কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রার্থনাকক্ষ চেয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আল্টিমেটাম
নিউজ ডেস্ক: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) ধর্মচর্চার জন্য মন্দির বা প্রার্থনাকক্ষ নির্মাণের দাবি জানিয়ে ১৪ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা। সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) রেজিস্ট্রার দফতরে পাঠানো এক চিঠিতে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
রেজিস্ট্রার মো. মুজিবুর রহমান মজুমদার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা বলেছে, পূর্ববর্তী প্রশাসনের কাছে একাধিকবার মন্দিরে দাবি তুলেছে। কিন্তু কেন এখনও এটি কার্যকর হয়নি সেটা বলতে পারছি না। এই বিষয়ে এখন আমার সিদ্ধান্ত দেওয়ার এখতিয়ার নেই। নতুন উপাচার্য নিয়োগ হলে আমি ওনার কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করবো। তাদের দাবিটি যৌক্তিক, নতুন উপাচার্য যাতে ইতিবাচক সাড়া দেয়, বিষয়টি সেই ভাবেই ওনার কাছে উপস্থাপন করবো।’
এদিকে, এ নিয়ে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বারবার আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়নে কোনও পদক্ষেপ দেখা যায়নি। প্রশাসন বলছে, নির্মাণাধীন নতুন ক্যাম্পাসে মন্দির থাকবে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা বলেন, কবে নতুন ক্যাম্পাস তৈরি হবে, তারপর মন্দির; সেই আশায় তাহলে এখন আমরা ধর্মীয় চর্চা বন্ধ রাখবো?
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের শিক্ষার্থী সৌরভ বিশ্বাস বলেন, ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রয়োজনীয় এবং অপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন স্থাপনা রয়েছে, তবে দুঃখজনকভাবে এখনও মন্দির বা প্রার্থনা কক্ষের কোনও ব্যবস্থা নেই। আমরা ইতোমধ্যে চার বার আবেদন করেছি, এখনও মন্দির নির্মাণের কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তাই, অবিলম্বে মন্দির নির্মাণের কাজ হাতে নিতে হবে এবং মন্দির নির্মাণ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের ধর্মীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে একটি অস্থায়ী প্রার্থনা কক্ষ দিতে হবে। অন্যথায়, আমরা আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো।’
পরিসংখ্যান বিভাগের ২০২১-২২ বর্ষের জয়া ভৌমিক বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা শেষে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনার জন্য যখন মন্দিরে যাই, তখন মনের মধ্যে একটা পবিত্রতা কাজ করেছিল। ঠিক তেমনই দেশের প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মন্দির রয়েছে। কিন্তু আক্ষেপ আমাদের এখানে কোনও মন্দির নেই। প্রশাসনের কাছে আমাদের একটাই চাওয়া, ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনার জন্য একটা নির্দিষ্ট স্থান প্রয়োজন। তাই শিগগিরই মন্দিরের জন্য এই অপেক্ষার শেষ হোক।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য মোতাবেক, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থী প্রায় ৬০০, শিক্ষক প্রায় ৩০ জন এবং এ ছাড়াও কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। প্রতিবছরই এই সংখ্যাটা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পূজা উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক এবং কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুব্রত সরকার বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সনাতনীদের সব কার্যক্রম পূজা উদযাপন পরিষদের মাধ্যমেই পরিচালিত হয়ে আসছে। কিন্তু আমাদের দীর্ঘ দাবির পরও সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য এখনও একটি মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়নি। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন দেখি, প্রতিদিন সন্ধ্যায় পূজা হচ্ছে, প্রার্থনা হচ্ছে কিন্তু এখানে শিক্ষার্থীরা সেই সুযোগটা কখনও পাইনি। আমি আশা করছি, প্রশাসন এই ব্যাপারে উদ্যোগ নেবে এবং মন্দির না হওয়া পর্যন্ত ধর্মীয় কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য একটি অস্থায়ী রুমের ব্যবস্থা করে দেবে।’
এ বিষয়ে বর্তমানে উপাচার্য নিয়োগপূর্বক বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক ড. জাকির ছায়াদউল্লাহ বলেন, ‘এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত দেওয়ার এখতিয়ার আমার নেই বা দেওয়া হয়নি। আমাকে কিছু সিলেক্টেড বিষয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে একজন শিক্ষক হিসেবে আমি সনাতনীদের এই দাবির পক্ষে। এ বিষয়ে আমি সনাতনী কয়েকজন শিক্ষকের সাথে আলোচনা করে বিষয়টি এগিয়ে রাখবো, যেন পরবর্তী উপাচার্য এলে মন্দিরের কাজটি সহজ হয়ে যায়।’