40523

স্কুলকে মোবাইল অ্যাপে নিয়ে আসলেন ব্রাহ্মণপাড়ার ইউএনও

ব্রাহ্মণপাড়া প্রতিনিধি: কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য শিখন ব্যবস্থাপনা অ্যাপ তৈরি করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে উপজেলা প্রশাসন। নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সোহেল রানার উদ্ভাবিত মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে উপজেলা ও জেলার বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের শিখন ব্যবস্থাপনায় এনেছে অভাবনীয় পরিবর্তন। রুটিন থেকে শুরু করে লেসন প্ল্যান, শিক্ষা সহায়ক ডিজিটাল উপকরণসহ শিখন কার্যক্রমের পুরোটা এখন চলছে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে। নতুন বছরের শুরুতে অ্যাপ ভিত্তিক শিখন শেখানো কার্যক্রম হাতের মুঠোয় পেয়ে চরম খুশি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও এ অ্যাপ হতে পারে দারুণ সহায়ক।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে শিখন কার্যক্রমকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসা হয়। তবে, বাংলাদেশের স্কুল কলেজের জন্য এক নতুন ধরণের লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম উদ্ভাবন করলেন কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার ইউএনও সোহেল রানা। ‘শিক্ষায়তন’ নামের এই লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম একটি স্যাস ( সফটওয়ার এজ এ সার্ভিস) মডেল অনুসারে তৈরী করা ই-সার্ভিস এপ্লিকেশন যাতে দুইটি ওয়েব বেজড প্ল্যাটফর্ম ও একটি মোবাইল এ্যাপ। পুরো সিস্টেমটির স্পেসিফিকেশন ডিজাইন করেছেন ইউএনও সোহেল রানা। এই ডিজাইনটিকে বাস্তবায়ন করতে জেলা প্রশাসন, কুমিল্লা পরবর্তীতে বিজনেস একসিলারেট বিডি নামে একটি টেকনোলজি পার্টনার নিযুক্ত করে যারা সফলভাবে এই লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ডেভেলাপ করে। সফল পাইলটিং শেষে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বর্তমানে কুমিল্লার ৫টি স্কুলে বাস্তবায়নাধীন আছে সফটওয়ারটি। স্কুল ৫টি হলো কুমিল্লার কালেক্টরেট স্কুল, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলাধীন শিদলাই আশরাফ স্কুল, ভগবান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ওশান হাই স্কুল এবং সদর দক্ষিণ উপজেলার শিক্ষা বোর্ড মডেল স্কুল এন্ড কলেজ।
মূলত এই প্ল্যাটফর্মে স্কুলের সকল কার্যক্রম প্রধান শিক্ষক ওয়েব প্ল্যাটফর্মে, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মোবাইল অ্যাপে করতে পারবেন। শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিটি কোর্সে আলাদা আলাদাভাবে সাজানো আছে। কোর্সের ভেতরে সেই কোর্সে সকল ক্লাসের আলাদা ডাইনামিক সেকশন আছে যেখানে শিক্ষকেরা অতিরিক্ত লার্নিং ম্যাটেরিয়াল জমা করতে পারবেন এবং শিক্ষার্থীরা তা দেখতে পাবেন। শিক্ষকেরা  অ্যাপে লেকচার নোট আপলোড করতে পারবেন, শিক্ষার্থীদের গ্রুপে ভাগ করতে পারবেন, ক্লাসে নোটিফিকেশন পাঠাতে পারবেন, এসাইনমেন্ট দিতে পারবেন ও জমা নিতে পারবেন, গ্রেড বসাতে পারবেন। ক্লাসে বসে সফটওয়্যার ব্যবহার করে শিক্ষকেরা হাজিরা নিতে পারবেন। অর্থাৎ স্কুলের সকল কার্যক্রম মোবাইল অ্যাপে করতে পারবেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও, প্রত্যেক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের রয়েছে নিজস্ব ওয়েব পেইজ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে  ইউএনও সোহেল রানা বলেন, ‘ লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের ধারণাটি বেশ পুরনো। