দুর্ঘটনার ৪ দিন পরেই ১১২ পাইলট অসুস্থ! পাইলটদের ছুটি ঘিরে রহস্য বাড়ছে
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গত ১২ জুন অহমদাবাদের লোকালয়ে ভেঙে পড়েছিল এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং বিমান। তার চার দিন পর ১৬ জুন ‘সিক লিভ’ বা অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ছুটি নিয়েছিলেন ১১২ জন পাইলট। বুধবার (২৩ জুলাই) সংসদে দেওয়া বক্তব্যে এমনটাই জানালেন কেন্দ্রীয় ভারতের জুনিয়র বিমান পরিবহনমন্ত্রী মুরলিধর মোহল।
এয়ার ইন্ডিয়া বিমানের পাইলট, কর্মীদের অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ছুটির পরিমাণ কি বৃদ্ধি পেয়েছে? লোকসভায় এই প্রশ্ন করেছিলেন এক সাংসদ।
লিখিত জবাব দিয়ে মুরলীধর বৃহস্পতিবার সংসদে জানিয়েছেন, অহমদাবাদ দুর্ঘটনার পরে এয়ার ইন্ডিয়া বিমান কর্মীদের ছুটি নেওয়ার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ১৬ জুন ৬১ জন সিনিয়র পাইলট এবং ৫১ জন ফ্লাইট অফিসার, মোট ১১২ জন ছুটি নিয়েছিলেন বলে রিপোর্ট রয়েছে।
মন্ত্রী জানান, বিমান দুর্ঘটনার পরে পাইলটদের মানসিক স্বাস্থ্যে নজর দেওয়া কতটা জরুরি, সেই বিষয়টিই তুলে ধরে এই ছুটি নেওয়ার ঘটনা। পাইলট, বিমানকর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যে জন্য কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা-ও জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী।
আহমেদাবাদে বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার দুর্ঘটনায় মাঝ আকাশে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিমানবন্দরের সীমানা থেকে দুই কিলোমিটার দূরে একটি হোস্টেল ভবনে আছড়ে পড়ে। এতে ২৭৪ জনের মৃত্যু হয়।
মন্ত্রী জানান, ওই দিন ৫১ জন কমান্ডার ও ৬১ জন ফ্লাইট অফিসার একযোগে ছুটির আবেদন করেন। এতে স্পষ্ট হয় যে, বিমান দুর্ঘটনার পর পাইলটদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি যথাযথভাবে চিহ্নিত ও পরিচালনা করা অত্যন্ত জরুরি।
লোকসভায় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিমান সংস্থাগুলোকে একটি নির্দেশিকা দেওয়া হয়, যেখানে মেডিকেল পরীক্ষার সময় পাইলটদের মানসিক স্বাস্থ্য দ্রুত ও কার্যকরভাবে মূল্যায়নের পদ্ধতি প্রয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়।
মন্ত্রী আরও জানান, বিমান সংস্থা ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে “স্ট্যান্ডঅ্যালোন ও কাস্টমাইজড প্রশিক্ষণ মডিউল” চালুর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যা ফ্লাইট ক্রু ও এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবেলায় সহায়তা করবে। এ ছাড়া সহকর্মী-ভিত্তিক সহায়তা দল গঠনেরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যেন কর্মীরা একে অপরকে মানসিক চাপ চিহ্নিত ও সামলাতে সাহায্য করতে পারেন।
এদিকে এয়ার ইন্ডিয়া বুধবার জানায়, সিভিল এভিয়েশন নিয়ন্ত্রক ডিজিসিএ থেকে চারটি কারণ দর্শানোর নোটিস পেয়েছে। এই নোটিসগুলো মূলত ক্রুদের ক্লান্তি ব্যবস্থাপনা ও প্রশিক্ষণ সম্পর্কিত নিরাপত্তা মান লঙ্ঘনের কারণে পাঠানো হয়েছে।
এই নোটিসগুলো এয়ার ইন্ডিয়ার স্বেচ্ছামূলক স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে পাঠানো হয়েছে, যা গত এক বছরে করা হয়েছিল। এগুলোর মধ্যে রয়েছে কেবিন ক্রুদের পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিশ্চিত না করা, প্রশিক্ষণের নিয়ম লঙ্ঘন এবং পরিচালন পদ্ধতিতে ত্রুটি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে এয়ার ইন্ডিয়ার এক মুখপাত্র বলেন, “আমরা এসব নোটিস পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করছি। এটি গত এক বছরে কিছু স্বেচ্ছায় করা প্রকাশনার ভিত্তিতে দেওয়া হয়েছে। আমরা এসব নোটিসের জবাব দেব।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা আমাদের ক্রু ও যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
গত ছয় মাসে নিরাপত্তা লঙ্ঘন ও নানা ঘটনা নিয়ে এয়ার ইন্ডিয়া ১৩টি নোটিস পেয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:হংকং-দিল্লি ফ্লাইটে অবতরণের পর এপিইউ-তে আগুন। কোচি-মুম্বাই ফ্লাইট রানওয়ে থেকে সরে গিয়ে ইঞ্জিন কভারে ক্ষতি। দিল্লি-কলকাতা ফ্লাইটের টেক-অব শেষ মুহূর্তে বাতিল। দিল্লি-মুম্বাই ফ্লাইটের টেক-অব স্ক্রিনে গতি না দেখানোয় বাতিল।











