33170

ইউক্রেনে আরও অস্ত্র সহায়তা পাঠানো নিয়ে দ্বিধায় বাইডেন প্রশাসন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়েছে প্রায় দু’মাস হতে চলল। এই সময়সীমার মধ্যে ইউক্রেনে কয়েকদফা অস্ত্র সহায়তায় পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা।

কিন্তু গত ২ মাসে যুদ্ধের তীব্রতা হ্রাস পাওয়ার বদলে ক্রমশ বাড়তে থাকায় দেশটিকে আরও অস্ত্র সহায়তা দেওয়ার ব্যাপারে দ্বিধায় পড়েছে বাইডেন প্রশাসন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের অনমনীয় মনোভাব এই দ্বিধাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।

ads

গত ২৬ মার্চ রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও দেশটির সামরিক বাহিনীর জেনারেল স্টাফ’স মেইন অপারেশনস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের প্রধান সের্গেই রুডস্কয় বিবিসিকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি জানিয়েছিলেন, ইউক্রেনে চলমান রুশ অভিযানের মূল লক্ষ্য দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় দুই ভূখণ্ড দনেতস্ক ও লুহানস্ককে (ডনবাস রিপাবলিক) স্বাধীন করা এবং ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর মনযোগ অন্যদিকে সরানোর কৌশল হিসেবে অভিযানের প্রথম দিকে রাজধানী কিয়েভ ও ইউক্রেনের অন্যান্য অঞ্চলে গোলা বর্ষণ করেছিল রুশ সেনারা।

‘ইউক্রেনে আমাদের বিশেষ সামরিক অভিযানের প্রথম পর্যায় শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর যুদ্ধ করার মতো সক্ষমতাও ব্যাপকহারে হ্রাস পেয়েছে। এ কারণে আমরা এখন আমাদের মূল লক্ষ্যে মনযোগ দিচ্ছি; আর সেটি হলো— ডনবাস রিপাবলিককে স্বাধীন করা,’ সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন রুডস্কয়।

ads

তিনি যে সঠিক ছিলেন, তার প্রমাণ গত দু’সপ্তাহ ধরে বেশ ভালোভাবেই পাওয়া যাচ্ছে। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলে হামলার তীব্রতা বাড়িয়ে দিয়েছে রুশ সেনারা; আর এই সেনাদের প্রতিহত করতে রীতিমতো বেগ পেতে হচ্ছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে। সবচেয়ে বড় যে সমস্যার মুখে পড়েছে দেশটির সেনাবাহিনী, তা হলো অস্ত্র ও গোলাবারুদের সংকট।

রাশিয়ার পক্ষ থেকে অবশ্য ইতোমধ্যে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে— যদি ইউক্রেন তার পূর্বাঞ্চলীয় দুই প্রদেশ ছেড়ে দিতে রাজি থাকে, সেক্ষেত্রে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি হতে পারে।

কিন্তু এই শর্তে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে একেবারেই নারাজ জেলেনস্কি। ইতোমধ্যে তিনি একাধিকবার বলেছেন— ইউক্রেনের কোনো অঞ্চল তিনি ছেড়ে দেবেন না; পাশাপাশি অস্ত্র সহায়তা দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোকে নিয়মিত চাপ দিয়ে চলছেন তিনি। সম্প্রতি সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের যে চিত্র বিশ্ববাসী এতদিন দেখেছে— ডনবাসের সংঘাত তাকে পুরোপুরি বদলে দিতে পারে।

গত সপ্তাহে ইউক্রেনকে ৮০ কোটি টাকার অস্ত্র সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তার আগেও আরও তিন দফা সহায়তা সেখানে পাঠিয়েছে দেশটি। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই পরিমাণ সহায়তা এর আগে কোনো দেশে পাঠানোর রেকর্ড নেই।

কিন্তু জেলেনস্কি বলছেন, এই সহায়তা যথেষ্ট নয়, আরও অস্ত্র প্রয়োজন। সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আমাদের আরও অস্ত্র সহায়তা প্রয়োজন। এখন পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধ চলছে এবং শত্রুপক্ষের বিরুদ্ধে টেকনিক্যাল কোনো সুবিধা আমাদের নেই।’

‘এ কারণে অস্ত্রই আমাদের একমাত্র ভরসা। এই যুদ্ধে জিততে হলে, এমনকি টিকে থাকতে হলেও আমাদের আরও অস্ত্র প্রয়োজন।’

মার্কিন প্রতিরক্ষা বাহিনীর এক কর্মকর্তাও অবশ্য সিএনএনকে বলেছেন, ৮০ কোটি ডলারের সাম্প্রতিক যে প্যাকেজটি ইউক্রেনে পাঠানো হয়েছে, তা দিয়ে বড়জোর কয়েকদিন যুদ্ধ চালানো যাবে।’

কিন্তু ইতোমধ্যেই বাইডেন প্রশাসনে প্রশ্ন উঠেছে, আর কতদিন পর্যন্ত সহায়তা পাঠাতে হবে ইউক্রেনকে?

সূত্র: সিএনএন

ad

পাঠকের মতামত