দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে: ওবায়দুল কাদের
সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় তিনি এ কথা জানান। আগামী ২৩ জুন দলের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সফল করতে এই বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিভিন্ন নির্বাচনে যারা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলের পরবর্তী কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অক্টোবরে দলের জাতীয় কাউন্সিলের আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ আওয়ামী লীগের সব ইউনিট এবং সহযোগী-ভাতৃপ্রতীম সংগঠনের সম্মেলন শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিককালে শৃঙ্খলা বিচ্যুতি নিয়ে আমাদের নেত্রীর (শেখ হাসিনা) সঙ্গে আলোচনা করেছি। নেক্সট ওয়ার্কিং কমিটির মিটিংয়ে আমরা শৃঙ্খলার ব্যাপারে আরো কঠোর হবো। যারা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। নেত্রীও এমন আভাস দিয়েছেন।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, দলের সহযোগী সংগঠনগুলো যাদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে, তাদের দলের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে সম্মেলন করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কেবল সহযোগী সংগঠন নয়, আওয়ামী লীগের জেলা, মহানগর, উপজেলা ও থানা শাখার যেসব কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে, তাদেরও স্ব স্ব সম্মেলন শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দলের জাতীয় সম্মেলনের আগেই তাদের সম্মেলন করার এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কমিটি করতে গিয়ে নিজের লোক না খোঁজার জন্য নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, কমিটি করতে গিয়ে নিজের লোক না খুঁজে দলের লোক খুঁজবেন। কেউই নিজের থাকবে না। সবাই আওয়ামী লীগের, সবাই শেখ হাসিনার সঙ্গে থাকবে।
তিনি বলেন, নিজের লোক কখনও চিরস্থায়ী থাকে না, দলে কারো দায়িত্ব চিরস্থায়ীও নয়। দায়িত্বে থাকতে স্বচ্ছতার সঙ্গে ভালো কাজ করতে হবে ও সৎভাবে চলতে হবে। তাহলেই দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার পরও সবাই সম্মান করবে, সালাম দেবে। আর দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কোটারি করলে, দলের মধ্যে উপদল সৃষ্টি কলে এবং ঘরের মধ্যে ঘর করতে গেলে, দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর কেউ সালামও দেবে না। তাই দলের জন্য কাজ করুন। দলের দুঃসময়ের নেতাকর্মীদের অবহেলা করবেন না। যারা অসহায় অসচ্ছল তাদের পাশে দাঁড়ান।
সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু থেকে শুরু করে দলের অভ্যন্তরীণ কলহ ও কোন্দলের কারণগুলো দূর করার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে কাদের বলেন, দু’জন মানুষের দিকে তাকিয়ে রাজনীতি করুন। একজন মৃত বঙ্গবন্ধু, আরেকজন জীবিত শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়ুন। এটা পড়লে কারোরই বিপথে পরিচালিত হওয়ার সুযোগ থাকবে না। বঙ্গবন্ধু নেই, কিন্তু তার জীবনের ইতিহাস থেকে শিখতে হবে। আর শেখ হাসিনা কী অসম্ভব পরিশ্রম করেন, কল্পনাও করা যায় না। রাত দু’টায় ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তিনি বিরল দৃষ্টান্ত। সর্বক্ষণ তিনি এই দল নিয়েই আছেন, দলের সুখ-দুঃখের অংশীদার হিসেবে আছেন।
বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি সরকারের জন্য আটকে আছে— বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি কেবল আদালতই দিতে পারে। এখানে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই। আওয়ামী লীগ সরকার কখনোই আদালতের ওপর হস্তক্ষেপ করে না। বিএনপির এই সকল অভিযোগ অবান্তর ও হাস্যকর।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম রহমতউল্লাহ এমপির সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, নগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান এমপি, নগর নেতা শেখ বজলুর রহমান, এস এম মান্নান কচি, কাদের খান, ওয়াকিল উদ্দিন, আমিনুল ইসলাম আমিন, গোলাম মোস্তফা, ডেইজি সারোয়ার, আজিজুল হক রানা প্রমুখ।