60329

সৌদিতে আক্রমণ যুক্তরাষ্ট্রের ওপর বলে গণ্য হবে—দ্রুত এমন চুক্তি চায় রিয়াদ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এমন এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে আলোচনায় আছে, যেখানে দেশটির ওপর কোনো আক্রমণ হলে তা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আক্রমণ হিসেবে গণ্য হবে। বিষয়টি অনেকটা সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের মধ্যে হওয়া চুক্তির মতো, যেখানে কাতারের নিরাপত্তায় হুমকি আসলে সেটি আমেরিকার শান্তি ও নিরাপত্তার জন্যও হুমকি বলে বিবেচিত হবে।

ব্রিটিশ দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) আগামী মাসে হোয়াইট হাউস সফরের সময় এই প্রতিরক্ষা চুক্তিটি চূড়ান্ত করতে চান। সূত্রের বরাতে বলা হয়েছে, এটি হবে “একটি বিশাল চুক্তি”, যা দুই দেশের সামরিক ও গোয়েন্দা সহযোগিতা আরও জোরদার করবে।

ads

একজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, “যুবরাজের সফরের সময় কিছু স্বাক্ষর হতে পারে, তবে বিস্তারিত এখনো চূড়ান্ত নয়।” হোয়াইট হাউস ও স্টেট ডিপার্টমেন্ট এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

স্টেট ডিপার্টমেন্টের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “সৌদি আরবের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আমাদের আঞ্চলিক কৌশলের মূল ভিত্তি। যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং সৌদির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে সংঘাত নিরসন ও সন্ত্রাসবিরোধী উদ্যোগে।”

ads

এদিকে, হোয়াইট হাউসের এই উদ্যোগটি আসে এমন এক সময়ে, যখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি কাতারের নিরাপত্তা রক্ষায় নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। ওই আদেশে বলা হয়েছে—কাতারের ওপর আক্রমণ হলে যুক্তরাষ্ট্র প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক, এমনকি সামরিক পদক্ষেপ নেবে।

গত মাসে ইসরায়েল দোহায় হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর এই পদক্ষেপে তেলসমৃদ্ধ উপসাগরীয় দেশগুলোতে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। কারণ, তারা দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রকে নিরাপত্তার অভিভাবক মনে করলেও, মার্কিন মিত্র ইসরায়েল তাদের সার্বভৌমত্বকে উপেক্ষা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

দীর্ঘদিন ধরেই সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে চায়। বাইডেন প্রশাসনের সময় এমন একটি চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছিল, যেখানে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের বিষয়টিও যুক্ত ছিল। তবে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামাস হামলা ও গাজা যুদ্ধের পর সেই আলোচনা থেমে যায়।

এমবিএস স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত সৌদি আরব ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে না। অন্যদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এই অবস্থানের কড়া বিরোধিতা করছেন।

ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বর্তমানে আলোচনায় রয়েছে একটি স্বতন্ত্র প্রতিরক্ষা চুক্তি, যা নির্বাহী আদেশ বা আনুষ্ঠানিক চুক্তি—যে কোনো মাধ্যমে হতে পারে। থিংক ট্যাংক ইউরেশিয়া গ্রুপের কর্মকর্তা ফিরাস মাকসাদ বলেন, “কাতারের সঙ্গে যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেটির পর সৌদি-আমেরিকা সম্পর্কেও অনুরূপ অগ্রগতি আশা করা যায়। এটি আগের যেকোনো চুক্তির চেয়ে বড় হতে পারে।”

মাকসাদ আরও বলেন, “যুবরাজ যখন সৌদিকে ট্রিলিয়ন ডলারের উন্নয়ন প্রকল্পে এগিয়ে নিচ্ছেন, তখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা আরও জোরদার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

সম্প্রতি সৌদি আরব পারমাণবিক শক্তিধর পাকিস্তানের সঙ্গে ‘কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি’ স্বাক্ষর করেছে। এটি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল—দু’দেশকেই স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে, রিয়াদ এখন নিরাপত্তা অংশীদারিত্বে বৈচিত্র্য আনতে প্রস্তুত।

বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র এখনো উপসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তার মূল ভরসা হলেও সৌদি আরব বিকল্প সহযোগিতার পথ খুঁজছে, যাতে ভবিষ্যৎ সংকটে তার কৌশলগত অবস্থান আরও শক্তিশালী হয়।

ad

পাঠকের মতামত