35961

২০২৬ বিশ্বকাপের মঞ্চে হয়ত এ খেলোয়াড়দের আর নাও দেখা যেতে পারে

স্পোর্টস ডেস্কঃ শুধু আয়োজন আর নতুনত্ব ছাড়াও আধুনিক ফুটবলের কয়েকজন কিংবদন্তি খেলোয়াড়ের ফুটবলের বিশ্বমঞ্চে সম্ভাব্য সর্বশেষ উপস্থিতির জন্যও কাতার বিশ্বকাপে চোখ থাকবে অনেকের। যাদের দেখে পুরো একটি প্রজন্ম ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে বড় হয়েছে, তাদের অনেককেই হয়ত ২০২৬ বিশ্বকাপে আর দেখা যাবে না। তাই আগামী বিশ্বকাপেই হয়ত শেষবারের মতো ‘‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’’-খ্যাত প্রতিযোগিতায় বর্তমান প্রজন্মের মহাতারকাদের ফুটবল সুধা উপভোগ করতে পারবেন দর্শকরা।

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো (পর্তুগাল)
আন্তর্জাতিক ফুটবলের সর্বোচ্চ গোলদাতা রোনালদো প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলেছিলেন ২০০৬ সালে। জার্মানিতে অনুষ্ঠেয় সেই আসরে পর্তুগালকে ৪০ বছর সেমিফাইনালে তুলতে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন সিআর সেভেন। ইংল্যান্ডের সঙ্গে কোয়ার্টার ফাইনালের সেই উইংকিং বিতর্ক সৃষ্টি না হলে হয়ত বিশ্বকাপের সেরা তরুণ খেলোয়াড়ের পুরস্কারও তার হাতেই উঠত।

ads

২০০৪ সালে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে রোনালদোর অভিষেকের আগে মাত্র তিনবার বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলার সুযোগ পেয়েছিল পর্তুগাল। তবে জাতীয় দলে রোনালদোর আগমনের পর প্রতিটি বিশ্বকাপেই জায়গা করে নিয়েছে ইউরোপের দেশটি। তবে ২০০৬ সালের পর কোনোবারই শেষ ষোলোর বৈতরণী পার হতে পারেনি দেশটি। তিন বিশ্বকাপ খেলে ৭ গোল করা ৩৭ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড নিশ্চয়ই চাইবেন ইউরো এবং নেশন্স লিগের পর অধিনায়ক হিসেবে দেশকে বিশ্বকাপ শিরোপা এনে দিতে।


পর্তুগালের ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো
২০২৬ বিশ্বকাপের সময়ে রোনালদোর বয়স হবে ৪১। নামটি যতই রোনালদো হোক, বয়সের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তখনও শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবলে রোনালদোর জায়গা থাকবে নাকি, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েই গেছে। তাই এবারই সোনালী ট্রফিটা ছোঁয়ার শেষ সুযোগ ৫ বারের ব্যালন ডি অর জয়ীর সামনে।

ads

লিওনেল মেসি (আর্জেন্টিনা)
ক্লাব ক্যারিয়ারে অঢেল সাফল্যমণ্ডিত হলেও আন্তর্জাতিক ফুটবল বরাবরই লিওনেল মেসির জন্য হতাশার নামান্তর ছিল। আর্জেন্টিনার হয়ে সাফল্যের দেখা পাচ্ছিলেন না তিনি। তবে গত বছর কোপা আমেরিকা জয়ের মাধ্যমে অবশেষে দেশের হয়ে শিরোপাহীনতার গেরো ভেঙেছেন মেসি।

সাত বারের ব্যালন ডি অর জয়ী আর্জেন্টাইনের একমাত্র অপূর্ণতা ফিফা বিশ্বকাপ। ২০১৪ সালে অবশ্য কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন মেসি। কিন্তু নিজে গোল্ডেন বল জিতলেও জার্মানির কাছে আর্জেন্টিনা ০-১ গোলে পরাজিত হওয়ায় সোনালী ট্রফিটি উঁচিয়ে ধরার সৌভাগ্য হয়নি ৩৫ বছর বয়সী ফরোয়ার্ডের।


আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসি
সেই আরাধ্য শিরোপা জেতার জন্য কাতার বিশ্বকাপই সম্ভাব্য শেষ সুযোগ মেসির। ২০২৬ বিশ্বকাপের সময়ে মেসির বয়স হবে ৩৯। ততদিনে হয়ত আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে বুটজোড়া তুলে রাখবেন তিনি। এখন পর্যন্ত চার বিশ্বকাপ খেলে ৬ গোল করা মেসি নিশ্চয়ই চাইবেন আকাশী-সাদা শিবিরদের হয়ে সাফল্য দিয়ে নিজের শেষ বিশ্বকাপটা রাঙাতে।

