রেলকে বন্ধ নয়, লাভজনক করতেই পদক্ষেপ নিচ্ছি: প্রধানমন্ত্রী
ডেস্ক নিউজ: শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন নয়, রেলের মাধ্যমে অল্প খরচে পণ্য পরিবহনের ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। তাই রেলকে বন্ধ নয় এটিকে লাভজনক করতেই নানা পদক্ষেপের কথা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার (১৬ অক্টোবর) সকালে গণভবনে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ঢাকা-কুড়িগ্রাম-ঢাকা রুটের আন্তঃনগর ট্রেন চালুকরণ এবং রংপুর এক্সপ্রেস ও লালমনিরহাট এক্সপ্রেসের র্যাক প্রতিস্থাপনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চাই, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির সাথে সাথে আর্থিক ও সামাজিক উন্নতি হোক, আর যেন কখনোই মঙ্গা শব্দটা কুড়িগ্রামসহ উত্তরবঙ্গের মানুষকে উচ্চারণ করতে না হয়। তাই রেল যেমন একেবারে মুমূর্ষু অবস্থায় ছিল এবং লাভজনক ছিল না বলে যারা এটাকে বন্ধ করতে চেয়েছিল আমরা তাদের দেখাতে চাই, একে লাভজনক করা যেতে পারে, উন্নত করা যেতে পারে।’
বিএনপি শাসনামলের চিত্র তুলে ধরে দেশের উন্নয়নের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয় হল, রেলে সাধারণ মানুষই সব থেকে বেশি চলাচল করে। এর আগে যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা একে একে রেলকে সম্পূর্ণ রূপে শুধু ধ্বংস করা না, সেটা বন্ধ করে দেওয়ারই পরিকল্পনা নিয়েছিল।
‘কোনো কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থার নির্দেশনা ছিল, কোনটা লাভবান না, সেটা বন্ধ করে দাও। তেমনিভাবে এই নির্দেশনায় রেল যোগাযোগটাকেই সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়ার জন্য অনেকগুলি রেললাইন বন্ধ করে দেয়, অনেকগুলি স্টেশন বন্ধ করে দেয়। বিএনপিকে ইঙ্গিত করে বলেন প্রধানমন্ত্রী।
বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে যেহেতু লাভবান না সেহেতু চলবে না-এই ধরনের একটা নীতি নিয়েছিল এবং তারা সেই মোতাবেক কিছু পদক্ষেপও নেয়। আমি মনে করি যে, এটা আমাদের দেশের জন্য একটা আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত ছিল। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের পদক্ষেপে যমুনা নদীর উপর রেলযোগাযোগ তৈরিতে উত্তরবঙ্গের সাথে রাজধানীর একটা ভাল যোগাযোগের সুব্যবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, সিদ্ধান্ত নিয়েছি, উত্তরবঙ্গে যেসব রেল যোগাযোগ বন্ধ ছিল, সেগুলো চালু করেছি। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হওয়ার পর যে সমস্ত লিঙ্কগুলি বন্ধ হয়েছিল, সেগুলি আবার আমরা চালু করে দিতে চাচ্ছি। যেটা আমাদের রেলকে আরও লাভবান করবে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার আরও উন্নতি হবে।
রেল যোগাযোগ সহজ হলে দেশের পণ্য পরিবহন সহজ হবে এবং উৎপাদিত পণ্যের বাজারজাত করার সুযোগ পেলে কৃষকরা বেশি লাভবান হবে বলেও মনে করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, কুড়িগ্রামকে সব সময় আমরা গুরুত্ব দেই। কারণ কুড়িগ্রাম, রংপুর বা ওই অঞ্চলটাই ছিল দুর্ভিক্ষ পীড়িত এলাকা। শুধু কুড়িগ্রাম বলে না। আমি মনে করি, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট থেকে শুরু করে একেবারে নীলফামারী, গাইবান্ধাসহ যেসব এলাকা সবচেয়ে বেশি দুর্ভিক্ষ পীড়িত ছিল, সেখানে আমি নিজে ঘুরে ঘুরে দেখেছি। সেইসব অঞ্চলেই স্বাভাবিকভাবে উন্নয়নের ব্যাপক কর্মসূচি নিচ্ছি।
তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সারা বাংলাদেশকে রেল যোগাযোগের আওতায় নিয়ে আসব। এমনকি দক্ষিণাঞ্চলও। কুড়িগ্রাম যেমন রেল দেখেনি, টাঙ্গাইল কখনও রেল দেখেনি, বঙ্গবন্ধু সেতুতে রেল দেওয়ার পর তারা রেল দেখল। যমুনা নদীতে আবার নতুন করে রেল লাইন তৈরির ব্যবস্থা নিয়েছি। পাশাপাশি একেবারে বরিশাল পর্যন্ত রেললাইন নিয়ে যাচ্ছি। এখান থেকে মংলা পোর্ট পর্যন্ত এবং পদ্মাসেতুর সাথে রেল যোগাযোগ আমরা করে দিয়েছি। তাতে মুন্সিগঞ্জ হয়ে একেবারে বরিশালের সেই পায়রা বন্দর পর্যন্ত চলে যাবে। প্রায় বরগুনার কাছাকাছি চলে যাচ্ছি রেল নিয়ে। সারা বাংলাদেশেই একটা রেল নেটওয়ার্ক করে দিচ্ছি। এরইমধ্যে প্রায় সব জায়গায় ডুয়েল গেজ লাইন করে দিয়েছি।’ ে এছাড়াও দ্রুত গতি সম্পন্ন রেল লাইন নির্মাণেরও একটা পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি। ঢাকার সাথে উত্তরবঙ্গ এবং চট্টগ্রাম, বরিশাল প্রত্যেকটা বিভাগে যাতে একটা রেল সংযোগ হয় তার জন্য ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলেও দাবি করেন শেখ হাসিনা।
১৫ আগস্ট জাতি পিতার নির্মম হত্যাকান্ডের ঘটনার পর পরবর্তীতে সংবিধান লংঘন করে ক্ষমতায় আসা সরকারের সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, যারা অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে হত্যা-ষড়যন্ত্রের মধ্যে দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল, তারা তাদের অবৈধ ক্ষমতা বৈধ করার দিকেই মনোনিবেশ ছিল। ক্ষমতাকে তারা নিয়েছিল নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করার হাতিয়ার হিসেবে, দেশের মানুষের জন্য না। দেশের মানুষ অবহেলিত ছিল। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকারে আসে। আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর থেকে মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ শুরু করে।
এর আগে গণভবনে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে তিনি ময়মনসিংহ- গফরগাঁও টোক সড়কে বানার নদীর উপর সেতু, ঢাকা- চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ইন্দ্রপুল হতে চক্রশালা পর্যন্ত বাঁক সরলীকরণ , সাতক্ষীরা শহর বাইপাস সড়ক, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভুলতায় ৪ লেন বিশিষ্ট ফ্লাইওভার, মুন্সিগঞ্জে ১৩টি ঝুঁকি সেতুসমহ স্থায়ী কংক্রিট সেতু দ্বারা প্রতিস্থাপন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন রেল সচিব মোয়াজ্জেম হোসেন। অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ নেতা ও এমপিরা উপস্থিত ছিলেন। আর কুড়িগ্রাম রেল স্টেশন প্রান্ত থেকে জেলা প্রশাসকের পরিচালনার মাধ্যমে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। সেখানে স্থানীয় প্রশাসনসহ দলীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।