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ক্যানভাস, মুডল, স্কুলজি, ব্ল্যাকবোর্ড ইত্যাদি নানা ধরণের লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার আছে। এগুলো স্কুল ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার থেকে কিছুটা ভিন্ন ধাচের। তবে, নানা ধরণের সফটওয়্যার এর ডিজাইন বিশ্লেষণ করে, শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনান্তে স্থানীয় চাহিদা নিরুপন করে ভিন্ন আংগিকে সফটওয়ারটি প্রস্তুত করা হয়েছে। সফটওয়ার প্রস্তুত ও স্কুলে বাস্তবায়নের এই উদ্যোগের প্রধান পৃষ্ঠপোষক কুমিল্লার সাবেক ও বর্তমান জেলা প্রশাসক। আমাদের প্রনীত ডিজাইনে সফটওয়ারটি প্রস্তুত করেছে বিজনেস একসিলারেট লিমিটেড নামে এক কোম্পানি। প্রথমে আমরা কুমিল্লার সকল স্কুলে এটি বাস্তবায়ন করতে চাই ও পরবর্তীতে সরকার বড় পরিসরে পুরো বাংলাদেশে এটি ছড়িয়ে দিতে পারে। শিক্ষার মানোন্নয়নে ও সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশের রূপকল্প বাস্তবায়নেও এটি সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। তবে, এটি বাস্তবায়নের অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ আছে যেগুলো মোকাবিলা করে সামনে এগুতে হবে।’
সাবেক জেলা প্রশাসক  ও বর্তমানে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্মসচিব জনাব মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানান,“ আমি জেলা প্রশাসনে যোগ দেওয়ার পর থেকেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কাজ করে আসছি। কাজ করতে গিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থাপনাকে যুগোপযোগী করে তোলার কথা মাথায় আসে। ব্রাহ্মণপাড়ার উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহেল রানা শিক্ষাক্ষেত্রে লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের আধুনিকায়নের কথা বললে আমরা সেই অভাব পূরণের লক্ষ্যে লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম তৈরী করার উদ্যোগ গ্রহণ করি এবং পরবর্তীতে তা প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দেই। সেখান থেকেই মূলত শিক্ষায়তনের যাত্রা শুরু।”
শিক্ষায়তনের টেকনিক্যাল বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছেন বিজনেস একসিলারেটের সিইও কামরুল হাসান সুমন। তিনি বলেন এ ধরণের সফটওয়্যারের ব্যবহার দেশে নেই। “ দেশে প্রচলিত সফটওয়্যারগুলোতে  ক্লাসরুমে কি পড়ানো হচ্ছে সে বিষয়টি সংযোগ করার অপশন কম। শিক্ষায়তনের মাধ্যমে অভিভাবক, শিক্ষার্থীরা জানতে পারবেন তার বাচ্চারা কি পড়ছে। যেগুলো আছে (যেমন টেন মিনিট স্কুল) তাদের অধিকাংশ কনটেন্ট নির্ভর সেবা দেয়। আমাদের এই সফটওয়্যার কনটেন্ট নির্ভর নেই। জেলা প্রশাসনের মতো প্রতিষ্ঠান থেকে এরকম সফটওয়্যার এর ডিজাইন অভাবনীয়। আমরা এই উদ্যোগের অংশীদার হতে পেরে গর্বিত এবং ভবিষ্যতে এটিকে সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে ইচ্ছুক।”
ভগবান সরকারি স্কুলে শিক্ষায়তন বাস্তবায়ন করছেন বিজ্ঞান শিক্ষক মহিউদ্দিন পলাশ। তিনি  জানান শিক্ষায়তন এমন একটি সফটওয়্যার যেখানে এক কথায় শ্রেণি কার্যক্রমের সবকিছু রয়েছে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা মোবাইলের মাধ্যমে উন্নত মানের শিক্ষা সেবা গ্রহণ করতে পারবে। অ্যাপের  মাধ্যমে শিক্ষকদের কাজ অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে। বিশেষ করে তদের টিচিং প্ল্যান সাজানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
বর্তমানে www.sikkhayton.gov.bd   ইউআরএলের মাধ্যমে প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করা যাবে ও গুগল প্লে স্টোরে এপের নাম ‘শিক্ষায়তন’ অথবা ‘sikkhayton’ নামে এন্ড্রয়েড অ্যাপটি পাওয়া যাবে। শিক্ষায়তন নেটওয়ার্কে যুক্ত হতে চাইলে আগ্রহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জেলা প্রশাসন, কুমিল্লা অথবা উপজেলা প্রশাসন, ব্রাহ্মণপাড়ার সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

ad

পাঠকের মতামত