 
		
								মিয়ানমার সরকারের ঘনিষ্ঠদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার যুক্তরাষ্ট্রের
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন জান্তা সরকারের একাধিক ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শুল্ক আরোপের জবাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের বেশ প্রশংসা করেন জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং। ওই প্রশংসাপত্রে মিয়ানমারের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার আহ্বান জানানোর দুই সপ্তাহ না যেতেই জান্তাকে সুখবর দিল ওয়াশিংটন। তবে এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। সংস্থাটি বলছে, এই পদক্ষেপ গভীর উদ্বেজনক। কেননা এটি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর প্রতি বিড়াট পরিবর্তন এনেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
বৃহস্পতিবার মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট জানায়, কেটি সার্ভিসেস অ্যান্ড লজিস্টিকস এবং এর প্রতিষ্ঠাতা জোনাথন মিও কিয়া থাং, এমসিএম গ্রুপ ও এর প্রতিষ্ঠাতা অং হ্লাইং ও, সানট্যাক টেকনোলজিস ও এর প্রতিষ্ঠাতা সিত তাইন অং এবং আরেক ব্যক্তি টিন লাট মিন এর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের ২০২২ ও ২০২৪ সালে নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এদের মধ্যে কেউ কেউ সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা খাতে সক্রিয় ছিলেন, কেউ বা সামরিক সরকারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত।
এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কোনো ব্যাখ্যা ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট দেয়নি। হোয়াইট হাউসও এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে এ ঘটনার কয়েকদিন আগে, ১১ জুলাই মিন অং হ্লাইং একটি চিঠিতে ট্রাম্পকে আমদানি-রপ্তানিতে আরোপিত ৪০ শতাংশ শুল্ক হার কমানোর অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, দরকার হলে আলোচনার জন্য তিনি একটি প্রতিনিধি দল ওয়াশিংটনে পাঠাতে প্রস্তুত। চিঠিতে তিনি ট্রাম্পের দেশ পরিচালনাকে দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব হিসেবে উল্লেখ করে তার প্রশংসা করেন।
চিঠিতে জান্তা প্রধান প্রস্তাব দেন, শুল্ক হার ১০ থেকে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা হোক। মিয়ানমারও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানির ওপর কর শূন্য থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনবে। পাশাপাশি তিনি ট্রাম্পকে আহ্বান জানান, মিয়ানমারের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিবেচনা করে তুলে নেওয়া হোক। যেগুলো উভয় দেশের সার্বিক মঙ্গল ও সমৃদ্ধির পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপ শুধু বাণিজ্য নয়, ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার অংশও বটে। মিয়ানমার বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রেয়ার আর্থ মিনারেলের (বিরল খনিজ পদার্থ) উৎস- যা অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে ব্যবহৃত হয়। চীন যেখানে এই খনিজের ৯০ শতাংশ প্রক্রিয়াজাত করে, সেখানে বিকল্প উৎস হিসেবে মিয়ানমারকে গুরুত্ব দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও বাস্তবে দেশটির খনি অঞ্চল অধিকাংশই কাচিন ইন্ডিপেনডেন্স আর্মি (কেআইএ)-এর নিয়ন্ত্রণে, যারা জান্তার বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এছাড়া ওইসব খনিজের প্রায় সবই প্রক্রিয়াজাত করছে চীন।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর এশিয়া অ্যাডভোকেসি পরিচালক জন সিফটন বলেন, এই সিদ্ধান্ত হতবাক করার মতো এবং এর পেছনের উদ্দেশ্য অস্পষ্ট। এটি ইঙ্গিত দিচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ানমার নীতিতে বড় রকমের পরিবর্তন ঘটছে। তিনি বলেন, মাত্র চার বছর আগে একটি গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করে, যারা গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত। তাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের প্রতি এমন নমনীয়তা ভুক্তভোগী ও গণতন্ত্রকামী মানুষের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়। মিয়ানমারে জান্তার দমনপীড়নের বিরুদ্ধে যারা লড়ছে, এই পদক্ষেপ তাদের মনোবলে বড় ধাক্কা হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।