লুকা মডরিচ (ক্রোয়েশিয়া)
তর্কসাপেক্ষে আধুনিক ফুটবলের সেরা মিডফিল্ডার হিসেবে সবাই একবাক্যে লুকা মডরিচের নামটাই আগে মুখে নেবেন। ২০০৬ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলা এ ফুটবলার ৩৬ বছর বয়সেও রয়েছেন দুরন্ত ফর্মে। ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলায়ও ক্লাব-জাতীয় দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এ ক্রোয়েশিয়ান।

লুকা মডরিচের জন্য গত রাশিয়া বিশ্বকাপটা কেটেছিল স্বপ্নের মতো। প্রথমবারের মতো ক্রোয়েশিয়াকে নিয়ে গিয়েছিলেন বিশ্বকাপের ফাইনালে। ফ্রান্সের কাছে হেরে সোনালী ট্রফি উঁচিয়ে ধরার স্বপ্নপূরণ না হলেও মডরিচ ঠিকই জিতে নিয়েছিলেন গোল্ডেন বল। পরবর্তীতে মেসি-রোনালদোর ১০ বছরের আধিপত্য ভেঙে এ ক্রোয়েশিয়ান জিতে নিয়েছিলেন ব্যালন ডি অর। পাশাপাশি ঝুলিতে ভরেছিলেন ফিফা-উয়েফার বর্ষসেরার স্বীকৃতিও।


ক্রোয়েশিয়ার লুকা মডরিচ
২০২৬ বিশ্বকাপ আসতে আসতে মডরিচের বয়স হয়ে যাবে ৪০। ক্রোয়েশিয়ার হয়ে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলা মডরিচ তাই কাতারেও দলের হয়ে ২০১৮ সালের মতোই আরেকবার ফুটবলের বিশ্বমঞ্চ মাতাতে চাইবেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

ম্যানুয়েল নয়্যার (জার্মানি)
গোলরক্ষক হয়েও অর্জন আর মাঠের নৈপুণ্য দিয়ে যে কয়জন বিশ্ব ফুটবলের বড় তারকা হিসেবে নিজের নাম উজ্জ্বল করেছেন, তাদের মধ্যে ম্যানুয়েল নয়্যার অন্যতম। ক্লাব ক্যারিয়ারে বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে দুবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও টানা ১০ বার বুন্দেসলিগা জিতে ইতোমধ্যেই পেশাদার ফুটবলের জীবন্ত কিংবদন্তির আসনে পৌঁছে গেছেন ৩৬ বছর বয়সী গোলরক্ষক। সেই সঙ্গে সুইপিং কিপিংকেও নতুন শিল্পের রঙে রাঙিয়েছেন এ জার্মান।

২০১৪ সালে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে জার্মানিকে শিরোপা জেতাতে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন নয়্যার। সেই সঙ্গে নিজে জিতে নিয়েছিলেন বিশ্বকাপের সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার গোল্ডেন গ্লাভসও। বছর শেষে ব্যালন ডি অরের সেরা তিনেও জায়গা করে নিয়েছিলেন এ জার্মান, যা গত দুই দশকে করে দেখাতে পারেননি আর কোনো গোলরক্ষকই।


জার্মানির ম্যানুয়েল নয়্যার/ডয়েচে ভেলে
২০১৮ বিশ্বকাপটা অবশ্য ভুলেই যেতে চাইবেন নয়্যার। তার অধিনায়কত্বেই যে ১৯৩৮ সালের পর প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের গ্রুপপর্ব পেরোতে ব্যর্থ হয়েছিল জার্মানি। জার্মান গোলরক্ষক তাই রাশিয়া বিশ্বকাপের দুঃস্বপ্ন ভুলে গিয়ে আট বছর আগের সুখস্মৃতি কাতারে ফিরিয়ে আনতে চাইবেন নিশ্চিতভাবেই। কারণ গোলরক্ষক হলেও ৪০ বছর বয়সে ২০২৬ বিশ্বকাপে নয়্যারকে দেখতে পাওয়াটা কিঞ্চিৎ অসম্ভবই হবে।

করিম বেনজেমা (ফ্রান্স)
ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলায় যেন নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করেছেন করিম বেনজেমা। এক সময় নিজ দলের সমর্থকদের কাছে সমালোচনার পাত্র হলেও বর্তমানে সেই চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত। এখন মাঠে নিজের উপস্থিতির মাধ্যমে হয়ে উঠেছেন দলের অন্যতম বড় প্রভাবক। ক্রিস্টিয়ানো পরবর্তী যুগে রিয়াল মাদ্রিদকে প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতিয়ে ৩৪ বছর বয়সে এসে হয়েছেন ব্যালন ডি অরের সবচেয়ে বড় দাবিদার।

