রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের কারিগর শিক্ষার্থীরা: শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি
মাইনুল হক: শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, ২১ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং ২০৪১ এর রূপকল্প যেটি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দিয়েছেন, তা অর্জন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য, ২০৩০ অর্জন এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সকল অংশীদার হবার লক্ষ্যে সরকার যোগ্য আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক সুস্থ সবল একটি জাতি গঠনে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ বর্তমান সরকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জ্ঞান বিজ্ঞানে, প্রযুক্তিতে শিক্ষার্থীদের কে এগিয়ে নেওয়ার জন্য পড়ালেখার পাশাপাশি সৃজনশীলতা এবং ক্রীড়াচিত্তে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে চলেছে৷ আমরা জ্ঞান বিজ্ঞানে প্রযুক্তিতে অগ্রগামী চিন্তা-চেতনায় প্রগতিশীল সততার মানবিকতার ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ, শরীর ও মনে সুস্থ ও কর্মে উদ্যমী একটি প্রজন্ম গড়ে তুলতে চাই৷ এ লক্ষ্য অর্জনে আমাদের অক্লান্ত প্রয়াস অব্যাহত থাকবে৷
তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা যে দেশে বাস করছি এবং যে লাল সবুজের জাতীয় পতাকা তা কিন্তু একদিনে আসেনি৷ আমাদের এই স্বাধীনতা অর্জনে অসম্ভব রকমের ত্যাগ তিতিক্ষার ইতিহাস রয়েছে৷ আর যে মানুষটি সবচেয়ে বেশি আত্মত্যাগ করেছিলেন, তিনি পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর নির্যাতন এবং নানান রকমের লাঞ্ছনা, যন্ত্রণা ভোগ করেছেন ও বঞ্চনা সহ্য করেছেন৷ তারপরও বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির স্বপ্ন দেখেছেন৷ তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আমাদের জাতির পিতা৷ জাতির পিতার সকল কাজের অনুপ্রেরণার উৎস ছিলেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব৷ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে তারই কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০২১ সালের ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প নিয়ে ২০৪১ সালের রূপকল্প অর্জনের দিকে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি৷ যে অর্জনের স্বপ্ন দেখছি, এই পথে তোমরাই হবে এর কারিগর৷ তোমরাই পরিবর্তন আনবে৷ তোমরা এক একজন হবে চ্যাম্পিয়ন অফ চেঞ্জ৷ তোমরাই বাল্যবিবাহ, যৌতুক ও যৌন হয়রানি এগুলোর বিরুদ্ধে হবে সচ্চার৷ বাল্যবিবাহ ও নারীর ক্ষমতায়ন হল জাতির উন্নয়নের অগ্রনায়ক৷ তোমরা নিজেদেরকে সব ধরনের সংকীর্ণতা থেকে দূরে রাখবে৷ নিজেরা পরিবেশ সচেতন হবে, অন্যদেরকেও পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন করবে৷ মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও সহিংসতা থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখবে৷ বাংলাদেশকে তোমরাই এগিয়ে নিয়ে যাবে৷ তোমরাই গড়ে তুলবে আগামীর সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ৷ এজন্য বাবা-মায়েদের কথা শুনতে হবে, শিক্ষকদের কথা শুনতে হবে এবং নিজেদের জীবনকে সুন্দর ভাবে পরিচালিত করতে হবে৷ সকলের প্রতি ভালোবাসা সহমর্মিতা এবং সহযোগিতার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে৷ পারিবারিক সামাজিক এবং বিদ্যালয়ের যে কর্মকাণ্ড রয়েছে সে গুলোতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করবে৷ নিজেদের এবং অপরের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হতে হবে৷ জাতীয় ইতিহাস সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতিও শ্রদ্ধাবোধ গড়ে তুলতে হবে৷
