39372

কাতার বিশ্বকাপের সাফল্যে মরক্কোয় আনন্দের বন্যা

স্পোর্টস ডেস্ক: ১৯৮৬ বিশ্বকাপে নিজেদের সেরা সাফল্য হিসেবে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ড খেলেছে মরক্কো। আফ্রিকার মানচিত্রে সিংহ হিসেবে পরিচিত দেশটি ৩৬ বছর পর আবার শেষ ষোলোয় পৌঁছেছে তারা। মাঝে আরও ৩ বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে প্রতিবার গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছে। কিন্তু এবার শক্তিশালী দুই দলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছে তারা। গত আসরের রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ড্র এবং তৃতীয় বেলজিয়ামের বিপক্ষে জিতেছে। আর তাই দলের এমন সাফল্যে উৎসবে মেতেছেন মরক্কোর মানুষ। অনেক আগে থেকেই দেশটির মানুষ ফুটবল আসক্ত। তাই যেন বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস তাদের বিশ্বকাপে দলের এমন প্রাপ্তিতে। মূলত তীব্র খরা দেশটিতে, কিন্তু যেদিন মরক্কো জিতেছে সেদিন আকাশ ভেঙে নেমেছে স্বস্তির বারিধারা। তাই সবমিলিয়ে আনন্দের বন্যা বয়ে গেছে মরক্কোবাসীদের মধ্যে। প্রথম ম্যাচেই এবার মরক্কো মুখোমুখি হয় গত বিশ্বকাপের রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়ার।

সেই ম্যাচে দারুণ লড়াই করে গোলশূন্য ড্রয়ের পর আলোচনার জন্ম দেয়। দ্বিতীয় ম্যাচেও বড় পরীক্ষা দিতে হয়েছে তাদের। এবার গত আসরে তৃতীয় হওয়া এবং বর্তমানে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে দুই নম্বরে থাকা বেলজিয়ামকে ২-০ গোলে হারিয়ে আবার দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার রাস্তা সুগম করে। বড় দুই ম্যাচে অভূতপূর্ব খেলা উপহার দিয়ে অনুপ্রাণিত ও উজ্জীবিত মরক্কো শেষ ম্যাচে কানাডাকে ২-১ গোলে হারিয়ে দেয়। এতে শুধু দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিতই করেনি তারা, পাশাপাশি হয়েছে ‘এফ’ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন। ১৯৮৬ সালেও নিজেদের দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ অংশগ্রহণে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠে মরক্কো। সেবার তাদের গ্রুপে ছিল ইংল্যান্ড, পোল্যান্ড ও পর্তুগাল। সেবারও তারা হারেনি, দুই ড্রয়ের পর শেষ ম্যাচে পর্তুগিজদের ৩-১ গোলে হারিয়েই শেষ ষোলো নিশ্চিত করে। এবার ৩ ম্যাচে ২ জয় এবং ১ ড্র করে অপরাজিত মরক্কানরা। সেদিক থেকে বিশ্বকাপে নিজেদের সেরা সাফল্য এবারই পেয়েছে তারা। তাই দেশটির অনেক ভক্ত আনন্দে কেঁদেছেন। মরক্কোর মানুষ অনেক আহেগ থেকেই ফুটবলে আচ্ছন্ন। ১৯৮৬ সালে প্রথম আফ্রিকান দেশ এবং এরাবিয়ান জাতি হিসেবে বিশ্বকাপে উঠে রেকর্ড গড়া মরক্কোকে নিয়ে তাই এবারও উচ্ছ্বাসটা বাঁধভাঙ্গা। এ বিষয়ে ক্রন্দনরত এক ভক্ত বলেন,‘আমরা ৩৬ বছর অপেক্ষা করেছি। এখন সেই অপেক্ষার পর গৌরবময় অর্জন এনে দিয়েছে তারা।’

ads

বৃহস্পতিবার মরক্কোর রাজধানী রাবাত উৎসবের নগরী হয়ে যায়। দেশের সবচেয়ে ফিটফাট ও জাঁকালো স্থান আইকোনিক এভেনিউ মোহাম্মদ ভি থেকে ফুটবল সমর্থকরা ঝাঁকে ঝাঁকে দেশের পতাকা জড়িয়ে রাবাতের কেন্দ্রস্থলের দিকে স্লোগান দিতে দিতে এগিয়ে গেছেন। এ সময় বাজি ফুটিয়ে, অবিরাম গাড়ির হর্ন বাজিয়ে উল্লাস প্রকাশ করেছেন তারা। অনেক অপেক্ষার পর যেমন স্বস্তি আসে তেমনি এদিন ছিল মরক্কোবাসীর জন্য দারুণ ভালো। মূলত তীব্র খরার দেশটিতে বৃষ্টিধারা বিরল। কিন্তু এদিন বৃষ্টিও নেমেছে এবং রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে গেছে। সেখানে নারী-পুরুষরা বৃষ্টিতে ভিজে, পানিতে পা ডুবিয়ে আনন্দ-উল্লাস করেছেন বিশ্বকাপ গৌরবে। ম্যাচের আগেই দেশটির ক্যাফে-রেস্তরাঁগুলো ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। সেখানে বড় স্ক্রিনে খেলা চলেছে। এমনকি এদিন ব্যাংকগুলো আগেভাগে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে যেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা খেলা দেখতে পারেন। হুদা নামের ৩৪ বছর বয়সী এক ফুটবল ভক্ত বলেন,‘ম্যাচটি নিয়ে আমি কিছুটা স্নাায়ুচাপে ছিলাম, কিন্তু তারা আমাদের আনন্দে ভাসিয়েছে।’

ads
ad

পাঠকের মতামত