13930

ভিডিও রেকর্ডে স্ত্রী ও শাশুড়ীকে দায়ী করে কুমিল্লার প্রবাসী জলিলের আত্মহত্যা!!

নিজস্ব প্রতিবেদক: “করোনার কারনে ব্যাবসার অবস্থা ভালো না, প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা দেনা শরিকার (মালিকের) কাছে। ব্যাংকে যে টাকা আছে এগুলো খরচ করো আপাতত। আমি কয়েকমাস টাকা দিতে পারবো না। কয়েকদিন পর দেশে আসতেছি। যদি আরো দরকার হয় টাকার তাহলে শহরের একটা জমি বিক্রি করো” ফোনে সৌদি আরব প্রবাসী গাজী জলিলের কথা শুনে স্ত্রী আশরাফন নাহার পান্না ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন, “টাকা না দিলে কোন সম্পর্ক নেই তোমার সাথে, বাচ্চাদের লেখাপড়ার খরচ অনেক এগুলো কে দেবে। দেশে আসার দরকার নেই। কি ভাবে দেবে জানিনা মাসে ১লাখ ২০হাজার টাকা সংসার খরচ দিতেই হবে। খরচের টাকা না দিতে পারলে গলায় দড়ি দাও নয়তো মরে যাও, আমার কিছু যায় আসে না ” ফোনের কথা শেষ করে ফোন নাম্বার ও ইমু ব্লক করে রাখে প্রবাসী জলিলের স্ত্রী। এরপর মেডিকেল পড়ুয়া মেয়ে ও কলেজ পড়ুয়া ছেলের মোবাইলে বারবার অনুরোধ অনুনয় করেও স্ত্রী সাথে কথা বলতে পারেনি। বারবার স্ত্রীর ফোনে কল করেও কোন সারা পায়নি জলিল। নিজেকে আর সামলাতে পারেনি, এরপর স্ত্রী’র কথা মতোই গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।

