60202

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর বার্তা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইশিবা শিগেরু শুক্রবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্তির ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে একটি বার্তা প্রচার করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে দায়িত্বজ্ঞানহীন জনপ্রিয়তার কাছে নতি স্বীকার না করার গর্ব রাজনীতিবিদদের অবশ্যই থাকা উচিত।

ইশিবা যুক্তি দেখিয়েছেন যে জাপানের যুদ্ধ-পূর্ব সংবিধানে বেসামরিক নিয়ন্ত্রণের একটি ধারার অনুপস্থিতি দেশের যুদ্ধ এড়িয়ে যেতে না পারার একটি কারণ ছিল।

ads

যুদ্ধপূর্বকালীন আইনপ্রণেতা সাইতো তাকাওর উল্লেখ তিনি করেছেন, ১৯৪০ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেয়া এক ভাষণে সরকার ও সামরিক বাহিনীর সমালোচনা করার পর নিম্নকক্ষ থেকে যাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।

আইনসভা যে সামরিক বাহিনীর তত্ত্বাবধান করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিল, সাইতোর বহিষ্কারকে ইশিবা তার প্রমাণ হিসাবে উল্লেখ করেন।

ads

তিনি বলেছেন যুদ্ধের সংবাদ পরিবেশন জনপ্রিয় হওয়ার কারণে ১৯৩১ সালে উত্তর-পূর্ব চীনে ঘটে যাওয়া মাঞ্চুরিয়া ঘটনার সময় থেকে সংবাদ মাধ্যম সক্রিয়ভাবে যুদ্ধ সমর্থন করতে শুরু করে। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে জাতীয়তাবাদের পেছনে ইন্ধন যোগাতে সংবাদ মাধ্যম সাহায্য করেছিল।

ইশিবা বলেছেন যুদ্ধ-পরবর্তী সংবিধান বেসামরিক নিয়ন্ত্রণের নিশ্চয়তা দিলেও আত্মরক্ষা বাহিনীকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার যথাযত সামর্থ্য ও দূরদৃষ্টি ক্ষমতাসীন ব্যক্তিদের থাকা উচিত।

প্রধানমন্ত্রী ক্ষণকালীন জনমতের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ কিংবা জাতীয় স্বার্থের বিপরীতে দল অথবা আইনপ্রণেতাদের স্বার্থের উপর অগ্রাধিকার প্রদান করা জনপ্রিয় নীতি গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান সংসদের প্রতি জানান।

একই সাথে তিনি সংবাদ মাধ্যমের অতিরিক্ত বাণিজ্যিকীকরণের বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিয়েছেন এবং বলেছেন যে সংকীর্ণমনা জাতীয়তাবাদ কিংবা বিদেশ-বিরোধী মনোভাব সহ্য করা তাদের উচিত হবে না।

তিনি বলেছেন সহনশীল উদার পন্থা এবং সার্বিক ও স্থিতিশীল গণতন্ত্র হচ্ছে অন্য যেকোনো কিছুর চাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও শান্তির উপর আলোকপাত করা এবং ভবিষ্যতের জন্য সেইসব শিক্ষা বহন করার আহ্বান ইশিবা সকলের প্রতি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে তিনি বিশ্বাস করেন সেরকম করা হলে শান্তির ধারণা সমুন্নত রাখা জাতি হিসাবে জাপানের ভিত্তিকে তা আরও শক্তিশালী করে তুলবে।

ইশিবা এরকম উল্লেখ করে তার বার্তা শেষ করেছেন যে জাপানের জনগণের সাথে মিলে যুদ্ধ থেকে পাওয়া শিক্ষা তিনি গ্রহণ করবেন এবং সেরকম ট্র্যাজেডির পুনরাবৃত্তি যেন আর কখনও না ঘটে তা নিশ্চিত করার যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন।

এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা ইশিবাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে তার লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির রক্ষণশীল যেসব সদস্য বার্তাটি প্রচারের বিরোধিতা করেছিলেন, তাদের সম্পর্কে তিনি কী মনে করেন।

তিনি বলেছেন যুদ্ধপূর্ব রাজনৈতিক ব্যবস্থা জাপানকে কেন যুদ্ধে যেতে বাধা দিতে ব্যর্থ হয়েছিল, তার বার্তা ছিল সেই প্রশ্নের উত্তর – যুদ্ধ শেষ হওয়ার ৭০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০১৫ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আবে শিনযোর প্রচারিত এক বিবৃতিতে এই প্রশ্নটি উত্থাপিত হয়েছিল।

তার বার্তা যে ইতিহাসের ব্যাখ্যা স্পর্শ করে না, সেরকম উল্লেখ করে ইশিবা সমালোচনা খারিজ করে দিয়েছিলেন।

ad

পাঠকের মতামত