40774

স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণে যা বললেন বাইডেন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার প্রেসিডেন্সির এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণ দিয়েছেন।

তার ভাষণের উল্লেখযোগ্য পাঁচটি পয়েন্ট তুলে ধরেছে বিবিসি।

ads

*ভাষণে বাইডেন বলেছেন, আমেরিকা প্রথমে। পররাষ্ট্রনীতি শেষে। অর্থাৎ, পররাষ্ট্রনীতির আগে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থই দেখবে যুক্তরাষ্ট্র:

গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য চীনের নজরদারি বেলুন ছিল বিশাল এক খবর। কিন্তু বাইডেন এ নিয়ে কেবল একটি কথাই বলেছেন, তাও আবার ভাষণের শেষ দিকে।

ads

তিনি বলেন, “গত সপ্তাহে আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, চীন আমাদের সার্বভৌমত্বে হুমকি হলে আমরাও আমাদের দেশকে সুরক্ষিত রাখতে ব্যবস্থা নেব এবং আমরা সেটাই করেছি।” বেলুন নিয়ে তার মন্তব্য ছিল এটুকুই।

পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে তিনি যা বলেছেন তার বেশির ভাগই ছিল গত বছরের। বিশেষ করে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন নিয়ে। ইউক্রেইনের রাষ্ট্রদূতকে যুক্তরাষ্ট্রে স্বাগত জানিয়েছেন বাইডেন।

তুরস্ক ও সিরিয়ার ভয়াবহ ভূমিকম্প এবং মানবিক সংকট নিয়ে তিনি কিছু বলেননি। বরং দেশের অভ্যন্তরীন উদ্বেগের বিষয়গুলোতে তিনি জোর দিয়েছেন বেশি।

* অর্থনীতির কাজ শেষ করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন বাইডেন:

জনমত জরিপ অনুযায়ী, মার্কিনিরা যে বিষয়টিকে পরোয়া করে সেটি অর্থনীতি। তারা বিশ্বাস করে, দেশ এখনও লড়াই করছে। দেশ পেছন দিকে ঘুরে দাঁড়ালেও তারা তা বিশ্বাস করবে বলে মনে হয় না।

তাদের মন বদলের চেষ্টা করেছেন বাইডেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি আবার নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ বাড়ালেন। তিনি রেকর্ড কম বেকারত্বের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখেন। মুদ্রাস্ফীতি এবং বিদ্যুতের উচ্চমূল্য এখন নিম্নমুখী বলে জানান তিনি। এই কারণগুলোর জন্য গত ১৮ মাসে প্রেসিডেন্টের জনসমর্থন কমেছে।

* রিপাবলিকানদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে চান বাইডেন:

প্রেসিডেন্ট বাইডেন রাজনৈতিক পরিবেশে কাজ শেষ করতে চাইলে তার রিপাবলিকানদের সাহায্য দরকার পড়বে। তাই ভাষণে বিরোধী রিপাবলিকানদের একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

বাইডেন বলেন, “আমাদেরকে প্রায়ই বলা হয়ে থাকে যে, রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাটরা একসঙ্গে কাজ করতে পারে না। কিন্তু গত দুইবছরে আমরা নিন্দুকদেরকে ভুল প্রমাণ করেছি।”

“হ্যাঁ, আমাদের মধ্যে প্রচুর মতবিরোধ আছে। আর হ্যাঁ, সময়ে সময়ে ডেমোক্র্যাটরা একা চলেছে। কিন্তু সময় ঘুরে এবং আবার ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকানরা একসঙ্গে হয়েছে।”

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে এখন প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ রিপাবলিকানদের হাতে থাকার মধ্যেই বাইডেন তার প্রেসিডেন্সির দুই বছরে দেশের কিছু কিছু ক্ষেত্রে দ্বিদলীয় অগ্রগতি হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন ভাষণে।

