41607

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ

স্পোর্টস ডেস্ক: ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যেকোনো ফরম্যাটে প্রথম সিরিজ জয়ের স্বাদ পেলো টাইগাররা৷ যখন পেন্ডুলামের মতো ঘুরছিল ম্যাচের ভাগ্য, তখন পরপর দুই বলে দুই চার হাঁকিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেছেন তাসকিন আহমেদ। ৭ বল বাকি থাকতেই ৪ উইকেটের জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।

দলের জয় তাসকিনের ব্যাটে নিশ্চিত হলেও জয়ের অন্যতম কারিগর নাজমুল হোসেন শান্ত। একপ্রান্তে যখন আসা যাওয়ার মিছিল, তখন অন্য প্রান্ত আগলে রেখে দলকে রেখেছেন লড়াইয়ে৷ ৪৭ বলে ৪৬ রান করে দলের জয় নিশ্চিত করেই মাঠ ছেড়েছেন তিনি। তবে ম্যাচ সেরা মেহেদি হাসান মিরাজ; ১২ রানের ৪ উইকেট শিকার করে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করার পর ব্যাট হাতে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ১৬ বলে ২০ রান করেন এই অলরাউন্ডার।

ads

এর আগে দুই ওপেনারের উইকেট হারিয়ে পাওয়ার প্লেতে মাত্র ৩২ রান তোলে বাংলাদেশ। ফলে ১১৮ রানের ছোট লক্ষ্যও বড় হতে শুরু করে টাইগারদের জন্যে। ৯ বলে ৯ রান করে স্যাম কারানের বলে লিটন দাস ফিলিপ সল্টের ক্যাচে পরিণত হন। আর পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে আর্চারের বলে মইন আলিকে ক্যাচ দেন রনি তালুকদার; ১৪ বলে ৯ রান করেন তিনি।

এরপর খানিকটা প্রতিরোধ গড়ে বাংলাদেশ, শুরুর চাপ সামলে নাজমুল হোসেন শান্ত ও তৌহিদ হৃদয় মিলে এগিয়ে নিয়ে যান দলকে। ১০ ওভারে ২ উইকেটে ৫৫ রান করে বাংলাদেশ। তবে ১১তম ওভারের দ্বিতীয় বলে তৌহিদ হৃদয়ের উইকেট ফিরে গেলে ভেঙে যায় ৩১ বলে ২৯ রানের জুটি। অভিষিক্ত রেহান আহমেদের শিকার হবার আগে ১৮ বলে ১৭ রান করেন হৃদয়।

ads

হৃদয় আউট হবার পর মিরাজের সাথে জুটি গড়েন শান্ত। দু‘জনে মিলে ৩৪ বলে যোগ করেন ৪১ রান। ১৬ বলে ২০ রান করে আর্চারের শিকার হন মিরাজ। পরের ওভারেই মইন আলিকে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ক্রিস জর্ডানের হাতে ধরা পড়েন সাকিব, ৩ বলে ০ রান করে আউট হন এই অলরাউন্ডার। ফলে শেষ ৩ ওভারে জয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন হয় ১৬ রান, হাতে ৫ উইকেট।

তবে ১৮তম ওভারেই আউট হয়ে যান আফিফ হোসেন, ব্যর্থতার বেড়াজাল ছিড়ে আজো বের হতে পারেননি তিনি। ২ রান করে আর্চারের তৃতীয় শিকার হন আফিফ। এদিকে শেষ ২ ওভারে দলের প্রয়োজন ১৩ রান। এমতাবস্থায় ক্রিস জর্ডানকে প্রথমবারের মতো বোলিংয়ে আনেন ইংলিশ অধিনায়ক জশ বাটলার। প্রথম বলেই শান্ত ও চতুর্থ আর পঞ্চম বলে জোড়া চার হাকিয়ে এই ওভারেই দলের জয় নিশ্চিত করেন তাসকিন আহমেদ