সৌদি আরব হাঈল শহরের সাদিয়ান মার্কেটের প্রবাসী ব্যাবসায়ী কুমিল্লা সদর উপজেলার কালির বাজার ইউনিয়নের মনসাশন গ্রামের গাজী আইয়ুব আলীর ছেলে গাজী জলিল। বরুড়া উপজেলার মহেশপুরে গ্রামের হাজী আব্দুল্লার মেয়ে আশরাফুন নাহার পান্নার সাথে পারিবারিক ভাবে বিয়ের কিছুদিন পর, জীবন জীবিকা ও সংসারের সুখের জন্য প্রায় ২৫বছর আগে পাড়ি জমায় মরুর দেশে। উত্তপ্ত মরুর দেশে হাড় ভাঙা খাটুনি খেটে টাকা জমিয়ে একসময় নিজেই দোকান নিয়ে শুরু করে ব্যাবসা। নিজে খুব একটা লেখাপড়া করেনি জলিল। তাই দুচোখে স্বপ্ন ছিলো সন্তানদের নিয়ে। নিজের সুখ স্বাদ বিসর্জন দিয়ে ছেলে মেয়েকে মানুষের মত মানুষ পরিবারের সুখের জন্য দিনরাত খেটে গেছেন বিদেশ বিভুইয়ে। আর্থিক অবস্থা কিছুটা ভালো হলে পরিবার ও সন্তানদের নিয়ে যান নিজের কাছে। বেশ কয়েক বছর সেখানেই রেখেছেন তাদের। এরপর লেখাপড়ার কথা ভেবে তাদের পাঠিয়ে দেন দেশে। নিজের শত কষ্টের মাঝেও স্ত্রী সন্তানদের এতটুকু অভাব অনটন বোধ করতে দেননি। বড় মেয়েকে ডাক্তারি পড়াচ্ছেন ঢাকা মেডিকেলে, সে এবার ৩য় বর্ষের ছাত্রী। এক ছেলে ইন্জিনিয়ারিংএ পড়ছে ক্যাম্ব্রিয়ানে। ছোট ছেলে কুমিল্লা জিলা স্কুলের শিক্ষার্থী। নিজে লেখাপড়া না করতে পারলেও সন্তানদের উচ্চ শিক্ষিত করার স্বপ্ন পুরনে কোন কার্পণ্য করেনি জলিল। আরাম আয়েশ ভুলে গোডাউনেই থেকেছেন কিছু পয়সা বাঁচাতে। প্রবাস মানেই যেন টাকার খনি, প্রবাসীর প্রতিটা পয়সা কি করে পকেটে আসে তা হয়তো দেশে থেকে স্বজনরা উপলব্ধিও করতে পারে না। জলিলের বেলায় ও এর ব্যাতিক্রম হয়নি। পরিবারের সুখের জন্য নিজে সর্বোচ্চ ত্যাগ শিকার করেছেন বিয়ের পর থেকেই। খেয়ে না খেয়ে স্ত্রী সন্তানদের জন্য ভেবেছেন কেবল। কিন্তু ফলাফল? স্ত্রী সন্তানের জন্য নিজের সুখকে জলাঞ্জলি দেয়া লেখাপড়া না জানা জলিল কি জানতো যাদের জন্য তার এই ত্যাগ তারা তাকে কেবল প্রয়োজনই মনে করে প্রিয়জন নয়!! উচ্চ শিক্ষিত ডাক্তারি পড়া মেয়ে যখন বলে, তুমি মুর্খ অশিক্ষিত, মাকে ডিভোর্স দিয়ে দাও তোমাকে ২০লাখ টাকা দিয়ে দেব!! প্রাণপ্রিয় স্ত্রী যখন বলে, দেশে আসার দরকার নেই, টাকা পাঠাও, টাকা দিতে না পাড়লে মরে যাও, গলায় দড়ি দাও কিছু যায় আসে না। তোমার সাথে শুধুই টাকার সম্পর্ক। যখন লোকমুখে শুনতে হয় স্ত্রী পরোকিয়ায় লিপ্ত পরপুরুষের সাথে!

ads

আত্মহত্যার আগে একবার কথা বলার জন্য স্ত্রী কাছে তার করুন আকুতি, সন্তানদের কাছে হাজারো অনুনয়ের ইমুতে পাঠানো অডিও বার্তাগুলো ফেসবুকে ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে। দেশ ও জাতির কাছে শাশুড়ী ও স্ত্রীর অমানবিক আচরণ ও নির্যাতনের কথা ভিডিও করে রেখে গেছেন। নিজেকে উজার দেয়া প্রবাসী জলিল অবশেষে গত ২৩ জুলাই বাংলাদেশ সময় আনুমানিক সন্ধ্যা ৭টায় নিজের থাকার ঘর সেই গোডাউনেই গলায় দড়ি দিয়ে পাড়ি জমায় পরপারে। পরদিন সকালে সহকর্মী ও ভাতিজা এসে লাশ দেখতে পায়। খবর পেয়ে স্থানীয় সৌদি পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে দেশে পাঠানোর অপেক্ষায় সে দেশের একটি হাসপাতালে রয়েছে বলে জানিয়েছেন সৌদি প্রবাসী ছোট ভাই গাজী খলিল।
মুঠোফোনে প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় খলিলের তিনি জানায়, ভাই মৃত্যুর আগে ভিডিওতে শাশুড়ী ও স্ত্রী কে দায়ী করে গেছেন এবং দেশবাসীর কাছে বিচার চেয়েছেন। পরোকিয়ার কারনে ভাইকে দেশে যেতে নিষেধ করতো ভাবি। দেশে যেতে চাইলেই টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করতো। মানুষিক নির্যাতন করে ভাইকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে ঐ নারী।