তিনি বলেন, “আজকের এই নতুন কংগ্রেসে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে না পারার কোনও কারণ নেই।” বাইডেন তার সঙ্গে হাত মিলিয়ে রিপাবলিকানদেরকে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, “চলুন কাজ শেষ করি।”

তিনি বলেন, “আমার রিপাবলিকান বন্ধুদের বলতে চাই, আমরা যদি বিগত কংগ্রেসে একসাথে কাজ করতে পারি, তাহলে এই নতুন কংগ্রেসেও একসঙ্গে কাজ করতে না পারা এবং গুরুত্বপূর্ণ নানা বিষয়ে একমত না হতে পারার কোনও কারণ নেই।”

* একতার ডাক দিয়ে পরমুহূর্তেই হট্টগোল ডেকে এনেছেন বাইডেন, শুনেছেন রিপাবলিকানদের দুয়োধ্বনি:

দেশের ঋণসীমা বাড়ানো নিয়ে বাইডেন কথা বলা শুরু করতেই বিগড়াতে শুরু করে পরিস্থিতি। ব্যয় কমাতে ঋণসীমা বাড়ানোর রিপাবলিকান দাবির কথা উল্লেখ করে বাইডেন বলেন, তার পূর্বসূরি প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের মতো আর কোনও প্রেসিডেন্টই দেশের জাতীয় ঋণের বোঝা এত বাড়াননি।

তার একথার পরই রিপাবলিকান পার্টির কিছু সদস্য দুয়োধ্বনি দিতে থাকেন, হট্টগোল শুরু হয়। তারপরও বাইডেন ভাষণ চালিয়ে যান। পরে যখন বাইডেন বলেন যে, রিপাবলিকানরা স্যোশাল সিকিউরিটি এবং মেডিকেয়ারে ব্যয় কমাতে চায় তখন উত্তেজনা আরও বেড়ে ওঠে।

হাউজ স্পিকার ম্যাককার্থি ও অন্যান্য রিপাবলিকানরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন। পেছনের দিক থেকে একজন রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য উঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলেন প্রেসিডেন্ট একজন ‘মিথ্যাবাদী’।

* জননিরাপত্তার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বাইডেন বক্তব্য রাখার সময় আমন্ত্রিত অতিথি পরিচিতিতে আবেগঘন মুহূর্ত সৃষ্টি হয়।

প্রতিটি স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণের মতো বাইডেনের ভাষণেও কয়েকদফা প্রস্তাব ছিল। যেই প্রস্তাবগুলোর বেশিরভাগেরই আইনে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে কম।

এর মধ্যে দুটো হচ্ছে, পুলিশে সংস্কার এবং নতুন বন্দুক-নিয়ন্ত্রণ আইন। দুটো বিষয়েই অগ্রগতি হওয়ার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আবেগঘন বক্তব্য রাখেন বাইডেন।

সবচেয়ে আবেগঘন মুহূর্ত সৃষ্টি হয় যখন তিনি কথা বলার সময় পুলিশের নির্মমতার শিকার কৃষ্নাঙ্গ টেয়ার নিকোলসের বাবা-মাকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে তাদেরকে আরও সম্মান দেওয়া এবং পুলিশ ব্যবস্থা সংস্কার করার ওপর গুরুত্ব দেন। কংগ্রেস সদস্যরা তখন উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দেয়।

আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে আরও ছিলেন ক্যালিফোর্নিয়ার মন্টেরি পার্কে গুলির ঘটনায় বন্দুকধারীর হাত থেকে অস্ত্র কেড়ে নিয়ে হিরো খ্যাতি পাওয়া ব্র্যানডন সে নামের আরেকজন।

বাইডেন সব অতিথির উদ্দেশেই ভাষণে বলেন, “এই চেম্বারে উপস্থিত সবার, আমাদের এই মুহূর্তে উঠে দাঁড়ানো প্রয়োজন। আমরা সমস্যা থেকে পালিয়ে থাকতে পারি না।”

ad

পাঠকের মতামত