
জিম্মিদের মুক্তি না দিলে হামাসকে চড়া মূল্য দিতে হবে: ইসরায়েল
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস জিম্মিদের মুক্তি না দিলে গাজা দখল করে তাদের সম্পূর্ণ পরাজিত করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) এক ভিডিও বার্তায় তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
ভিডিও বার্তায় কাৎজ বলেন, আমাদের প্রধান লক্ষ্য এখন সব জিম্মিদের বাড়ি ফিরিয়ে আনা। হামাস যদি তাদের অস্বীকৃতি অব্যাহত রাখে, তাহলে তাদের ভূমি দখল ও সন্ত্রাসী কর্মী ও অবকাঠামো ধ্বংসের মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান চড়া মূল্য দেবে—যতক্ষণ না তাদের সম্পূর্ণ পরাজয় ঘটে।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানান, গাজার বিভাগীয় কমান্ডারদের পরিকল্পনা অনুমোদন করেছেন তিনি। গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখতে দক্ষিণ কমান্ডের প্রধান মেজর জেনারেল ইয়ানিভ আসোর, ডেপুটি চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল তামির ইয়াদাই, গাজা ডিভিশনের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বারাক হিরাম ও ২৫২তম ডিভিশনের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়েহুদা ভাখের সঙ্গে বৈঠক শেষে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কাৎজের এই বক্তব্য এমন সময়ে এলো, যখন গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক বিধ্বংসী অভিযান চালাচ্ছে।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বারবার বলেছেন, হামাসের সব সদস্য ও নেতৃত্বকে নিশ্চিহ্ন না করা পর্যন্ত তারা যুদ্ধবিরতিতে রাজি নয়। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপের মুখে গত কয়েক সপ্তাহে কিছু জিম্মি ও লাশ ফেরত দেওয়া হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের হামলায় এ পর্যন্ত ৫০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো গাজায় অবর্ণনীয় মানবিক বিপর্যয় চলছে বলে জানিয়েছে।
সেভ দ্য চিলড্রেনের মতে, গত এক সপ্তাহে অন্তত ২৭০ শিশু নিহত হয়েছে। সংস্থাটি বলছে, বোমার আঘাতে তাঁবুতে ঘুমন্ত শিশুরা মারা যাচ্ছে, তারা ক্ষুধার্ত ও অসুস্থ। এই নারকীয় পরিস্থিতি বন্ধের একমাত্র উপায় হলো যুদ্ধবিরতি।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি বলেছেন, হামাসের পরাজয় নিশ্চিত না করা পর্যন্ত আমরা থামব না।
জাতিসংঘ ও বিভিন্ন দেশ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও ইসরায়েল তা প্রত্যাখ্যান করে আসছে।
এদিকে, হামাস নেতৃত্ব বলছে, ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার আগে গাজায় যুদ্ধবিরতি ও ইসরায়েলি হামলা বন্ধের নিশ্চয়তা চায় তারা।
কাৎজের এই হুঁশিয়ারি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে আরও ব্যাপক সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করছে। গাজার সাধারণ মানুষ এর মধ্যেই চরম দুর্ভোগে রয়েছেন—খাদ্য, পানি, ওষুধ ও নিরাপদ আশ্রয়ের অভাব দিন দিন তীব্র হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জোরালো হস্তক্ষেপ ছাড়া এই সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধান কতটা সম্ভব, তা এখনও অনিশ্চিত।