রোজাসহ যাবতীয় ইসলামী কর্মসূচি পালন করে আসছেন এসব গ্রামের বাসিন্দারা। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার (২৭ জুন) ইয়াওমে আরাফা, অর্থাৎ পবিত্র হজের দিন হওয়ায় বুধবার পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজ এবং কোরবানি সম্পন্ন করবেন তারা।

ads

আগাম ঈদ উদযাপন করা গ্রামগুলোর মধ্যে– হাজীগঞ্জের বলাখাল, শ্রীপুর মণিহার, বড়কুল, অলিপুর, বেলচো, রাজারগাঁও, ঝাকনী, কালচো, মেনাপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম আছে। ফরিদগঞ্জ উপজেলায় আছে– শাচনমেঘ, খিলা, উভারামপুর, আইকপাড়া, ভুলাচো, বদরপুর, উটতলী, নুরপুর, কাইতাড়া, সুড়ংগচাল ও বাশারা। এ ছাড়া মতলবের ১৮টি গ্রাম আছে। এর বাইরে চাঁদপুরের পাশাপাশি নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ভোলা ও শরীয়তপুর জেলার কয়েকটি স্থানে মাওলানা ইসহাকের অনুসারীরা এক দিন আগে ঈদ উদযাপন করেন।

বরিশাল মহানগর ও বাবুগঞ্জ জেলার কয়েকটি উপজেলায় প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার আজ ঈদুল আজহা উদযাপন করছে। এজন্য অর্ধশতাধিক গ্রামের মসজিদে আগাম জামাতের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। মসজিদগুলোতে বুধবার সকাল ৮টা এবং সাড়ে ৮টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। আগাম ঈদ পালনকারীরা চট্টগ্রামের চন্দনাইশের জাহাঙ্গীরিয়া শাহ সুফি মমতাজিয়া দরবার শরিফের অনুসারী। পৃথিবীর কোনো প্রান্তে চাঁদ দেখা গেলে তার সঙ্গে মিল রেখে তাঁরা রোজা, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহাসহ যাবতীয় ধর্মীয় আচার পালন করেন।

বোয়ালমাড়ি উপজেলার দশ গ্রামের মধ্যে আছে– শেখর ইউনিয়নের সহস্রাইল, মাইটকোমরা, রাখালতলী, গঙ্গানন্দপুর, বড়গাঁ, দুর্গাপুর, দিঘিরপাড় এবং রূপাপাত ইউনিয়নের কাটাগড়, সুর্যোগ, কলিমাঝি। এসব গ্রামের মানুষ মির্জাখিল শরিফের অনুসারী হিসেবে সৌদির সঙ্গে মিল রেখে আজ ঈদুল আজহার নামাজ পড়ছেন।

সৌদি আরবের সাথে সংগতি রেখে পটুয়াখালীর প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ পবিত্র ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-আজহা পালন করছে।
প্রতি বছরের মতো পটুয়াখালীর বদরপুর দরগাহ শরীফ জামে মসজিদে সকাল ৯টায় ঈদ-উল-আজহার প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। জামাতে ইমামতি করেন বদরপুর দরবার শরীফ জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মোঃ শফিকুল ইসলাম আব্দুল গনি। তিনি বলেন, সৌদি আরবসহ বিশ্বের অন্য দেশের মুসলমানদের সঙ্গে একই দিনে আমরা রোজা, ঈদুল-ফিতর ও ঈদুল-আযহা পালন করে থাকি। প্রায় ১০০ বছর ধরে তা চলে আসছে। এরা সবাই চট্টগ্রামের সাতকানিয়া ও এলাহাবাদ পীরের অনুসারী।

বুধবার সকাল সাড়ে ৮টায় সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভাড়–খালীতে আহলে সুন্নাত আল জামায়াত জামে মসজিদে ঈদ উল আজহার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। নামাজে ইমামতি করেন মাওলানা মাহবুবুর রহমান। ঈদের নামাজে সাতক্ষীরার ইসলামকাটি, গোয়ালচত্তর, ভাদড়া, ঘোনা, ভাড়–খালি, মিরগিডাঙ্গাসহ প্রায় ২০ গ্রামের মানুষ অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া সদর উপজেলার বাওখোলা পূর্বপাড়া জামে মসজিদেও ঈদ উল আযহার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। ঈদের নামাজে নারীরাও শরীক হন। নামাজ শেষে মুসুল্লিরা আল্লার নৈকট্য লাভের আশায় পশু কোরবানি করেন। মুসল্লিরা জানান, গত এক যুগ ধরে তারা সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতর উদযাপন করে আসছেন।

সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে লক্ষ্মীপুরের ১১টি গ্রামে ঈদুল আযহা উদযাপিত হচ্ছে। রামগঞ্জ উপজেলার নোয়াগাঁও, জয়পুরা, বিঘা, বারো ঘরিয়া, হোটাটিয়া, শরশোই, কাঞ্চনপুর ও রায়পুর উপজেলার কলাকোপা ও সদর উপজেলার বশিকপুরসহ ১১টি গ্রামের প্রায় সহস্রাধিক মুসল্লি ঈদুল আযহা উদযাপন করছেন। সকাল সাড়ে ৯টায় রামগঞ্জ উপজেলার নোয়াগাঁও বাজারের দক্ষিণ-পূর্ব নোয়াগাঁও ঈদগাহ ময়দানে ঈদের নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। মাওলানা ইসহাক (রা.) এর অনুসারী হিসেবে এসব এলাকার মানুষ গত ৪৪ বছর ধরে পবিত্র ভূমি মক্কা ও মদিনার সাথে সঙ্গতি রেখে ঈদসহ সব ধর্মীয় উৎসব পালন করে আসছে।

সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে মোংলায় ঈদুল আজহা উদযাপন হয়েছে। বুধবার সকাল ৮টায় সুন্দরবন ইউনিয়নের চটেরহাট আহলে হাদিস জামে মসজিদে ঈদুল আজহার নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ঈদের নামাজে ইমামতি করেন ঈমাম মোঃ বেল্লাল সরদার। এখানে ঈদের নামাজ আদায় করেন মোংলাসহ পার্শ্ববর্তী উপজেলা শরণখোলা ও মোড়েলগন্জ থেকে আসা নারী-পুরুষ মুসল্লিরা। নামাজ শেষে মুসাফা ও কোলাকুলি করে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন মুসল্লিরা। এরপর আল্লাহর সন্তুষ্টি আদায়ের লক্ষে যে যার মত করে পশু কোরবানি করেন। চটেরহাট আহলে হাদিস জামে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক এম নুরুল আমিন বলেন, তাদের এলাকার এ মসজিদটিতে প্রায় ১৫-১৬ বছর ধরে সৌদির সাথে মিল রেখে ঈদ উদযাপন হয়ে আসছে।

ad

পাঠকের মতামত