60766

কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের তদবির ও দুর্নীতি রুখতে লটারির মাধ্যমে বদলী

নিউজ ডেস্ক: চাকুরী পাওয়া থেকে শুরু করে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলির ক্ষেত্রেও তদবির ও দুর্নীতির সংবাদ হরহামেশাই উঠে আসে। এই দীর্ঘদিনের প্রথাগত সমস্যা মোকাবিলায় এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিল কুমিল্লা জেলা প্রশাসন। ঘুষ ও তদবিরের পথ পুরোপুরি বন্ধ করতে এবার লটারির মাধ্যমে বদলির প্রক্রিয়া শুরু করেছে তারা।

এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের তৃতীয় শ্রেণির ৫৭ জন কর্মচারীকে লটারি পদ্ধতি অবলম্বন করে বদলি করা হয়েছে। সবার সামনে উন্মুক্ত লটারির মাধ্যমে এই বদলি কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, তদবির বন্ধ করা এবং দুর্নীতি কমাতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

ads

বৃহস্পতিবার বিকালে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছারের উপস্থিতিতে এই লটারি অনুষ্ঠিত হয়। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. সাইফুল ইসলাম, এনডিসি ফরিদুল ইসলামসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।

বদলি প্রক্রিয়ায় একজন করে কর্মচারী এসে বক্সে রাখা উপজেলার নাম তোলেন। যার নামে যে উপজেলার নাম উঠে, তাকে সেখানেই বদলি করা হয়।

ads

অনুষ্ঠানে গিয়ে দেখা যায়, জেলা প্রশাসকের সামনে রাখা বাক্স থেকে কর্মচারীরা উপজলার নাম তুলে নিচ্ছেন। লটারির মাধ্যমে এই নাম তোলার বিষয়টিকে উপস্থিত সবাই ‘ইউনিক’ বলে মন্তব্য করেন।

যদিও কয়েকজন কর্মচারী তাদের পছন্দ মতো উপজেলায় বদলি হতে না পেরে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন, তবুও তারা এই পুরো প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ ছিল বলে স্বীকার করেন।

অফিস সহকারী প্রতীমা রানী চক্রবর্তী, যিনি চান্দিনা উপজেলা প্রশাসন কার্যালয়ে কাজ করতেন, লটারিতে তার নাম উঠেছে আদর্শ সদর উপজেলায়। তিনি বলেন, “এত বছর চাকরি জীবনে এই নিয়ম আর দেখিনি। এই প্রথম এই রকম ব্যতিক্রম নিয়ম দেখলাম। ভালো লাগলো।”

দাউদকান্দির উপ-প্রশাসনিক কর্মকর্তা আলমগীর কবির চৌধুরী বলেন, “এই প্রক্রিয়াটি সবার সামনে লটারিতে হওয়ায় বদলির বিষয়টি স্বচ্ছ হয়েছে। জেলা প্রশাসক মহোদয়ের এই পরিকল্পনায় আমরা খুশি।”

নাঙ্গলকোটের আবুল বাশার মন্তব্য করেন, “যেন পক্ষপাতিত্ব না হয় সেজন্য লটারি করা হয়েছে। পদ্ধতিটি ভালো হয়েছে। আমাদের উপজেলা থেকে উপজেলায় বদলি করা হয়েছে।”

অনুষ্ঠানে কেউ কেউ তাদের বক্তব্যে নিকটবর্তী উপজেলায় রাখার আবদার জানালে জেলা প্রশাসক সবার সমান অধিকার নিশ্চিত করতে তা নাকচ করেন। তবে অবসরের অল্প সময় বাকি এবং বেশি অসুস্থদের বিষয়টিতে সবার সামনে আলোচনার মাধ্যমে ছাড় দেওয়া হয়।

জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার তার এই উদ্যোগের যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলেন, “দীর্ঘদিন এক স্থানে থাকলে কিছু কর্মচারীর দুর্নীতিতে জড়িত হওয়ার আশংকা থাকে। এছাড়া বদলির বিষয়ে অনেক তদবির আসে। তাই সবার সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা লটারির মাধ্যমে বদলির উদ্যোগ নিয়েছি।”

তিনি আরও জানান, “তবে বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে সবার সামনে আলোচনার মাধ্যমে ছাড় দেয়া হয়েছে।” এবার তৃতীয় শ্রেণির মোট ৫৭ জন কর্মচারীকে বদলি করা হয়েছে।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, ধীরে ধীরে বাকি কর্মচারীদেরও এই স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বদলি করা হবে।

ad

পাঠকের মতামত