তবে ব্যালন ডি অরের চেয়েও করিম বেনজেমা হয়ত পাখির চোখ করেছেন কাতার বিশ্বকাপকেই। ২০১৪ বিশ্বকাপে দূর্দান্ত খেলেও সাবেক সতীর্থ ম্যাথিউ ভ্যালবুয়েনার যৌন সম্পর্কের ভিডিও নিয়ে তাকে ব্ল্যাকমেইল করার অভিযোগ এবং আদালতের মামলায় লম্বা সময়ের জন্য জাতীয় দলে নির্বাসিত ছিলেন বেনজেমা। ফলে ২০১৮ সালে ফ্রান্স বিশ্বকাপ জিতলেও এই স্ট্রাইকারের বিশ্বজয়ের স্বাদ পাওয়া হয়নি।

ফ্রান্সের করিম বেনজেমা

তবে সেক্স টেপ বিষয়ক বিতর্ক শেষ হওয়ার পর ঠিকই গত বছর ফ্রান্সের ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের দলে বেনজেমাকে ডাকেন কোচ দিদিয়ের দেশম। এরপর ক্লাবের ফর্মটা টেনে নেন জাতীয় দলেও, লেস ব্লুজদের জেতান নেশন্স লিগের শিরোপাও। ১৯৬২ সালের ব্রাজিলের পর ফ্রান্স যদি টানা দ্বিতীয়বার সোনালী ট্রফি ঘরে তুলতে চায়, তাহলে কাতারে বেনজেমাই হবেন দলের তুরুপের তাস।

লুইস সুয়ারেজ (উরুগুয়ে)
ফিফা বিশ্বকাপের অন্যতম বর্ণিল চরিত্র লুইস সুয়ারেজ। ৩৫ বছর বয়সী এ স্ট্রাইকারের নামের পাশে যেমন ২০১০ সালে কোয়ার্টার ফাইনালে ঘানার বিপক্ষে হ্যান্ডবল কিংবা ২০১৪ বিশ্বকাপের কামড় কাণ্ডের মতো বিতর্ক আছে, তেমনি নিজের খেলা ৩টি বিশ্বকাপে ৭ গোল করে উরুগুয়েকে একবার করে সেমিফাইনাল আর কোয়ার্টার ফাইনালে তোলার ক্ষেত্রেও রেখেছেন বড় ভূমিকা।


উরুগুয়ের লুইস সুয়ারেজ
২০২৬ বিশ্বকাপের সময়ে এ উরুগুইয়ানের বয়স হবে ৩৯। মেসি-রোনালদোর সুবর্ণ সময়ে দুটি গোল্ডেন বুট জেতা এ ফরোয়ার্ড ততদিনে নিশ্চিতভাবেই বুটজোড়া তুলে রাখবেন। ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে দাঁড়িয়ে বিতর্কের কারণে নয়, মাঠের নৈপুণ্যেই আরও একবার বিশ্বকাপের শিরোনামে আসার ইচ্ছে তাই থাকবেই গোলক্ষুধার জন্য এল পিস্তেলেরো নামে পরিচিত এ স্ট্রাইকারের।

থিয়াগো সিলভা (ব্রাজিল)
২০১৪ সালে ঘরের মাটিতে ব্রাজিলের অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপে অভিষেক হয়েছিল থিয়াগো সিলভার। শুরুটা ভালো হলেও সেমিফাইনালে সিলভার হলুদ কার্ডজনিত অনুপস্থিতিতে জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে বিধ্বস্ত হয় তার দল। চার বছর পর রাশিয়া বিশ্বকাপেও সিলভার নেতৃত্বে হেক্সা জয়ের দিকে ভালোভাবেই এগোচ্ছিল ব্রাজিল। কিন্তু সোনালী প্রজন্মের বেলজিয়ামের কাছে ১-২ গোলে হেরে বিশ্বকাপের সফলতম দলটি বিদায় নেয় শেষ আট থেকেই।


ব্রাজিলের থিয়াগো সিলভা
মেঘে মেঘে বেলা গড়িয়ে সিলভার বয়স এখন ৩৮। তবে নিজের দিনে এখনও নিজ দলের রক্ষণভাগের সবচেয়ে বড় ভরসার নাম তিনি। কাতারে ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে ব্রাজিলের রক্ষণভাগ তাকিয়ে থাকবে সিলভার দিকে। ক্যারিয়ারের শেষভাগে যদি আরও একবার নিজের সেরাটা দিতে পারেন, তাহলে ২০০২ সালের পর আবারও এশিয়ার মাটিতে বিশ্বজয়ের স্বাদ পেতে পারে সেলেসাওরা।

ad

পাঠকের মতামত