এর আগে এদিন একাদশে ফিরেই বাজিমাত করেন মেহেদী মিরাজ, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বল হাতে বিধ্বংসী হয়ে উঠেন এই অলরাউন্ডার। মাত্র ১২ রানে ৪ উইকেট শিকার করেন মিরাজ, যা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তার ক্যারিয়ারের সেরা। তার স্পিন বিষে নীল হয়ে ইংলিশরা থেমেছে ১১৭ রানেই; জয়ের জন্য বাংলাদেশের লক্ষ্য ১১৮ রান।

এদিন মিরপুরে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে টসে হেরে আগে ব্যাট করতে নামে ইংল্যান্ড। ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই থ্রি লায়ন্সদের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন তাসকিন। হাসান মাহমুদের ক্যাচ বানিয়ে ৫ রানে ফেরান ডেভিড মালানকে। দলীয় ১৬ রানে প্রথম উইকেট হারায় ইংল্যান্ড।

তবে আরেক ওপেনার ফিলিপ সল্টের ব্যাট আজ হয়ে উঠে বেশ চওড়া, আক্রমণাত্মক মেজাজেই খেলতে থাকে এই ব্যাটার। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিচ্ছিলেন ওয়ানডাউনে নামা মইন আলি৷ পাওয়ার প্লেতে শেষে দলের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১ উইকেটে ৫০ রান।

পাওয়ার প্লের পরেই বল হাতে আসেন সাকিব আল হাসান। অধিনায়কের মতোই ম্যাচে ফেরান দলকে, ফেরান ফিলিপ সল্টকে। ভাঙেন ৩৪ রানের জুটি। ১৯ বলে ২৫ করে আউট হন সল্ট। পরের ওভারেই জশ বাটলারকে ফিরিয়েছিলেন হাসান মাহমুদ, ইংলিশ অধিনায়কের স্ট্যাম্প ভেঙে দিয়েছেন এই পেসার। ৬ বলে ৪ রান আসে বাটলারের ব্যাটে।

ইংল্যান্ডের চতুর্থ উইকেট পতন হয় পরের ওভারেই মইন আলিকে ফেরান মেহেদী মিরাজ। আউট হবার আগে ১৭ বলে ১৫ রান করেন মইন। পরপর ৩ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় ইংল্যান্ড। ১০ ওভার শেষে তাদের রান দাঁড়ায় ৪ উইকেটে ৬৩; অর্থাৎ শেষ ৪ ওভারে মাত্র ১৩ রান সংগ্রহ করতে পারে ইংলিশরা।

এরপর ইংল্যান্ডকে ম্যাচে ফেরানোর চেষ্টা করেন স্যাম কারান ও বেন ডাকেট। জুটি দাঁড় করানোর চেষ্টা চালান দু’জনে। তবে মেহেদী মিরাজের জোড়া উইকেটে তা আর বড় হয়নি, ৩৪ বলে ৩৪ রানেই থামে সেই জুটি। প্রথমে ১৬ বলে ১২ রান করা কারান ও তারপর ০ রানে ক্রিস ওকসে স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন তিনি। আর নিজের শেষ ওভারের শেষ বলে ১০ বলে ৩ রান করা ক্রিস জর্ডানকেও ফেরান মিরাজ।

শেষ ওভারের প্রথম বলে ইনিংস সর্বোচ্চ ২৮ রান করা বেন ডাকেটকে ফেরান মোস্তাফিজুর রহমান, একই ওভারে রান আউট হন রেহান আহমেদ ও জফরা আর্চার। শেষ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ১১৭ রানেই অলআউট হয় ইংলিশরা৷ ফলের জয়ের জন্য বাংলাদেশের সম্মুখে লক্ষ্য দাঁড়ায় ১১৮ রানের।

যা ৭ বল আর ৪ উইকেট হাতে রেখেই টপকে যায় বাংলাদেশ। ফলে সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল টাইগাররা।

ad

পাঠকের মতামত