39497

ইসলাম সম্পর্কে বিদেশিদের ধারণা পরিবর্তন করতে চায় কাতার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইসলাম সম্পর্কে ধারণা পরিবর্তন করতে কিংবা ধর্মান্তরিত করার জন্য হাজার হাজার দর্শনার্থীর কাছে পৌঁছানোর সুযোগটি কাজে লাগাচ্ছে বিশ্বকাপের আয়োজক অন্যতম মুসলিম দেশ কাতার।

উপসাগরীয় রাষ্ট্র কাতার প্রথম মুসলিম দেশ, যারা ফুটবল বিশ্বকাপ মঞ্চস্থ করছে। গ্যাস সম্পদে সমৃদ্ধ দেশটি দর্শকদের কৌতূহল জাগানোর জন্য বিশাল সব মসজিদের বিন্যাসে সেজেছে।

ads

কানাডিয়ান দম্পতি ডোরিনেল ও ক্লারা পোপা দোহার কাটারা সাংস্কৃতিক অঞ্চলের একটি অটোমান-শৈলীর মসজিদে আযান শুনেছেন। দেয়ালে নীল ও বেগুনি রঙের টাইলসের চমৎকার মোজাইক থাকার কারণে এটি দোহার ‘নীল মসজিদ’ নামে পরিচিত। একজন গাইড ওই দম্পতিকে মসজিদটির ভিতরে বিশাল ঝাড়বাতি সন্নিবেশিত পরিবেশ ঘুরিয়ে দেখান।

৫৪ বছর বয়সী ডোরিনেল পোপা একজন হিসাবরক্ষক। তিনি জানান, তারা ইসলাম সম্পর্কে প্রথমবার জানছেন।

ads

‘অন্যদের কাছে প্রচারণার অভাবের কারণে আমাদের (ইসলামিক) সংস্কৃতি এবং মানুষের বিরুদ্ধে কুসংস্কার আছে’, বলেন তিনি।

‘আমাদের মাথায় কিছু ধারণা আছে এবং এখন হয়তো সেগুলোর মধ্যে কিছু পরিবর্তন আসবে’, যোগ করেছেন ৫২ বছর বয়সী পোপার স্ত্রী একজন ডাক্তার।

নীল মসজিদের তত্ত্বাবধানকারী কাতার গেস্ট সেন্টার বিশ্বকাপ উপলক্ষে সারা বিশ্ব থেকে কয়েক ডজন মুসলিম প্রচারককে কাতারে নিয়ে এসেছে।

মসজিদের বাইরে আরবি কফি-খেজুরসহ ইসলাম ও নবি মোহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে বিভিন্ন ভাষার পুস্তিকা রয়েছে।

সিরিয়ার স্বেচ্ছাসেবক জিয়াদ ফাতেহ বলেন, বিশ্বকাপ হলো ‘লাখ লাখ মানুষকে ইসলামের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার একটি সুযোগ’ এবং এমন একটি ধর্ম সম্পর্কে ‘ভুল ধারণা’ পরিবর্তন করার সুযোগ, যখন পশ্চিমের অনেকেই উগ্রবাদের সঙ্গে যুক্ত।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মানুষকে নৈতিকতা, পারিবারিক বন্ধনের গুরুত্ব এবং প্রতিবেশী ও অমুসলিমদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরি।’

মসজিদের কাছে স্বেচ্ছাসেবকরা নারী পর্যটকদের জন্য একটি টেবিলে বসে একটি চিহ্নসহ কাজ করছিলেন। এতে লেখা আছে— ‘আমাকে কাতার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করুন’। যারা থামেন তাদের আরবি কফিও দেওয়া হয়।

সুমাইয়া নামে একজন ফিলিস্তিনি স্বেচ্ছাসেবক বলেন, বেশির ভাগ নারী পর্যটকের প্রশ্ন ছিল পর্দা, বহুবিবাহ এবং ইসলামে নারীরা নির্যাতিত কি না, এসব বিষয়ে।

কাছেই দর্শনার্থীরা ইসলাম সম্পর্কে পাঁচ মিনিটের ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ট্যুর দেখতে পারেন। কাতার জুড়ে এ প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

পার্ল জেলায় অনেক প্রবাসী বাস করেন এবং তারা ব্যয়বহুল ক্যাফে ও রেস্তোরাঁয় ঘন ঘন আসেন, সেখানে নৈতিকতার আহ্বান জানিয়ে নবী মোহাম্মদ (সা.) এর উদ্ধৃতি দিয়ে ম্যুরাল আঁকা হয়েছে।

বড় শপিং মলগুলোতে ইসলাম প্রচারের বিজ্ঞাপন চলছে। সৌক ওয়াকিফ মার্কেটে প্রতিদিন হাজার হাজার ফুটবল ভক্ত জড়ো হয়। এর একটি গলিতে বিনামূল্যের বই এবং পুস্তিকা রেখে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি চিহ্নে লেখা আছে— ‘যদি আপনি সুখ খুঁজেন… তাহলে আপনি (এটি) ইসলামে পাবেন’।

সৌকের কাছেই শেখ আবদুল্লাহ বিন জায়েদ ইসলামিক কালচারাল সেন্টার দর্শনার্থীদের জন্য দিনে ১২ ঘণ্টা খোলা থাকে। দর্শনার্থী ফুটবল ভক্তদের ইসলামে ধর্মান্তরিত করার প্রচেষ্টার আহ্বান জানিয়েছেন কাতারের কিছু মুসলিম নেতা।

কাতার ইউনিভার্সিটির শরিয়া আইনের অধ্যাপক সুলতান বিন ইব্রাহিম আল হাশেমি। তিনি ভয়েস অব ইসলাম রেডিও স্টেশনের প্রধান।

সুলতান বিন ইব্রাহিম আল হাশেমি বলেন, বিশ্বকাপকে নতুন ধর্মান্তরিতদের খুঁজে বের করার পাশাপাশি ইসলামোফোবিয়া মোকাবিলায় ব্যবহার করা উচিত।

হাশেমি এএফপিকে বলেন, বিদেশি ভক্তদের সঙ্গে তার বৈঠকে ইসলাম গ্রহণের প্রস্তাব দেবেন।

‘যদি আমি সুযোগ পাই, আমি তাদের স্বাচ্ছন্দ্য ও অনুগ্রহের সঙ্গে ইসলাম গ্রহণের প্রস্তাব দেব এবং যদি আমি সুযোগ না পাই, তবে আমি তাদের বলব— আপনি আমাদের অতিথি ও মানবতার ভাই।

তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইসলাম জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত হওয়াকে মেনে নেয় না।

সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টগুলো দাবি করছে, শত শত ভক্তের বিশ্বাস পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু এএফপি-এর ফ্যাক্ট-চেকিং পরিষেবা জানায়, এই দাবিগুলো ভুয়া।

কাতারের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, আমাদের লক্ষ্য ‘ইসলামে ধর্মান্তরিতদের সংখ্যার ওপরে নয়, বরং যারা এটি সম্পর্কে তাদের মতামত পরিবর্তন করছে, তাদের সংখ্যায়’।

সূত্র : এএফপি

ad

পাঠকের মতামত