8698

দেবীদ্বারে নতুন ৫ জন করোনা পজেটিভ সনাক্ত

দেবিদ্বার প্রতিনিধি: কুমিল্লায় সবচেয়ে বেশী করোনা’র ঝুকিতে দেবীদ্বার; আজও ৩পরিবারের ব্যবসয়ি, শিক্ষার্থী, কর্মচারী, মা’-মেয়ে সহ ৫জনের করোনা পজেটিভ সনাক্ত হয়েছে।

গত ৩০এপ্রিল সকাল সোয়া ৭টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে দেবীদ্বার নিউমার্কেট পান বাজারে অবস্থিত শঙ্কর হোমিও হল’র স্বত্বাধিকার প্রবীণ হোমিও চিকিৎসক ডাঃ সুকুমার চন্দ্র দে(৭২) নিউমার্কেটস্থ তার নিজ বাসায় পরলোকগমন করেন।

ads

তার মৃত্যুর পর উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে মৃত: ডাঃ সুকুমার চন্দ্র দে’র পরিবার ও পরিবারের সাথে সংশ্লিষ্ট ১৪জন সহ মোট ১৮জনের নমুনা কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিষ্ঠিত নতুন পিসিআর ল্যাবে প্রেঢ়রন করা হয়। রোবার ওই নমুনা রিপোর্টের ফলাফল আসে দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেবলক্সে। ১৮টি নমুনার মধ্যে ৫টি পজেটিভ এবং ১৩টি নেগেটিভ আসে। এ পর্যন্ত আইইডিসিআর-এ এবং কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিষ্ঠিত নতুন পিসিআর ল্যাবে দেবীদ্বারের ৯০ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয়েছে, এর মধ্যে ৭০ জনের নেগেটিভ ও ২০ জনের পজেটিভ রিপোর্ট পাওয়া গেছে। মারা গেছে তিন জন। একজন আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসাধীন আছে, বাকী ১৬ জন নিজেদের বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

পজেটিভ সনাক্তকারীদের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ডাঃ সুকুমার চন্দ্র দে’র সংস্পর্শে থাকা ছেলে ডাঃ প্রদীপ কুমার দে’র স্কুলে পড়ুয়া শিক্ষার্থী অনিক দে(১৭), তার গুনাইঘর গ্রামের বাড়ির সম্পর্কে ভাতিজা বিশ্বজিৎ দে’র স্ত্রী অর্চনা দে(৩৫), কণ্যা স্কুল পড়ুয়া ছাত্রী পুষ্পিতা দে পুজা(১৫), ভাড়াটিয়া বরুরা উপজেলার অধিবাসী দেবীদ্বার নিউমার্কেট চান্দিনা রোডের মাথায় সমবায় মার্কেটের সেলুন ব্যবসায়ি সুজন চন্দ্র দাস((২৫), ডাঃ সুকুমার চন্দ্র দে’র স্বত্বাধিকারী “শংকর হোমিও হল’র কর্মচারী দেবীদ্বার পৌর এলাকার মাছিমনগর গ্রামের সৈকত ঘোষ(২৪)। এদের মধ্যে বিশ্বজিত দে ও সুজন চন্দ্র দাসের পরিবার সামাদ ম্যানশনের “শংকর হোমিও হল’র উপর ডাঃ সুকুমার চন্দ্র দে’র ৫তলা ভবনের ভাড়াটিয়া। এসব তথ্য জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আহাম্মেদ কবির।

ads

এদিকে, সুজন চন্দ্র দাস চান্দিনা রোডের সমবায় মার্কেটের যে সেলুনে কাজ করতেন, সেটিতে লকডাউনের মধ্যেও সাঁটার ফেলে কাজ চলতো বলে জানা গেছে। এতে কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের আশঙ্কা করছেন অনেকে। অপর দিকে “শংকর হোমিও হল’-এ ঔষধ নিতে আসা হোমিও ডাক্তারগন এবং চিকিৎসা সেবা নিতে আসা লোকজনের তালিকাও বিশাল। ওরা কে কেমন কোথায় কি অবস্থায় আছেন তারও কোন পরিসংখ্যান বা তদারকীও নেই। অনেকেরই ধারনা দ্রুততার সাথে প্রশাসনের নজরধারীতে খোঁজ খবর নিয়ে এদের নমুনা পরীক্ষা এবং সেবা ও সচেতনতার আওতায় আনা খুবই জরুরী।

প্রয়াত সুকুমার ডাক্তারের ছেলে ডাঃ প্রদীপ দে জানান, তার বাবা করোনা উপস্বর্গের কোন লক্ষনই অনুভব করেননি। এমনিতে দির্ঘদিন অসুস্থ্য ছিলেন, অসুস্থ্যতার মধ্যেই রোগিরা আসলে বাসায় থাকতে চাইতেন না। আমরাও অনেক বুঝিয়েছি। তিনি অর্থের লোভি নন, রোগিদের সেবার মানষিকতায় চেম্বারে বসতেন। বলতেন, আমার শেষ সময়, যে ক’দিন বেঁচে আছি রোগিদের সেবা করেই মরতে চাই। রোগিরা আমাকে ভালো বাসেন বলেই আমার কাছে চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। আমার ছেলে অনিক দে বাবাকে খুব পছন্দ করতেন, বাবার কাছেই সে বেশী থাকত, সে কারনে হয়তো তার নমুনা পজেটিভ আসছে। আমার পরিবারের অন্যান্যরা সুস্থ্য এবং ভালো আছেন। আমার ছেলে অনিক দেও ভালো আছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু বিভ্রান্তিকর তথ্যের কারনে আমার পরিবার বিব্রত এবং সম্মানের উপর আঘাত আসছে। এসব দেখে এবং শুনে আমার ছেলে সহ পরিবারের লোকজন হতাশ, মর্মাহত এবং করোনা আতঙ্কে বিব্রত।