তোমরা মনে রাখবে আমরা বিজয়ী জাতি৷ আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে বহু রক্তের বিনিময়ে এ বিজয় অর্জন করেছি৷ বাঙালি কারো কাছে মাথা নত করে না, করবেও না ইনশাআল্লাহ৷ জাতির পিতা বলেছিলেন, আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবেনা, সত্যিই তাই। আজকের বাংলাদেশকে সারাবিশ্ব দেখছে এবং বলছে এই বাংলাদেশকে কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না। আমরা এই বিশ্বে একটি শান্তিপূর্ণ উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হবো ইনশাআল্লাহ৷ তোমাদের প্রতি অনুরোধ তোমরা স্বপ্ন দেখবে৷ স্বপ্ন জাতির পিতা দেখেছিলেন৷ একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বপ্ন৷ আর সে স্বপ্ন দেখেছিলেন বলেই দীর্ঘ সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে আমাদেরকে এই স্বাধীন ভূখন্ড দিয়ে গেছেন৷ বলা হয় মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়৷ তোমরা যত বড় স্বপ্ন দেখবে নিশ্চয়ই তোমরা সে স্বপ্নের সমান বড় হবার জন্য চেষ্টা করবে, অধ্যবসায় করবে এবং তা তোমরা অর্জন করবে৷ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে ২০৪১ সালের উন্নত সমৃদ্ধ সুখ-শান্তি ময় বাংলাদেশের যে স্বপ্ন দেখিয়েছেন, তার সঙ্গে তোমরা একাত্ম হয়ে কাজ করবে৷ আজকের এই শীতকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জন্য সারা বছরের প্রস্তুতি, এই যে আনন্দ, এইযে মিলন মেলায় এসে তোমাদের বন্ধুত্ব গুলো তৈরি হচ্ছে যা হয়তো সারাজীবন থাকবে কারো কারো সঙ্গে৷ এই মিলন মেলা এই আনন্দ এর মধ্য দিয়ে তোমরা শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ সবল মানুষ হয় গড়ে উঠবে, সুনাগরিক হবে৷ তোমাদের এই পথ চলায় তোমাদের পাশে শেখ হাসিনার সরকার আছে, আমরা আছি এবং আমরা থাকবো ইনশাআল্লাহ৷ তোমরাই গড়বে আগামী দিনের বাংলাদেশ৷ আমরা শিক্ষা নিয়ে গড়ব দেশ, “শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ”৷
কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের ব্যবস্থাপনায় এবং বাংলাদেশ জাতীয় স্কুল, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা ক্রীড়া সমিতির আয়োজনে জাতীয় পর্যায়ে কুমিল্লায় অনুষ্ঠিত ৪৯তম শীতকালীন জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী এসব কথা বলেন। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ষ্টেডিয়ামে (কুমিল্লা ষ্টেডিয়াম) জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী পর্বের সূচনা ঘটে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এমপি, মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মুনশী শাহাবুদ্দীন আহমেদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. আবদুস ছালাম।
আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর মু. জিয়াউল হক, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোকবুল হোসেন, যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোহাম্মদ আব্দুল আলীম, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল আলীম, বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোহাম্মদ ইউনুস, সিলেট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. মজিদুল ইসলাম এবং কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর পিএএ ও পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বিপিএম (বার), পিপিএম।
৬ দিন ব্যাপি এই প্রতিযোগিতা শেষ হবে ২২ জানুয়ারি। ৪৯ তম শীতকালীন জাতীয় স্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা ক্রীড়া প্রাতিযোগিতায় ১১টি শিক্ষা বোর্ডের ৮০৮ জন ক্রীড়াবিদ ৭টি ইভেন্টে অংশ নেবে। ব্যাডমিন্টন, ভলিবল, বাস্কেট বল, হকি, ক্রিকেট, টেবিল টেনিস ও এ্যাথলেটিকসে আলাদা আলাদা ভ্যানুতে অংশ নেবে ছেলে-মেয়েরা।