1466

পুঁজি সঙ্কটে চামড়া ব্যবসায়ী জোগান দিতে সক্রিয় পাচার সিন্ডিকেট

আসন্ন ঈদুল আযহায় কোরবানির দেয়া পশুর চামড়া ভারতে পাচার হয়ে যাওয়ায় শঙ্কা প্রকাশ করেছেন কুমিল্লা চামড়া ব্যবসায়ীরা। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চামড়া পাচার রোধে এবার কঠোর প্রদক্ষেপ নেওয়া হবে।
চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, পাচারকারীরা দালালদের মাধ্যমে গ্রামগঞ্জ থেকে চামড়া সংগ্রহ করে। এছাড়া মসজিদ মাদারসার নামে উত্তোলিত চামড়াগুলোও তারা কৌশলে সংগ্রহ করে পাচার করে দেয়। এতে ব্যবসায়ীকভাবে ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন জানিয়ে কুমিল্লা চামড়া ব্যবসায়ীরা প্রক্রিয়াজাতকরণ ছাড়া চামড়া পরিবহনে কড়াকড়ি আরোপের দাবি জানিয়েছেন।

সূত্র জানায়, কুমিল্লায় ট্যানারি শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রায় দেড় হাজার চামড়া ব্যবসায়ী চরম উৎকণ্ঠায় ভুগছেন। কারণ এবার মূলধন সংকট ও চামড়ার বাজারও যাচ্ছে মন্দা। কুমিল্লার চামড়া ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, মূলধনের অভাবে চামড়া সংগ্রহ করা না গেলে এবার এ অঞ্চলের চামড়া সীমান্ত দিয়ে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রে পাচার হয়ে যেতে পারে। সংশ্লিষ্টদের মতে, মূলধন সংকট, ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে বকেয়া টাকা আদায় না হওয়া, লবণসহ প্রয়োজনীয় কাঁচামালের অসম্ভব মূল্যবৃদ্ধি এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও ব্যাংক ঋণের অভাবে কুমিল্লায় চামড়া শিল্পে ধস নেমেছে। ফলে পশুর চামড়া সংগ্রহের মূল মৌসুম কোরবানির ঈদে কুমিল্লার চামড়া ব্যবসায়ীদের মাঝে বিরাজ করছে চরম উৎকণ্ঠা। চামড়া সংগ্রহের ক্ষেত্রে দেখা দিয়েছে হতাশা।
কুমিল্লার চামড়া ব্যবসায়ীদের বড় একটি অংশের টাকা আটকে আছে ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে। তাদের কাছে এ এলাকার প্রায় ১’শ চামড়া ব্যবসায়ীর পাওনা আটকে গেছে প্রায় চারঁ কোটি টাকা। কোরবানী ঈদের আর অল্প কিছুদিন বাকি থাকলেও বকেয়া পরিশোধের ব্যাপারে ট্যানারি মালিকদের কোনো উদ্যোগ নেই। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীদের অনেকেই মহাজন কিংবা বিভিন্ন ব্যাংক ও এনজিও সংস্থার কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে পুঁজি সংগ্রহের চেষ্টা চালাচ্ছেন। চাহিদামতো পুঁজি সংগ্রহ করতে না পারলে এবার চামড়ার বাজারে ধস নামার আশংকা করছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। এ সুযোগে চামড়ার বাজার ভারতীয় ব্যবসায়ীরা দখলে নিয়ে স্বল্প মূল্যে ক্রয় করে তা ভারতে নিয়ে যাবে বলে আশংঙ্কা করছেন কুমিল্ল¬ার বৃহৎ চামড়ার আড়ৎ কুমিল্লা জেলার চামড়া ব্যবসায়ীরা। ইতোমধ্যেই চামড়া পাচারকারী চক্র মোটা পুঁজি নিয়ে মাঠে নেমেছে। পুঁজির জোগান দিতে সীমান্তের ভারতীয় চামড়া