প্রবাসী ছেলের লাশের অপেক্ষায় দিন গুনছে মা, সন্তানের মৃত্যু শোক যেন কিছুতেই কাটছে না তার। বিলাপ করে কাঁদে ওঠেন কিছুক্ষণ পরপর। পুত্রবধূর অমানবিক আচরণ আর তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তার সে কান্নার সুরে। ছেলের লাশটা একটিবার দেখার আকুতি তার। সবচেয়ে বড় বোঝা পিতার কাধে বয়সের ভারে নুয়ে পড়া পিতা গাজী আইয়ুব আলী নির্বাক সন্তান হারানোর শোকে।

ads

মুঠোফোনে প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় খলিলের তিনি জানায়, ভাই মৃত্যুর আগে ভিডিওতে শাশুড়ী ও স্ত্রী কে দায়ী করে গেছেন এবং দেশবাসীর কাছে বিচার চেয়েছেন। পরোকিয়ার কারনে ভাইকে দেশে যেতে নিষেধ করতো ভাবি। দেশে যেতে চাইলেই টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করতো। মানুষিক নির্যাতন করে ভাইকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে ঐ নারী।

প্রবাসী ছেলের লাশের অপেক্ষায় দিন গুনছে মা, সন্তানের মৃত্যু শোক যেন কিছুতেই কাটছে না তার। বিলাপ করে কাঁদে ওঠেন কিছুক্ষণ পরপর। পুত্রবধূর অমানবিক আচরণ আর তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তার সে কান্নার সুরে। ছেলের লাশটা একটিবার দেখার আকুতি তার। সবচেয়ে বড় বোঝা পিতার কাধে বয়সের ভারে নুয়ে পড়া পিতা গাজী আইয়ুব আলী নির্বাক সন্তান হারানোর শোকে।

বড় ভাই গাজী কফিল উদ্দিন ও আলম জানায়, ভাইয়ের লাশ দেশে আসেনি এখনো। মৃতদেহ দেশে আনার জন্য সর্বোচ্চো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। হয়তো কয়েক দিনের ভেতরেই লাশ দেশে আসবে। তার আগেই পৈতৃক সম্পত্তি ভিটা এসব ভাগ বাটোয়ারা করে দিতে বলছে ভাইয়ের বৌ। এসব বিক্রি করে নাকি সে শহরে বাড়ি করে থাকবে। তার পরোকিয়ার কারনেই ভাইয়ের জীবন দিতে হয়েছে। প্রতিনিয়ত মানুষিক ভাবে নির্যাতন ও টাকা পয়সার জন্য চাপ দিয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে ভাইকে। কথা পর্যন্ত বলতো না, সবসময় অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতো সন্তানদের সামনেই। ফোনে নাম্বার ব্লক করে রাখতো টাকা পাঠাতে একটু দেরী হলে। কোটি টাকার সম্পদ দিয়ে গেছে স্ত্রী সন্তানদের নামে, কখনো কোন অভাব বুঝতে দেয়নি তাদের । ভাই দেশে আসতে চাইলে ভাবির পরোকিয়ার কারনে তাকে দেশে আসতে নিষেধ করতো। ভিডিও রেকর্ডে ভাই সব অভিযোগ রেখে গেছে। স্ত্রী ও শাশুড়ী ভাইকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করেছে, মানুষিক ভাবে বর্বর নির্যাতন করেছে। আদালতে এবিষয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। ঠান্ডা মাথায় মানুষিক নির্যাতন করে আত্মহত্যায় বাধ্য করা হত্যার শামিল। আমারা ভাইকে হত্যার সুবিচার চাই।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে প্রবাসী জলিলের স্ত্রী’র সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। তার ব্যবহৃত নাম্বারে ফোন দিলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে অপর এক স্বজনের কাছে ফোন তুলে দেন। তিনি নিজেকে পান্নার মামা দাবী করে সব অভিযোগ এবং মৃত্যুর আগে ভিডিওতে বলে যাওয়া জলিলের সকল অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবী করেন।

ad

পাঠকের মতামত