607

কালো সোনা সাদা করার সুযোগ আর ১০ দিন

রাজস্ব আদায় বাড়াতে এবারের টার্গেট সোনা। এ খাতে প্রায় হাজার কোটি টাকার রাজস্ব এখন সরকারের কোষাগারে জমা হচ্ছে না। পুরো খাতটাই হিসাবের বাইরে। কালো টাকার মতো কালো (অবৈধ) সোনার এই বড় খাতকে বৈধতা দিতে সোনা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে এবারের বাজেটে। চলতি জুন মাসের (বাকি ১০ দিন) মধ্যেই সরকারকে ট্যাক্স দিয়ে কালো সোনা সাদা করা যাবে। এরপরও সব কালো সোনা সাদা হবে না বলেই সংশ্লিষ্টদের ধারণা।

জানা গেছে, সোনার পাশাপাশি ডায়মন্ড বা হীরার দিকেও নজর দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। দেশে হীরা বিক্রি হচ্ছে প্রচুর। হীরার অলংকারের কদর ক্রমেই বাড়ছে। সে সুযোগে হীরাকেন্দ্রিক বাণিজ্যও বেড়েছে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সঠিক হিসাবে রাজস্ব দিয়ে এদেশে হীরা বা হীরার অলংকার আসছে না। এর আগে অভিজাত এক বিপণী বিতান থেকে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আমদানি করা বিপুল পরিমাণ হীরার অলংকার জব্দ করা হয়েছিল। এনবিআরের ধারণা, এখাতে কঠোর নজরদারি করলে বিপুল অংকের রাজস্ব সরকারের ঘরে আসবে। প্রাথমিক ভাবে এবছরের জুন পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে হীরা বা হীরার অলংকারের অবৈধ আমদানি কঠোরভাবে মনিটরিং করা হবে। এখন চোরাই পথেই এগুলো বেশি আসছে। হুন্ডির মাধ্যমে এসবের মূল্য পরিশোধ করা হচ্ছে।

ads

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে সোনা, সোনার অলংকার, হীরা বা হীরার অলংকারের পুরোটাই ছিল অবৈধ উেস প্রাপ্ত। ব্যাগেজ রুলের আওতায়ও কিছু আসতো। বিমানবন্দরে সোনা ধরা পড়ার ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে। সোনা চোরাচালান নিয়ে গবেষণাও কম হয়নি। সম্প্রতি ভিন্ন একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে অবৈধ সোনার বিষয়টি সামনে চলে আসে। উদ্যোগ নেওয়া হয় সোনার বৈধ আমদানি নিশ্চিত করার। এলক্ষ্যে একটি আমদানি নীতিমালা চূড়ান্ত করা হয়। পাশাপাশি ব্যাগেজ রুলসেও কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে।

সর্বশেষ জুন ২০১৯ টার্গেট দিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে থাকা অবৈধ সোনা-হীরা বৈধ করার সুযোগ দেয় এনবিআর। পাশাপাশি করমেলার মতো স্বর্ণমেলারও আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে অনুষ্ঠেয় এসব মেলায় ব্যবসায়ীরা নিজেদের কাছে থাকা গচ্ছিত সোনা-হীরার হিসাব দিবেন এবং নির্ধারিত হারে কর পরিশোধ করবেন। ঢাকা এবং চট্টগ্রামে ২৩ থেকে ২৫ জুন এবং অন্যান্য বিভাগীয় শহরে ২৪ থেকে ২৫ জুন এই মেলা অনুষ্ঠিত হবে। এতে ভরিপ্রতি এক হাজার টাকা কর দিয়ে সোনা ও সোনার অলংকার, ক্যারেট প্রতি ছয় হাজার টাকা দিয়ে কাট ও পোলিশড্্ হীরা এবং ভরিপ্রতি পঞ্চাশ টাকা দিয়ে রৌপ্য বৈধ করা যাবে। মেলা ছাড়াও আয়কর অফিসে গিয়ে কর পরিশোধ সাপেক্ষে ৩০ জুন পর্যন্ত এই সুবিধা পাওয়া যাবে।

ads

তবে এই সুযোগ শুধু নিবন্ধিত ব্যবসায়ী সমিতির বৈধ সদস্যদের জন্য দেওয়া হয়েছে। ফলে সারাদেশের সোনা ব্যবসায়ীরা এই সুযোগ নিতে পারছেন না। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির সদস্যদের জন্য এই সুযোগ দেওয়ায় দেশের প্রায় ২৫ হাজার সোনা ব্যবসায়ীর কাছে থাকা সোনা বৈধতার সুযোগ পাচ্ছে না। কেউ কেউ বলছেন, এটি প্রকারান্তরে একটি সমিতির সদস্যপদ নিতে ব্যবসায়ীদের বাধ্য করার শামিল। সাধারণত ছোট পুঁজির ব্যবসায়ীরা এ ধরনের সংগঠন থেকে দূরে থাকেন, কারণ সংগঠন করার ক্ষেত্রে নানা বিপত্তি পোহাতে হয়। তাদের মতে, সরকার বেসরকারি খাত বিকাশের পক্ষে থেকেও এধরনের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে সমর্থন করায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের ক্ষুদ্র সোনা ব্যবসায়ীরা এ ব্যবসায় টিকে থাকতে পারবে না। যেখানে হাতে-কলমে কাজ শিখে কেউ হয়তো নিজেই গ্রামে একটি ছোট্ট দোকান খুলে সংসার চালাচ্ছে। তাদের ট্রেড লাইসেন্স, ভ্যাট এমনকি কারো কারো টিআইএনও রয়েছে। তারা এখন অপেক্ষাকৃত বড় ব্যবসায়ীদের পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। কেউ কেউ বলছেন, সোনা আমদানি নীতিমালা অনুযায়ী ওই সমিতির সদস্যপদ না থাকলে আমদানির অনুমতিও মিলবে না। যা মুক্ত বাণিজ্যের পরিপন্থি।

ঢাকার স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা বলেন , দেশব্যাপী ৩০ থেকে ৩৫ হাজার স্বর্ণ ব্যবসায়ীর মধ্যে বাজুসের সদস্য ৪০ শতাংশের কম। একজন ব্যবসায়ীর ভ্যাট নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স এবং ডিসি অফিস কর্তৃক স্বর্ণ ব্যবসায়ের ডিলিং লাইসেন্স থাকা সত্ত্বেও কেন তাকে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাজুসের সদস্য হতে হবে? আবার এখন বাজুসের সদস্য হতে গেলেও অনেককেই রহস্যজনক কারণে সদস্যপদ দিচ্ছে না। ফলে ৩০ জুনের পর আমাদের মতো সব ব্যবসায়ী চোরাকারবারি আর বাজুসের সদস্যরা হবে বৈধ স্বর্ণ ব্যবসায়ী।

ad

পাঠকের মতামত