2498

শান্তিতে নোবেল বিজয়ী আবি আহমেদ

ডেস্ক নিউজ: ইরিত্রিয়ার সঙ্গে দুই দশকের যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকার স্বীকৃতি হিসেবে চলতি বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ আলী।

রওয়ের নোবেল কমিটি শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে শততম নোবেল শান্তি পুরস্কারের বিজয়ী হিসেবে আবি আহমেদের নাম ঘোষণা করেন।

ads

সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের শেষ ইচ্ছা অনুসারে গবেষণা, উদ্ভাবন ও মানবতার কল্যাণে অবদানের জন্য প্রতি বছর চিকিৎসা, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, সাহিত্য, শান্তি ও অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়।

পুরস্কার বাবদ একটি সোনার মেডেল ও ৮০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার (১২ লাখ ৫০ হাজার ডলার) পাবেন আবি আহমেদ। আগামী ১০ ডিসেম্বর অসলোতে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কার দেওয়া হবে।

ads

পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ার চেষ্টায় গত বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পায় ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেইন টু অ্যাবোলিশ নিউক্লিয়ার উইপনস- আইসিএএন।

আবি আহমেদ আলী

ফেডারেল ডেমক্রেটিক রিপাবলিক অব ইথিওপিয়ার সাবেক সেনা গোয়েন্দা কর্মকর্তা আবি আহমেদ ২০১৮ সালের ২ এপ্রিল দেশটির চতুর্থ প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন।

১৯৭৬ সালের ১৫ অগাস্ট ইথিওপিয়ার ঐতিহাসিক কাফা প্রদেশের (বর্তমান নাম ওরোমিয়া রিজন) বেশাশা শহরে জন্মগ্রহণ করেন আবি। তার বাবা আহমেদ আলি ছিলেন মুসলমান ওরোমো সম্প্রদায়ের লোক। আর তার চার স্ত্রীর মধ্যে আবির মা তেজেটা উল্ডে ছিলেন খ্রিস্টান আমহারা সম্প্রদায়ের।

মাধ্যমিক শেষ করে ইথিওপিয়া ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্সে যোগ দেন আবি। আদ্দিস আবাবা ইউনিভার্সিটি থেকে ২০১৭ সালে তিনি ফিলসোফিতে পিএইচডি করেন।

ডিফেন্স ফোর্সের সহকর্মী আমহারা সম্প্রদায়ের জিনাস তায়াচিউকে বিয়ে করেন আবি। এ দম্পতির তিন মেয়ে ও একটি পালক পুত্র রয়েছে।

রাজনীতিতে আবি

২০১০ সালে ওরোমো ডেমক্রেটিক পার্টি (ওডিপি) থেকে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন আবি। ওই সময়ে তার জন্মস্থান ‘জিম্মা জোনে’ মুসলমান ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে হরহামেশাই দাঙ্গা বেঁধে থাকত। সেই দাঙ্গায় ‍বহু মানুষ নিহত হয়।

সে সময় পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে দাঙ্গা ঠেকাতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন আবি। বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে ওই অঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন। এজন্য তিনি ‘রিলিজিয়াস ফোরাম ফর পিস’ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।

২০১৫ সালে ওডিপির এজন্য নির্বাহী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন আবি। ওই বছরই তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন।

পরে ওরোমি অঞ্চল, বিশেষ করে আদ্দিস আবাবার চারপাশে অবৈধভাবে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকায় চলে আসেন আবি। আন্দোলনের মুখে জমি অধিগ্রহণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তারপর তিনি বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান।

রাষ্ট্রক্ষমতার

টানা তিন বছরের আন্দোলন এবং বিক্ষোভের মুখে ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ইথিওপিয়ার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হিলেমারিয়াম দেসালেং পদত্যাগে বাধ্য হন। সেই সঙ্গে তিনি দেশটির ক্ষমতাসীন জোট ইপিআরডিএফ এর প্রধানের পদও হারান।

ইথিওপিয়ার অলিখিত নিয়ম অনুযায়ী ক্ষমতাসীন জোটের প্রধানই প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। দেশটির চার দল ওডিপি, এডিপি, এসইপিডিএম এবং টিপিএলএফ মিলেই এ জোট।

হিলেমারিয়ামের পদত্যাগের পর প্রথমবারের মত ইপিআরপিএফ জোটের নেতা নির্বাচনের জন্য ভোট হয়। ওই সময় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ওডিপি প্রধান লেমা মেগেরসা এবং আবি আহমেদকে এগিয়ে রেখেছিলেন।

লেমা মেগেরসা দলীয় প্রধান হলেও পার্লামেন্ট সদস্য ছিলেন না। আর ইথিওপিয়ার সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী হতে হলে অবশ্যই পার্লামেন্ট সদস্য হতে হবে। যে কারণে লেমা মেগেরসার বদলে আবি আহমেদকেই ওডিপি প্রধান ঘোষণা করা হয়।

২০১৮ সালের ১ মার্চ ইপিআরপিএফ এর নির্বাহী কমিটির সদস্যদের ভোটে আবি জোট প্রধান নির্বাচিত হন এবং পরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।

যুদ্ধের অবসান

ক্ষমতা নেওয়ার পর রাজনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে ইথিওপিয়ার জনগণের মধ্যে ঐক্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং ইথিওপিয়া-ইরিত্রিয়া সীমান্তে যুদ্ধের অবসানে আলোচনায় বসার প্রতিশ্রুতি দেন আবি।

আফ্রিকার দরিদ্র এ দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে ১৯৯৮ সালের মে মাস থেকে ২০০০ সালের জুন মাস পর্যন্ত যুদ্ধ হয়। তার রেশ চলে পরের দেড় যুগ ধরে।

আবি আহমেদের উদ্যোগে ২০১৮ সালে দুই দেশ একটি শান্তি চুক্তিতে উপনীত হয়, যা তাকে নোবেল পুরস্কার এনে দিল।

ad

পাঠকের মতামত