59955

বিদেশি অপরাধী গোষ্ঠীকে প্রয়োজন হলে ‘ধ্বংস’ করবে যুক্তরাষ্ট্র: মার্কো রুবিও

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, বিদেশি অপরাধী গোষ্ঠীগুলোকে প্রয়োজন হলে যুক্তরাষ্ট্র “ধ্বংস করে দেবে”— প্রয়োজনে অন্য দেশগুলোর সহযোগিতায়ও।

ইকুয়েডর সফরে রুবিও বলেন, “এখন তারা আমাদেরকে এই অপরাধীদের খুঁজে বের করতে সাহায্য করবে এবং যদি প্রয়োজন হয়, আমরা তাদের উড়িয়ে দেব।”

ads

তিনি আরও ঘোষণা দেন যে, ইকুয়েডরের সবচেয়ে বড় দুটি অপরাধী গ্যাং— লস লোবোস (Los Lobos) এবং লস চোনেরোস (Los Choneros)—কে যুক্তরাষ্ট্র বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করবে।

এই মন্তব্য আসে এমন এক প্রেক্ষাপটে, যখন যুক্তরাষ্ট্র বাহিনী ক্যারিবীয় সাগরে একটি নৌকায় হামলা চালিয়ে ১১ জন মাদক পাচারকারীকে হত্যা করেছে বলে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে। যদিও নিহতদের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

ads

রুবিওকে জিজ্ঞেস করা হলে, যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশ যেমন মেক্সিকো বা ইকুয়েডর থেকে যদি পাচারকারীরা আসে, তবে কি মার্কিন বাহিনী একতরফাভাবে তাদের হত্যা করতে পারে? তিনি জবাব দেন— “সহযোগী সরকারগুলোই আমাদের সাহায্য করবে এসব পাচারকারীকে শনাক্ত করতে।”

তিনি আরও বলেন, “রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়েছেন যে তিনি এসব গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাবেন, কারণ তারা গত ৩০ বছর ধরে আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে আসছে, অথচ কেউ সাড়া দেয়নি।”

তবে ইকুয়েডর বা মেক্সিকোর পক্ষ থেকে এ ধরনের সামরিক হামলায় সহযোগিতা করবে কি না— সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য আসেনি।

মঙ্গলবারের হামলার পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, ওই নৌকায় ভেনেজুয়েলার কুখ্যাত ট্রেন দে আরাগুয়া (Tren de Aragua) গ্যাংয়ের সদস্যরা ছিল, যারা যুক্তরাষ্ট্রের দিকে অবৈধ মাদক পাচার করছিল। তবে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই হামলা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও সমুদ্র আইন লঙ্ঘন করতে পারে।

বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর অভিযোগ করেছে, ভেনেজুয়েলার দুটি সামরিক বিমান যুক্তরাষ্ট্রের একটি জাহাজের কাছাকাছি এসে উস্কানিমূলক আচরণ করেছে। ভেনেজুয়েলা এখনো এর জবাব দেয়নি।

সেদিনই রুবিও ঘোষণা দেন, ইকুয়েডরকে মাদকবিরোধী লড়াইয়ে সহায়তা করতে যুক্তরাষ্ট্র ১৩.৫ মিলিয়ন ডলার নিরাপত্তা সহায়তা এবং ৬ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ড্রোন প্রযুক্তি দেবে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইকুয়েডরে সহিংসতা মারাত্মকভাবে বেড়েছে, কারণ বিভিন্ন অপরাধী গোষ্ঠী লাভজনক কোকেন পাচার রুটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে লড়াই করছে। সরকারি তথ্যমতে, বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৭০ শতাংশ কোকেন ইকুয়েডরের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও এশিয়ার বাজারে যায়।

ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল নোবোয়া নিজেই এই গোষ্ঠীগুলোকে সন্ত্রাসী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন। তিনি একে “যুদ্ধ” বলে অভিহিত করেছেন এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় সেনাবাহিনীকে এই লড়াইয়ে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্তের ফলে এসব গোষ্ঠীর সম্পদ ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা, গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় এবং “প্রাণঘাতী পদক্ষেপ” গ্রহণের সুযোগ তৈরি হবে।

তবে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরাধী গোষ্ঠীগুলোকে সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত করা আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য জটিলতা তৈরি করতে পারে। কারণ এতে কেউ হয়তো “সন্ত্রাসের শিকার” হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, আবার কেউ কেউ যদি জোরপূর্বক চাঁদা দিয়ে থাকে তবে তাদেরকেও ‘সন্ত্রাসী সংগঠনকে সহায়তাকারী’ হিসেবে অভিযুক্ত করা হতে পারে।

সূত্র: বিবিসি

ad

পাঠকের মতামত