17908

বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় যাচ্ছে দেশের ২১৫ প্রত্নস্থান

ডেস্ক রিপোর্ট: দেশের আটটি বিভাগের ২১৫টি প্রত্নস্থানকে বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য নির্বাচন করেছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। ইউনেস্কোর অপারেশন গাইড লাইন অনুসারে বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য এই স্থানগুলো নির্বাচন করা হয়। ‘আপডেটিং দ্য টেনটেটিভ লিস্ট অব বাংলাদেশ’ কর্মসূচির আওতায় এসব স্থান নির্বাচন করা হয়েছে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবং ইউনেস্কোর অর্থায়নে এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন হচ্ছে।

বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশের ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য সম্ভাব্য তালিকা হালনাগাদকরণ কর্মসূচির সর্বশেষ অবহিতকরণ’ শীর্ষক সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।

ads

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ ইউনেস্কো’র বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হলে কোনো সাইটকে অবশ্যই টেনটেটিভ লিস্টে (সম্ভাব্য তালিকায়) অন্তত এক বছর থাকতে হয়। এগুলো হালনাগাদকরণের কাজ একটি চলমান প্রক্রিয়া। কিন্তু আমাদের টেনটেটিভ লিস্টে ১৯৯৯ সালে পাঁচটি সাইট অন্তর্ভুক্ত করার পর দীর্ঘদিন যাবৎ তালিকা হালনাগাদকরণের উদ্যোগ কেউ নেয়নি। ১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই এই তালিকা প্রথম প্রস্তুত করা হয়।’

কে এম খালিদ বলেন বলেন, ‘দেশে বিশ্ব ঐতিহ্য হওয়ার মতো অনেক কিছুই আছে। একটু দেরিতে হলেও বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই এটি হালনাগাদকরণের উদ্যোগ ও কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা দ্রুত নির্বাচন করে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি আনতে চাই।’

ads

কর্মসূচিতে গত এক বছরে এ বিষয়ে উন্মুক্ত প্রস্তাব আহ্বান করা হলে মোট ৬১টি প্রস্তাব আসে। এর মধ্যে ৩৩টি প্রস্তাব অসম্পূর্ণ ও অপ্রাসঙ্গিক এবং ২৮টি মানসম্পন্ন প্রস্তাব বিবেচনায় নিয়ে বিশেষজ্ঞরা ১৬টি থিমে ভাগ করেন। পরবর্তী সময়ে এগুলো নিয়ে অনলাইনে সেমিনার আয়োজন এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে সাতটি অংশীজন সভা ও প্রায় ২০টি মাঠ কার্যক্রম পরিচালনা মাধ্যমে বিশেষজ্ঞদের আটটি প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়। এই আটটি বিভাগে দেশের মোট ২১৫টি স্থান নির্বাচিত হয়েছে। তালিকাটি প্রকল্প সমাপ্তি প্রতিবেদনসহ সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইউনেস্কোতে পাঠানো হবে এবং প্রতিবেদনের একটি সারসংক্ষেপ প্রকাশ করা হবে। পরে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য টেনটেটিভ লিস্ট হালনাগাদকরণে নিয়মিত পরিচালনার কাজ চালু রাখবে।

টেনটেটিভ লিস্টে থাকা নামগুলো হলো ‘আর্কিওলজিক্যাল সেটেলমেন্টস অন লিটারেল ল্যান্ডস্কেপ অব সাউথওয়েস্টার্ন পার্ট অব বাংলাদেশ’ বিভাগে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মোট ২৭টি প্রত্নস্থল, ‘ব্রিক বিল্ট মোঘল মসকিউ ইন বাংলাদেশ’ বিভাগে বাংলাদেশের মোঘল সময়ের ৩০টি মসজিদ, ‘কালচারাল ল্যান্ডস্কেপ অব মহাস্থান অ্যান্ড করোতোয়া রিভার’ বিভাগে মহাস্থান অঞ্চলের ৮৪টি প্রত্নস্থল, ‘আর্কিওলজিক্যাল সাইটস অ্যান্ড ল্যান্ডস্কেপ অব লালমাই-ময়নামতি’ বিভাগে লালমাই-ময়নামতি অঞ্চলের ২১টি প্রত্নস্থল, ‘ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি কমপ্লেক্স, বাংলাদেশ’ বিভাগে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভবন, ‘দ্য আর্কিটেকচারাল ওয়ার্ক অব মাজহারুল ইসলাম, অ্যান আউটস্ট্যান্ডিং কন্ট্রিবিউশন টু দ্য মর্ডান মুভমেন্ট ইন সাউথ এশিয়া’ বিভাগে স্থপতি মাজহারুল ইসলামের নকশাকৃত ১৬টি স্থাপনা, ‘মুঘল ফোর্টস অব ঢাকা: এডাপ্টিভ স্টাইল অব মোঘল ফোর্টস অন ফ্লুভিয়াল ট্রেইন’ বিভাগে লালবাগ কেল্লা ও ঢাকার পার্শ্ববর্তী তিনটি জলদূর্গ, এবং ‘মোঘল অ্যান্ড কলোনিয়াল ব্রিক টেমপেলস অব বাংলাদেশ’ বিভাগে মোঘল এবং উপনিবেশিক সময়ের ৩৩টি মন্দির নির্বাচন করা হয়েছে।

সেমিনারে জানানো হয়, ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় একটি স্থান স্বীকৃতি পাওয়ার প্রথম ধাপ হলো টেনটেটিভ লিস্ট। একটি স্থান বিশ্ব ঐতিহ্য হওয়ার যোগ্য কি না, ইউনেস্কোর অপারেশনাল গাইড লাইন অনুযায়ী তা বিবেচনা করে এই লিস্ট তৈরি করা হয়। ইউনেস্কোর সহযোগিতায় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সেই লিস্ট তৈরি এবং হালনাগাদ করেছে। এগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। তারা স্থানগুলো যাচাই-বাছাই এবং অন্যান্য আইনি জটিলতা আছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ করবেন। এরপর টেনটেটিভ লিস্টের ওপর ভিত্তি করে যাচাই-বাছাই শেষে মন্ত্রণালয় যে প্রপোজালগুলোকে (বিভাগ/ক্যাটাগরি) ঠিক মনে করবে, সেগুলোকে বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য ইউনেস্কোতে পাঠানো হবে।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মো. আতাউর রহমানের সভাপতিত্বে অনলাইনে ‘সম্ভাব্য তালিকা হালনাগাদকরণ প্রক্রিয়া’ উপস্থাপনা করেন আইসিওএমওএস (ICOMOS) বাংলাদেশের সভাপতি ড. শরীফ শামস ইমন। হালনাগাদকৃত তালিকা সম্পর্কে আলোচনা করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. স্বাধীন সেন ও এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. আবু সাঈদ এম আহমেদ।

অনলাইন ও অফলাইনে অনুষ্ঠিত হওয়া সেমিনারটিতে আরও উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সাবিহা পারভীন, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আমিরুজ্জামান, অনলাইনে যুক্ত হন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. বদরুল আরেফীন, ইউনেস্কো বাংলাদেশ প্রতিনিধি বিয়াট্রিস কালদুন প্রমুখ।

ad

পাঠকের মতামত