ব্যবসায়ীদের এ দেশীয় এজেন্টরা কুমিল্ল¬ায় এসে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও ফড়িয়াদের মাধ্যমে চামড়া কেনার জন্য আগাম বুকিং দিচ্ছে বলে চামড়া ব্যবসায়ীদের একাধিক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন। কুমিল্লা শহরের গোয়ালপট্রি এলাকার চামড়া ব্যবসায়ী রতন সর্দারের সাথে বাসায় গিয়ে যোযোগের চেষ্টা করা হলে পরিবারের সদস্যরা জানান, তিনি ঢাকায় পাওনা টাকা আদায়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এদিকে কুমিল্লায় অবস্থানরত ঢাকার সাথে সরারসি চামড়া ব্যবসায়ী বিক্রম দাস সময়ের আলোকে বলেন, আমরা ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে গত ৩/৪ বছর আগের টাকাও পাওনা রয়েছি। তিনি আরো বলেন, অনেক বড় বড় ব্যবসায়ী চামড়া ব্যবসা বাদ দিয়ে অন্য ব্যবসা করছেন। সূত্র জানান, কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম, লাকসাম, চান্দিনা, দাউদকান্দি, মুরাদনগর দেবিদ্বার, বরুড়া, উপজেলাসহ চাঁপুরের হাজীগঞ্জ, কচুয়া, ফেনী জেলার ছোট-বড় মিলিয়ে চামড়া ব্যবসায়ী রয়েছেন প্রায় ১ হাজারেরও বেশি। গত দু’টি কোরবানী ঈদে সংগৃহীত চামড়া ঢাকার ৪টি ট্যানারি মালিক ও কুমিল্লার আড়ৎদারের কাছে বিক্রি করা হয়। কিন্তু কোনবারই তারা পুরো টাকা পরিশোধ করেনি। ফলে তাদের কাছে ঐ দুই ঈদের পাওনা আটকে গেছে প্রায় ৩ কোটি টাকারও বেশি। পাওনা পরিশোধের ব্যাপারে দফায় দফায় তাগাদা দেয়া হলেও ট্যানারি মালিক ও আড়ৎদাররা তা আমলে নিচ্ছে না বলে পাওনাদারদের অভিযোগ।
চামড়া ব্যবসায়ী বজন, বাহার, ভিক্ষু, নীল কমল সময়ের আলোকে বলেন, ট্যানারি মালিকরা আগাম জানিয়ে দিয়েছে পর্যাপ্ত ব্যাংক ঋণ পেলেই বকেয়া পরিশোধ সম্ভব হবে। কিন্তু ঈদের এক সপ্তাহ আগে বকেয়া পরিশোধ না করা হলে এবার চামড়ার বাজারে ধস নামবে। আর এ সুযোগ নেবে পাচারকারি সিন্ডিকেট। একই আশংকা প্রকাশ করেছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গরু, ছাগল ও খাসির চামড়ার যে মূল্য নির্ধারণ করেছে বর্তমান সময়ে লবনসহ কাচামালের দামের কারনে চামড়া স্থানীয় ব্যবসায়ীদের লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এ এলাকার চামড়া শিল্পকে বাঁচাতে এবং দেড় সহস্রাধিক চামড়া ব্যবসায়ী ও তাদের পরিবারকে রক্ষার্থে সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপ কামনা করেছেন কুমিল্লার চামড়া ব্যবসায়ীরা। তা না হলে মূলধনের অভাবে চামড়া সংগ্রহ করা না গেলে এ এলাকার চামড়া সীমান্ত দিয়ে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রে পাচার হয়ে যেতে পারে বলে সকলেই একমত পোষণ করেন। এদিকে কুমিল্লার চামড়া ব্যবসায়ীদের সাথে পুলিশ প্রশাসন চামড়া প্রাচার রোধে মতবিনিময় সভা করেছেন। এ বিষয়ে কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম  বলেন, চামড়া পাচার রোধে পুলিশ প্রশাসন কঠোর প্রদক্ষেপ নিবেন।

ads
ad

পাঠকের মতামত