16186

প্রাচীন স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন আব্দুল জব্বার মিয়া বাড়ি

নিউজ ডেস্ক: প্রাচীন স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন আব্দুল জব্বার মিয়া বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার কুতুবা ইউনিয়নের কালে সাক্ষি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রচীন স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন আব্দুল জব্বার মিয়া বাড়ি। উপজেলা সদর থেকে ওই বাড়ির দূরত্ব ৩-৪ কি.মি.। এখানেই দেখা মেলে ইতিহাস ঐতিহ্যের এক দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা ‘আব্দুল জব্বার মিয়া বাড়ি’।

স্থানীয়রা এ বাড়িকে কুতুবা মিয়া বাড়ি নামেও ডাকে। প্রতিদিনই বিভিন্ন বয়সের দর্শনার্থী এ বাড়িতে আসে। ঐতিহ্যের সাক্ষ্যের সাথে ছবি তোলে। এ জমিদার বাড়ির বিভিন্ন ভবন দেখে মনে হবে নিপুণ শিল্পীর অপূর্ব কারুকাজ। এক একটি ভবনের সৌন্দর্যের ভিন্ন মাত্রা। সুরম্য অট্রালিকার নকশা, অবয়ব দেখলে যে কারো চোখ জুড়িয়ে যাবে। ওই সময়ে কীভাবে এ বাহারী ভবন নির্মান করা হয়েছে সেটাও এক বিস্ময়। প্রায় ২০ একর জমির উপর এ জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল জব্বার মিয়া। এ বাড়িতে এখন তাদের পরবর্তী বংশধররা বসবাস করে আসছেন। বাড়িতে দুই/তিনতলা সুরম্য ১২টি অট্রালিকা রয়েছে। ওইগুলো ইট, চুন, সুরকির তৈরী। ছাদে আড়াআড়ি ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে লোহা ও সেগুনকাঠ (স্থানীয়দের ভাষায় লোহা কাঠ)। দরজা জানালা সেগুন কাঠের। এখনও বিবর্ণহীণ, চকচকে। ঘরের মেঝে সাদা পাথরে মোজাইক করার মত। ওই উপকরণগুলো কোলকাতা থেকে আনা। প্রতিটি ঘরের মাটি থেকে উপরের দিকে দেয়ালের পুরুত্ব ৩০ ইঞ্চির উপর। বাড়ির সু-উচ্চ সীমানা প্রাচীরও পঁয়ত্রিশ ইঞ্চির মত।

ads

তবে পৌরসভার প্রকৌশলী মিজানুর রহমান সরেজমিনে জানান, ওই সময় মোজাইক পাথর ছিলনা। এটা বিশেষ প্রক্রিয়ায় বসানো হয়েছে। প্রতিটি ঘর দৃষ্টিনন্দন কারুকাজে শোভিত। বাংলা ১৩১৯ সাল থেকে ১৩৫১ সালের বিভিন্ন সময়ে নির্মাণ করা হয় ঘরগুলো। বাড়ির সামনেই রয়েছে বৈঠকখানা ও কাচারি ঘর। সেখানে এখনো ‘টানা পাখা’ জমিদার বাড়ির ঐতিহ্য বহন করছে। বাড়ির পেছনেই রয়েছে বিশাল দীঘি, পুকুর ও ঘাট।

আব্দুল জব্বার মিয়ার পূর্ব-পুরুষ উত্তর শাহবাজপুরের ধন গাজী প্রথমে উপজেলার মানিকা ইউনিয়নে প্রথম বসতি স্থাপন করেন। তাঁর ছেলে মন গাজী আর মনগাজীর ছেলে বরকত উল্যাহ এ স্থানে এসে বসতী স্থাপন করেন। বরকত উল্যাহ তাঁরা প্রতিবেশীদের পানীয় জলের অভাব দূর করার জন্য একটি বিশাল দিঘী খনন করেন। এখনও ওই দিঘীর টলটলে পানিতে শত শত মানুষ গোসল করেন। বরকত উল্যার ছেলে জীবন হাওলাদার সরকারের কিছু হাওলা কিনে প্রথমে পাকা ভবন নির্মান করেন। জীবন হাওলাদারের মেঝ ছেলে তমিজউদ্দিন সম্পত্তি বাড়াতে থাকেন। এ তমিজউদ্দিনে ছেলে আব্দুল জব্বার মিয়া। তিনি বিপুল সম্পত্তির অধিকারী হয়ে চৌধুরী উপাধী গ্রহণ করেন। এছাড়া তিনি ১৯২৭ সালে তৎকালীন বাকেরগঞ্জ জেলা বোর্ডের কাছ থেকে ১১ টি দাগের সম্পত্তি খরিদ করেন। ১৯৩১ সালে তিনি কলকাতা ৯৫ নাম্বার মামলায় রায়ে মালিক ও দখলদার নিযুক্ত হন। সর্বশেষ তারঁ জমির পরিমান গিয়ে দাড়ায় প্রায় ৪ হাজার একর।

ads

তাঁর পরবর্তী বংশধর অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক জাহাঙ্গির আলম জানান, বাংলা ১২৫৫ সালে আব্দুল জব্বার চৌধুরীর জম্মগ্রহণ করেন তিনি। পুরো এলাকায় সমাজ সেবক ও দানশীল ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। আব্দুল জব্বার মিয়া মৃত্যুবরণ করেন ৯৬ বছর বয়সে ১৩৪১ সালে। তবে মৃত্যুর পূর্বে ১৩৩৭ সালে তিনি তার জমিদারির সব সম্পত্তি ওয়াক্ফ করে দেন। এ ওয়াক্ফ সম্পত্তির প্রায় ৫০ একর জমির উপর বর্তমান সরকারী আব্দুল জব্বার কলেজ ১৯৭২ সালে স্থাপিত হয়। তার চার ছেলের মধ্যে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট থেকে মজিবুল হক চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান আইনসভার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। মজিবুল হকের ছেলে রেজা-এ-করিম চৌধুরী(চুন্নু মিয়া) ছিলেন ভাষা সৈনিক ও ১৯৭০ সালের নির্বাচনের এমএলএ। জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলেও পুরো বাড়িটি এখনো সেই জমিদারি ঢঙে দাঁড়িয়ে।

ad

পাঠকের মতামত