61506

বেথলেহেমে দুই বছর পর জ্বললো বড়দিনের আলো

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: দুই বছর অন্ধকারে থাকার পর শেষ পর্যন্ত আলোয় ভরে উঠল বেথলেহেমের বড়দিনের গাছ। যিশুর জন্মভূমি আবারও উৎসবমুখর হলেও গাজায় ইসরায়েলি হামলার ছায়ায় আনন্দ পুরোপুরি স্বাচ্ছন্দ্য নয়।

গত দুই বছর পশ্চিম তীরের বেথলেহেমে বড়দিনের মৌসুম ইসরায়েলের অবরোধ ও হামলার প্রভাবে স্তব্ধ ছিল। এবার আলো জ্বললেও চলছে সীমিত আয়োজন। ফিলিস্তিনিরা বলছেন, আলো জ্বলার মধ্যে যেমন আছে আশা, তেমনি আছে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা। একই সঙ্গে গাজায় ব্যাপক হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞের শোকও ভর করে আছে সবার মনে। ইসরায়েলের কঠোর বিধিনিষেধে বেথলেহেমের অর্থনীতি প্রায় অচল।

ads

বেথলেহেমে এবারের বড়দিন উদযাপন কেবল ধর্মীয় আচারেই সীমিত। ম্যানজার স্কোয়ারে ধর্মীয় নেতারা ও স্থানীয় কর্মকর্তারা মঞ্চে দাঁড়িয়ে সাধারণ আয়োজনের মধ্যে গাছের আলো জ্বালান। স্কোয়ারে হাজারো মানুষ জড়ো হয়ে স্তোত্র গাইলেন, কোরাস সংগীত শুনলেন। এটাই ছিল উৎসবের একমাত্র অনুমোদিত আয়োজন।

ইভানজেলিক্যাল লুথেরান ক্রিসমাস চার্চের রেভারেন্ড মুনথের আইজ্যাক আল জাজিরাকে বলেন, এবারের উদযাপন আগের যেকোনও কিছুর থেকে আলাদা। শহর সাজানো, গাছ আলোয় ভরা, কিন্তু প্রতিটি ফিলিস্তিনির মনে গভীর শোক।

ads

তিনি বলেন, এই উদযাপনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনিরা স্থিতিশীলতার বার্তা দিচ্ছেন, আমরা আছি, বেঁচে আছি, বেথলেহেমকে বড়দিনের রাজধানী হিসেবে ধরে রাখছি। ফিলিস্তিনিরা জীবনের পক্ষেই।

বেথলেহেমের মেয়র মাহের এন কানাওয়াতি বলেন, দীর্ঘ অন্ধকারের পর আমরা শহরের আলো ফিরিয়ে আনতে চেয়েছি। বেথলেহেমের মানুষের জন্য আশা জাগাতে এবং সেই বার্তা গাজাসহ পুরো বিশ্বে পৌঁছে দিতে।

তিনি বলেন, শহর উন্মুক্ত ও নিরাপদ এবং এখন বিশ্বের উচিত ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ানো। আলোই শক্তি। কিন্তু গাজার কষ্ট আমাদের হৃদয়ে রয়ে গেছে।

মেয়র আরও জানান, পোপ লিও চতুর্দশ বেথলেহেমের মানুষের উদ্দেশে পাঠানো বার্তায় জানিয়েছেন, তিনি তাদের জন্য প্রার্থনা করছেন এবং ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগের অবসানে কাজ করছেন। গাজার মানুষের উদ্দেশে পোপের আহ্বান ছিল, হতাশ হবেন না।

কানাওয়াতি বিশ্বজুড়ে তীর্থযাত্রীদের বেথলেহেমে আসার আহ্বান জানান। পর্যটনকে তিনি ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতির বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখেন।

ইসরায়েলি অবরোধ ও পর্যটন খাতের পতনে শহরের অর্থনীতি কঠিন সংকটে। আল জাজিরাকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, আয় নয়, আশাই এখন শহরকে টিকিয়ে রেখেছে।

অলিভউড শিল্পী অ্যাড্রিয়ান হাবিবে বলেন, দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে পর্যটন প্রায় বন্ধ। এই আলোয় হয়তো আনন্দ ফিরবে, পর্যটনও ফিরবে। আমাদের অর্থনীতির জন্য তা অত্যন্ত জরুরি।

দখলদার ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ, চেকপয়েন্ট ও সড়কনিয়ন্ত্রণ সত্ত্বেও পশ্চিম তীরের বিভিন্ন শহর ও ইসরায়েলের ভেতরের ফিলিস্তিনিরা বেথলেহেমে আসছেন।

রামাল্লা থেকে আসা ইয়ারা খলিল বলেন, গাজার ভয়াবহ কষ্ট আমাদের মনে গভীর প্রভাব ফেলছে। কিন্তু দুই বছর পর বেথলেহেমকে আবার উদযাপনে দেখতে ভালো লাগছে।

ইসরায়েলের ভেতরের ফিলিস্তিনিদের উৎসাহিত করতে বেথলেহেম চেম্বার অব কমার্স বাস ব্যবস্থা করেছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান সামির হাজবুন বলেন, প্রথম দল শনিবার পৌঁছেছে। ২০ ডিসেম্বরের পর প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার দর্শনার্থী আসার আশা করা হচ্ছে, যা হোটেল বুকিংয়ের হার বাড়াবে।

নাজারেত থেকে আসা রুলা কাবতি বলেন, বহু চেকপয়েন্ট পেরিয়ে তিনি এসেছেন। তার প্রত্যাশা, একদিন যেন ভয়হীন, বাধাহীনভাবে উদযাপন করতে পারি।

সূত্র: আল জাজিরা

ad

পাঠকের মতামত