তবে এ পরিবারে করোনা আঘাত করার পেছনের কারন বলতে পারছেননা পরিবার ও অন্যান্যরা। রোগির কাছ থেকে নাকি নবিয়াবাদ গ্রামের জীবণ কৃষ্ণ দাসের ভাইসরাসের প্রভাবে তা নিয়েও সন্দিহান। কেউ কেউ বলছেন, ডাঃ সুকুমারের পরিবার নারায়নগঞ্জ একটি কীর্তন অনুষ্ঠান থেকে ফিরে আসার এ রোগের প্রভাব পড়তে পারে বলেও সন্দেহ করছেন।

ওই ঘটনার পর প্রশাসন সম্পূর্ন নিউমার্কেট এলাকা লক ডাউনের আওতায় আনলেও লক ডউন মানছেনা কেউ। স্থানীয় যুব লীগ, সেচ্ছা সেবক লীগ ও ছাত্রলীগের একটি দল স্বপ্রনোদীত হয়ে সড়কে যানবাহন চলাচলে, সর্বসাধারনের চলাচলে, দোকান পাঠ বন্ধে এবং বিভিন্ন সড়ক বন্ধ করেও লক ডাউন অর্থবহ করতে পারছেনা। এক্ষেত্রে প্রশাসনের ভূমিকা বা আইনশৃংখলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। সাধারন মানুষ প্রশাসনের লোকদের যতটা ভয় পায় স্থানীয় যুবকদের ততটা গুরুত্ব দিচ্ছেনা। লক ডাউন কার্যকর করতে সচেতনতার বিকল্প নেই। এখানে প্রধান প্রতিবন্ধকতা ধর্মান্ধতা, গ্রামের সাধারন মানুষের অসচেতনতা এবং অর্থ যোগানে রিক্সা- সিএনজি চালক, ফল দোকান সহ কিছু অন্যান্য দোকান খুলে রাখতে দেখা যাচ্ছে। কঠোর ভাবে দমন ও অমানবিক আচরনওে সমালোচনার ঝর উঠে। এছাড়া পুলিশ প্রশাসনের তদারকীও খুব একটা লক্ষ্যনীয় নয়।

গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বন্ধ করায় এবং জরুরী রোগি ও জরুরী প্রয়োজনে গমনাগমনকারী লোকদের বহনকারী রক্সিা- সিএনজি আটকানোর কারনে ক্ষোভ প্রকাশ করে অনেকেই সেল ফোনে অভিযোগ জানাচ্ছেন। এছাড়া নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দোকান বন্ধের ব্যাপারে জানান, এসব কাচা মাল, ফলের দোকান, মূদী দোকান টানা বন্ধ না রেখে প্রতিদিন ভোর থেকে সকাল ৮/৯টা পর্যন্ত খোলা রাখার ব্যবস্থার দাবী জানান।

দেবীদ্বার আগত প্রবাসীদের নিয়ে আতঙ্ক কাটতে না কাটতেই শুরু হল, গার্মেন্টস কর্মীদের আগমন, নরায়নগঞ্জ, ঢাকা, সাভার ও চট্রগ্রাম থেকে আগত লোকজন নিয়ে আতঙ্ক। ওদের নিজ বাড়ি- ঘরে আগমন নিয়েও প্রতিবেশী ও স্বজনদের মধ্যে অনেক অনাকাংখীত ঘটনা ঘটে গেছে। নারয়নগঞ্জ,ঢাকা সহ বিভিন্ন এলাকায় মৃত ব্যক্তিদের জানাযা- দাফনেও নানা প্রতিকূল, বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে দেখা গেছে।

নারায়নগঞ্জের ব্যবসায়ি দেবীদ্বার উপজেলার নবিয়াবাদ গ্রামের জীবন কৃষ্ণ সাহা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কারনে নবিয়াবাদ গ্রাম, দেবীদ্বার সদর, চান্দিনা সদর, কুমেক হাসপাতালের অন্তত ২২ব্যাক্তিকে হোম কোয়রাইন্টেনে এবং হাসপাতাল, কিলনিক, ফার্মেসী সহ ৫প্রতিষ্ঠান ও বাড়ি লক ডাউন করতে হয়েছে। চান্দিনা একজনের নমুনা পরীক্ষায় পজেটিভ পাওয়া গেছে। করোনায় দ্বিমতীয় মৃত্যুটি হয় বরকামতা ইউপি সদস্য বাগুর গ্রামের শাহ জালাল মেম্বার(৬০)’র। তার মৃতুতেও বাগুর ও নবিয়াবাদ গ্রামে ৯জন আক্রান্ত হয়, যারা এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নবিয়াবাদ গ্রামের এক দম্পতিও আক্রান্ত রয়েছেন। সর্বশেষ গুনাইঘর গ্রামের হোমিও চিকিৎসত ডাঃ সুকুর চন্দ্র দে’র মৃত্যুতে করোনায় আরো ৬জন আক্রান্ত হয়েছেন। তার মৃত্যুতে গুনাইঘর গ্রামে ৩৩পরিবারের বাড়ি ও দেবীদ্বার নিউমার্কেট এলাকা লক ডাউন করা হয়েছে।

ad

পাঠকের মতামত